শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২১, ০১:৩৩ রাত
আপডেট : ১১ জুন, ২০২১, ০১:৩৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন : বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধা ধ্বংসের চারণভূমি!

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন : বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো মেধা ধ্বংসের চারণভূমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো মেধা ধ্বংসের স্বর্গ রাজ্য। কতো স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

আর ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষেই তাদের অনেককে খোঁড়া লুলা লেংড়া বানিয়ে দেওয়া হয়। লুলা লিঙ্গ খোঁড়া কেবল শারীরিকভাবেই না মেন্টাললিও হয়। তারপর তারা আর দাঁড়াতে পারে না। প্রথমবর্ষের ছাত্ররা কী পরিমাণ টর্চারের মধ্যে দিয়ে যায় তা পৃথিবীর আর কোথাও কল্পনাও করা যায় না। একটি ঘুমানোর জায়গার জন্য রাজনীতির খাতায় নাম লেখাতে হয়, অতিথি রুমে টর্চারের শিকার হতে হয়, জোরপূর্বক মিছিল মিটিং এ যেতে বাধ্য করা হয়। এতো কিছুর পরও শিফট করে ঘুমাতে হয়। অনেককে হলের বারান্দায় বা ছাদেও ঘুমাতে হয়।

প্রথমবর্ষে একটা পড়ার টেবিল পাওয়া স্বপ্নের মতো। আর কাপড় রাখার একটা ওয়ার্ডরোব পাওয়াতো বহুত দূর কি বাত। খাওয়ার কথা, সাংস্কৃতিক চর্চা করা, ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডা দেওয়া বা খেলাধূলায় মত্ত থাকা ইত্যাদিতো অনেকর জন্য একটা লাক্সারি। শুধুই কি ছাত্র হিসেবে ঢুকে যারা তাদেরকেই এই দুর্গতিতে পরতে হয়? না। শিক্ষক হিসেবে ঢোকার পরও তাদের যেই বেতন এবং সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তাতে একটা ভালো পরিবেশে থাকা খাওয়া প্রায় অসম্ভব।

অনেকেই একটি থাকার জায়গার জন্য রাজনীতিতে নাম লেখায়। প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বাসা পাওয়া যায় না। প্রভাষকদের বাসা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো কোনো হলের আবাসিক শিক্ষক হতে পারা। যা পেতে হলে তাকে শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে হয়। প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তাকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্লাস লোড দেওয়া হয়। অথচ তার হওয়ার কথা একজন টিচিং এসিস্টেন্ট। যেই সময়ে সে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পায় সেই সময়টাই পিএইচডি করতে যাওয়ার শ্রেষ্ট সময়। কিন্তু তখন তাকে পিএইচডির জন্য ছুটি দেওয়া হয় না। ছুটির জন্য তাকে ১ থেকে ২ বছর অপেক্ষা করতে হয়। ততোদিনে রাজনীতি নির্বাচন করে অনেকে পিএইচডি করতে যাওয়ার যোগ্যতা এবং ইচ্ছে দুটোই হারিয়ে যায়। তারা হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বার্ডেন। এইভাবে শিক্ষক হিসেবে ঢোকার পরও মেধা ধ্বংসের ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি।

সারা বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের এন্ট্রি লেভেল হলো সহকারী অধ্যাপক এবং ন্যূনতম যোগ্যতা হলো পিএইচডি। আমরা যদি এই জিনিসটাও করতে পারতাম তাহলে মেধা ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতাম। যাদের মেধা আছে তারা নিজ যোগ্যতায় স্কলারশিপ ফেলোশিপ জোগাড় করে পিএইচডি করে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হলে বিশ্ববিদ্যালয়ও অনেক উপকৃত হয়। কারণ শিক্ষককে পিএইচডির জন্য পূর্ণ বেতনে ছুটি দিতে হয় না, ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে ফিরে না আসার ঝুঁকি নিতে হয় না।

আমি দেখেছি ক্লাসের সেরা ছাত্রটাও যদি প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পায় তাহলে অন্তত ২ বছরের জন্য সে আটকা পরে যায়। তারই ক্লাসের তার চেয়ে একটু কম ভালো রেজাল্ট করা সহপাঠী তার আগে পিএইচডি করতে চলে গিয়ে এক সময় তার চেয়ে অনেক ভালো করে ফেলে। আর বাংলাদেশে যেহেতু সরাসরি পিএইচডি করাদের নিয়োগ তেমন দেয় না তাই তারা আর ফিরে আসে না। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পিএইচডি কে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে রেখেছে। অথচ এইটা হওয়ার কথা ন্যূনতম যোগ্যতা। আর পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিমালার কোথাও পোস্ট-ডক শব্দটি পর্যন্ত উল্লেখ নেই। অথচ সম্প্রতি বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগের জন্য কেবল পিএইচডি না বরং দুয়েকটি পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়।

এমনকি ভারতেও। আমরা যদি

[১] প্রথমবর্ষের ছাত্রদের জন্য একটি নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারতাম

[২] প্রভাষকদের ভালো আবাসিক ব্যবস্থাসহ তাদের আরও বেশি বেতন সুবিধা দিয়ে, তাদের কোর্স কম এবং পিএইচডি র স্কলারশিপ বা ফেলোশিপ পেলে যেকোন সময় বিনা বেতনে ছুটি এবং পিএইচডি শেষে ফিরে আসলে চাকরি ফিরে পাবার নিশ্চয়তা দিয়ে ছুটি দিতাম

[৩] ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ ১ থেকে ৫০০ তে আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি থাকলে তাকে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক এবং দুটি পোস্ট-ডক থাকলে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক করার নিয়ম করতে পারতাম  তাহলেও এক লাফে এক বিরাট পরিবর্তন আসতো।

লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়