রুহুল আমিন: বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ কুটনীতির প্রকৃত সুবিধাভোগী হলো অস্ত্র উৎপাদক ও সাপ্লাইয়ার। যদিও পুঁজিবাদী প্রতিযোগিতায় যুদ্ধ একটি অনুসঙ্গ। এই যুদ্ধ বাজার দখল, দুর্বল রাষ্ট্রের পণ্যের মূল্য কমিয়ে রাখা, প্রাকৃতিক সম্পদের লুটপাট ইত্যাদির মাধ্যমে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো প্রচুর উদ্বৃত্ব রাজস্বের মালিক হয়। সেই রাজস্বের ওপর অস্ত্র সরবরাহকারীরা ভাগ বসানোর জন্য রাষ্ট্রসমূহকে বিভিন্নভাবে জটিলতর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে চেষ্টা করে। ইরাক যুদ্ধে আমেরিকা যতো ব্যয় করেছে তার বড় অংশটি গিয়েছে অস্ত্র কোম্পানিগুলোর পকেটে। আর বিশ্বের দরিদ্র মানুষেরা এই অর্থের জোগান দিয়েছে আমেরিকাকে। আমেরিকার আরেকটা বড় ব্যর্থতা হলো বিশ্বের কোথাও চায়নার মতো আর একটি উচ্চ প্রযুক্তির সাপ্লাইয়ার্স ভূখণ্ড গড়ে তুলতে না পারা। এই কারণে চায়নার পণ্যে মূল্য ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দিয়ে তাদের শ্রমিকদের বাংলাদেশের মতো দরিদ্র বানাতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। যদি পারতো তবে আমেরিকা-চায়নার বর্তমান লড়াই দৃশ্যমান হতোনা। যদিও চায়নার শ্রমিক শ্রেণি উন্নত দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। সামাজিক বৈষম্য ও চরম।
রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে চায়নার বিপরীতে ভারতকে আস্থায় নিতে পারেনি আমেরিকা। পাকিস্থান-আফগানিস্থান ইস্যুর কারণেও ভারত ছিলো আমেরিকার দূরবর্তী বন্ধু। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বাম শক্তিকে ধ্বংস করার পর এখন তারা ভারতের সঙ্গে গাটছড়া বাঁধার চেষ্টা করছে। কিন্তু কমিউনিস্ট চীন ও কমিউনিস্ট ভিয়েতনাম যতো তাড়াতাড়ি উৎপাদক হিসাবে দক্ষ হয়ে উঠেছে, ভারতের পক্ষে ততোটা উৎপাদক হয়ে ওঠা সম্ভব কি না তা সময় বলে দেবে।
চায়নার সঙ্গে সামরিক বা বাণিজ্যিক লড়াইয়ে আমেরিকা নামার আগে তার নিজের ভোক্তদের সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে চাইবে। ভারতের যথেষ্ট দক্ষ জনগোষ্ঠী আছে, যদি আমেরিকা বিনিয়োগ এবং বাজার সুবিধা দেয়, তবে ভারতের পক্ষে অনেকখানি এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই প্রক্রিয়া থেকে আমেরিকার সরকারের ও জনগণের সুবিধা হলেও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে না। তাই আমেরিকাকে খেলতে হচ্ছে নতুন চাল। মধ্যপ্রাচ্য স্থিতিশীল হওয়ার পর, এখন দক্ষিণ এশিয়া ছাড়া অস্ত্রের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে এমন দেশ নেই বিশ্বজুড়ে। আগামীতে দক্ষিণ এশিয়ায় যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটা শুরু হচ্ছে তাতে চায়নার বিরুদ্ধে লড়ায়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোকে উদ্বুদ্ধ করে আমেরিকা চূড়ান্তভাবে কিছু অস্ত্র বিক্রি করবে মাত্র, কিন্তু তারা চূড়ান্তভাবে চায়নাকে আক্রমণ করবে না। চায়নাবিরোধী শক্তির উত্থানের পুঁজির যোগানের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা ভারতের গহব্বরে প্রচুর সমরাস্ত্রের মজুদ ঘটাবে। বিনিময়ে ভারত হয়তো ভবিষ্যৎ চায়না হয়ে উঠতে সক্ষম হবে। এই রূপকল্পে জাপনা-আমেরিকা-ভারত একসঙ্গে কাজ করবে। পাকিস্তান সম্ভবত, বাতিলের খাতায় চলে গেছে। ভিয়েতনামকে দিয়ে বাংলাদেশকে যেমন চাপে রেখেছে তারা তেমনি ভারতকে দিয়ে চায়নাকে চাপে রাখবে। ২০৫০ সালে হয়তো একটি মোবাইল ফোনের দাম একটি শার্টের দামে নেমে আসবে। তখনো পৃথিবীতে নতুন কোনো যুদ্ধ কৌশল নিয়ে অগ্রসর হবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্ব মোড়ল পক্ষ। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :