আশরাফুল নয়ন : [২] দেশের অন্যতম বৃহৎ মোকাম নওগাঁয় পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েই চলছে। গত ১০-১২ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে ৪-৫ টাকা করে বেড়েছে। ধান-চালের খাদ্য উদ্বৃদ্ধ উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে বলে জানান একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। চালে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষরা।
[৩] নওগাঁর রাণীনগর আবাদপুকুর হাট, রাতোয়াল হাট, সদর উপজেলার হাঁপানিয়া হাট, মহাদেবপুর উপজেলার স্বরস্বতীপুর ও মহিষবাথায় হাট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাইব্রিড জাতের ধান প্রতিমন ৯০০-৯২০ টাকা, জিরাশাইল জাতের ধান ১০০০-১০৭০ টাকা, কাটারি জাতের ধান ১১০০-১১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতিমণ ধান ৭০-১৫০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
[৪] নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার দেউলা গ্রামের গ্রামের কৃষক অনুপ চন্দ্র বলেন, বোরো মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে জিরাশাইল ৫৭ জাতের ধান আবাদ করেছিলাম। যেখানে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে প্রায় ১৮ মণ হারে। গত ১০দিন আগে জিরাশাইল ১ হাজার ২০ টাকা দরে প্রায় ২০০ মণ ধান বিক্রি করেছি। বর্তমানে বাজারে মণে প্রায় ১০০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
[৫] মহাদেবপুর উপজেলার মহিষবাতান গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমার ১৫ বিঘা জমিতে কাটারি জাতের ধান আবাদ করেছিলাম। গত প্রায় ১০দিন পূর্বে প্রতি মণ দান বাজরে বিক্রি হচ্ছিল ১০০০ থেকে-১০৫০ টাকা দরে। বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি মণ
[৬] রিক্সাচালক আজগর আলী বলেন, এসেছেন চাল কিনতে তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত ১০-১২দিন আগেও লওগাঁত চালের দাম কম আসলো একন দেকি সব ধরনের চালোত ৪ থ্যাকা ৫ টেক্যা করা বাড়িছে। জিরাশাল চাল ১ কেজি কিনবা আচ্ছি কয়েক দিন আগেও ৪৭-৪৮ টেক্যা কেজি বিক্রি হচ্ছিললো একন ৫০-থ্যাকা ৫২ কেজি বিক্রি হচ্ছে। গরীব মানুষ হামি আবার লওগাঁত লকডাউন হচ্ছে চালের দাম বাড়লে হামরা চলমু কি করা। হামাকে কষ্ট কেউ বোঝে। এই ৪-৫ টেক্যা বাড়া মানে হামাকে যে কত কষ্ট হয় সেডা বুঝাবার পারমুনা।
[৭] শহরের মাষ্টার পাড়া মহল্লার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাটচারি জাতের চাল কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি ৫০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। আমি ১ কেজি চাল কিনে নিয়ে গেছি। বর্তমানে সেই চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা করে। আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। ৪-৫ টাকা করে বেড়ে যাওয়াতে অন্যদের সমস্যা হবেনা কিন্তু আমাদের মত ঁেখটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষদের অনেক বড় সমস্যা যা বুঝার মত কেউ নাই।
[৮] নওগাঁ শহরের পৌর খুচরা চাল বাজারের বিক্রেতা উত্তম কুমার জানান, গত ১০-২০ দিনের ব্যবধানে চালের প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ৪-৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে জিরাশাইল প্রতিকেজি ৫০-৫২ টাকা, কাটারি ৫৫ টাকা ও খাটোদশ ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫০ কেজি ওজনের প্রকার ভেদে চালের প্রতি বস্তার দাম বেড়েছে ১০০-১৫০ টাকা। আমরা চাল গুলো খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কিনে প্রতিদিন বিক্রি করে থাকি।
[৯] তিনি আরও বলেন, ধানের জেলা হয়েও ধানের ভর মৌসুমের চালের দাম বেড়েছে। অন্য বছরগুলোতে কখনোই এমনটা হয়নি। ব্যবসায়ীদের বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে খরচও বেশি পড়ছে। একারণেই হয়তো বাজারে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
[১০] চাউল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, নওগাঁর বাজারে চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারন হচ্ছে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়া। বিগত বছরে কৃষকরা ধান উঠানোর আগেই কাটা মাড়াই করে হাটে বিক্রি করত। চলতি বছর অল্প ধান হাটে বিক্রি করে বাকী ধানগুলো বাড়িতে মজুদ করে রেখে দিয়েছিল। হাট-বাজারে ধানের আমদানি কম হওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে ধানের আমদানী কম হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ধান কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে চালের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে এ বছর ধানের ফলনও ভাল হয়েছে।
[১১] কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি নওগাঁর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি মৌসমে নওগাঁ জেলায় ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ করা হয়েছে। এবার গত বছরের চেয়ে জেলায় বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। কৃষকরাও ধানের দাম ভালো পাচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ধানের রোগবালাই তেমন ছিলনা যার কারণে ধান উৎপাদনে কৃষরা উৎপাদনের চেয়ে ধানের দাম আশানুরুপ বেশি পেয়েছে বিগত বছরের চেয়ে। সম্পাদনা: সাদেক আলী