ফারজানা কবির : আমি ইংল্যান্ডে থাকি । ইংল্যান্ড খ্রীষ্টান দেশ । এই দেশের রানী খ্রীষ্টান ধর্ম সম্মুনত এবং বজায় রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । এমনই খ্রীষ্টান যে তারা ২০১৭ পর্যন্ত ক্যাথলিকদের ( খ্রীষ্টানদের আরেক বিভাগ ) সঙ্গে রাজ পরিবারের বিবাহ বন্ধ ছিল ।
বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকের ভাবে পশ্চিমারা সেকুলার । আসলে তা না । তারা সেকুলার না ।
এমনকি আমেরিকা সেকুলার না । এখন ত আরো রক্ষনশীল । মুসলমানদের প্রতি অতটা প্রেম ভালোবাসা নাই ।
এই দেশে শুয়োরের মাংস বিক্রি হয় । এই দেশের কালচারের সাথে এলকোহল মিশে আছে ।
আমি মুসলিম । শুয়োর খাই না । হালাল মাংশ এ খাই ।এলকোহল ও কখনও স্পর্শ করি নাই ।
এখন আমি বা আমরা মুসলিমরা যদি প্রত্যেকটা জায়গায় যে আমি মুসলিম আমার জন্য সব জায়গায় শুয়োরের মাংশ বন্ধ কর । তাহলে কি তারা আমার কথা শুনে সব জায়গায় শুয়োর বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে হালাল মাংশ বিক্রি করবে?
সেটা করবে না । কারন এই দেশের অধিকাংশ মানুষ খ্রীস্টান । সংখ্যা গরিষ্ঠের খাদ্যাভাসের উপর ভিত্তি করে দেশের খাদ্য বিজনেস গুলি গড়ে উঠেছে ।শুয়োর মাংশ বন্ধ করলে বিজনেস গুলিও ভালো আয় করতে পারবে না । আবার শুয়োর বন্ধ করলে অধিকাংশের মানুষের খাদ্য অভ্যাসের উপর নেগেটিভ চাপ পড়বে । তাছাড়া নৃতত্ত্ব অনুসারে শুয়োরের মাংসে দেহে তাপ উৎপাদন করে । এটা শীতের দেশের মানুষের আবহাওয়ার সাথে সহজাত মিশে যাওয়ার একটি উপায় ( Coping mechanism ) |
এই দেশে কোন আইন আদালত শুয়োরের মাংশ রান্না বন্ধ করে নাই । করবেও না। কেন করবে ?
তাহলে আমি মুসলিম হিসেবে আমি বা অন্য মুসলিম রা কি করে ? যেহেতু এটা আমার বিশ্বাস । এই বিশ্বাসের সাথে অমি আপোষ করতে পারব না । সুতরাং আমি যেখানে শুয়োর বিক্রি করে অথবা হালাল বিক্রি করে না । সেখানে আমি সব্জি খাই । আর যদি পাওয়া যায় তাহলে ত কথা শেষ ।
যখন প্রথম এখানে আসি তখন কষ্ট হত । এখন জায়গায় জায়গায় হালাল খাবার সমস্যা হয় না ।
তারপরেও এই খানে বেশির ভাগ দামি দামি রেস্তারায় আমি খেতে যেতে পারি না । কারন হালাল মাংশ পাওয়া যায় না । বা শুয়োরের মাংশ পাওয়া যায় ।
এই দেশে সুপার মার্কেট গুলিতে হ্যামের ( শুয়োরের এক অংশের মাংশ ) সাথে ফিস ও বিক্রি হয় ।
আমারটা আমি খাই । তাদের টা তারা খায় । অধিকাংশ মানুষের খাদাভ্যাস আমার জন্য বাদ দিলে খাদ্য ব্যবসায়
ধস নামবে ।
আমি খুজে খুজে হালাল খাবার বের করি অথবা যে সব রেসিপি তে এলকোহল হয় তা বাদ দিয়ে নিজেই অলটারনেটিভ উপাদান দিয়ে রান্না করি ।
এই জীবনেও আমার ম্যাকডোনাল্ড এর ফিলেট ফিস ছাড়া কিছু খাওয়া হয়নি ।
আফসোস আছে । না । কারন বিশ্বাস ত জোরের বিষয় না । আমি মুসলিম খুশী খুশীতে এটি করি । আমার ধর্ম পালনে অন্যের বা সংখ্যা গরিষঠের অসুবিধা কেন করব ?
ধর্ম ত জোর করে নিজের উপর চাপিয়ে দেব না ।
যাহোক , তবে এই দেশে একটা জিনিস হয় না । শুয়োরের মাংসের জায়গায় গরুর মাংশ রান্না করে কাউকে প্রতারিত করা হয় না ।
এই যে এই বিভাগ । এটার জন্য মুসলিম দের সুবিধা হয়েছে । তাদের নতুন নতুন বিজনেস গড়ে উঠেছে । রিটেইল গুলি এই ধর্মীয় বিভাগ ব্যাবহার করে তাদের নতুন খাদ্য রেন্জ তৈরি করেছে ।
এটা কিন্তু ধর্মের জন্য শুধু না । পৃথিবীতে ভেজিটেরিয়ান বাড়ছে । ভেগান বাড়ছে । অনেকের এলার্জি আছে । তারা কিন্তু দাবি করছে না সব উঠিয়ে দিন । শুধু আমাদের রাখুন ।
এটা কিন্তু পশ্চিমা দেশে হিন্দু , বৌদ্ধ সবাই করছে । শুধু আমি না ।
যেটা আসলে দাবি করা যায় সেটা হলে খাদ্যের প্যাকেজ বা মেনুর গায়ে স্পষ্ট করে লেখা থাক তারা কি বিক্রি করে অথবা খাদ্যে কি উপকরন আছে । তারপর যার যার মত সিধান্ত নেয়া ব্যাক্তর উপর নির্ভর করে ।
এই কথা গুলি লিখলাম বাংলাদেশের গরুর মাংসের ঘটনা প্রসঙ্গে । আইন আদালত সব অফিসে গরুর মাংসে বন্ধ করলে সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দের দেশে খাবারের বিজনেস কিভাবে চলবে ?
সব মানুষের চয়েজ আছে । চয়েজ না থাকলে নতুন নতুন বিজনেস খুলুন যারা আপনাদের সার্ভ করবে । এটা আপনাদের জন্য ভালো সুযোগ ।
এই সুযোগটা যে কোন ব্যাবসায়ী নিতে পারে । এতে উদ্যোক্তা ও সৃষ্টি হবে ।
আবারও ব্যাবসায়ীরা নতুন উপায়ে ব্যাবসা পরিবর্ধন করতে পারেন ।
যে টা করা ঠিক হবে না সেটা হলো আইন আদালত অফিস সব জায়গায় চাপ সৃষ্টি করা ।কেন্টিন বা রেঁস্তোরা তারা তারা লাভ করার জন্য বসেছে ।
যেটাতে লাভ হয় তারা সেটাই করবে। এতে তাদের খরচ ও কমবে ।
খাওয়াটা জরুরি । কিন্তু মাংশ খাওয়াটা জরুরি কি না এটাও এখনকার ট্রেন্ডি ভাবনা ।সুতরাং এতে যে সমাজ বা মানুষের মোরালিটি নষ্ট হবে তাও না ।
আবার আপনার নাগরিক অধিকার নষ্ট হবে সেটাও বলা যায় না । কারন আপনার চয়েজ আছে । প্রচুর দোকান বা হোটেল আছে যারা খাসীর মাংস বিক্রি করে ।
আপনারা বরং খাসির মাংস অলটারনেটিভ হিসেবে রাখতে বলতে পারেন ।কিন্তু খরচ বেশি হলে এটা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ভেবে দেখা ।
কিন্তু গরুর মাংশ বন্ধ করে কেন ?
( সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই পোস্ট )
সূত্র-