মাসুদ আলম: [২] সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের খবরে আলোচনায় আসা রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়ের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সর্বনাশ হয়েছে আরও এক কিশোরীর। আগের ঘটনার ওই তরুণীর মতো এই কিশোরীকেও পাচার করা হয় ভারতে। টিকটকে ‘স্টার’ বানানোর কথা বলে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে কৌশলে ভারতে পাচার করা হয় তাকে। ভারতে পাচারের শিকার ওই কিশোরী তিন মাসের নির্মম নির্যাতন ও বন্দিদশা থেকে পালিয়ে সম্প্রতি দেশে ফেরেন। হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ওই কিশোরী একটি মামলাও করেন।
[৩] বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ২০১৯ সালে হাতিরঝিলে মধুবাগ ব্রিজে হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ২০২১ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় লালন শাঁইয়ের মাজারে ‘টিকটক হ্যাংআউটে’ নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওই কিশোরীকে ভারতে পাচার করা হয় । ভারতে পাচারের পর ওই কিশোরীকে ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। সেখানে তিনি ওই চক্রটির দ্বারা পাচারের শিকার আরও কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণীকে সেখানে দেখতে পান। যাদের সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে। এই কিশোরীকে পাচারের ঘটনার সঙ্গে ১২ জনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পায় পুলিশ। তাদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। পরে মঙ্গলবার রাতে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী দাবকপাড়া কালিয়ানী এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[৪] তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মেহেদি হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের। টিকটক হৃদয় ও গ্রেপ্তারকৃতরা একই চক্রের সদস্য। বাকি সাত জন ভারতীয়। বাবু স্বীকার করেছেন তিনি এক হাজারের বেশি নারী পাচারে জড়িত। মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের ওই কিশোরীকে ভারতীয় দালালের হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০-৮০ জনকে নিয়ে ‘টিকটক হ্যাংআউট’ এবং ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭০০-৮০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করেন এই হৃদয়। তাকে কৌশলে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে কিংবা জোরপূর্বক বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে পরিবারের সদস্য ও পরিচিতদের তা পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল।
[৫] ডিসি বলেন, এই কিশোরী ছাড়াও পাচারের শিকার আরও দু’জন ব্যাঙ্গালুরুতে অবস্থিত আস্তানা থেকে পালিয়ে দেশে আসে। তাদের নাম-ঠিকানা জেনে যোগাযোগের চেষ্টা করছে পুলিশ। বাবু প্রায় ৭-৮ বছর ধরে মানবপাচারে জড়িত। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ও ডায়েরিতে হৃদয়, সাগর, সবুজ, ডালিম ও রুবেলের ভারতীয় মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ডায়েরিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর ঘটনার তরুণীর আধার কার্ড নম্বর পাওয়া ওগেছে।
আপনার মতামত লিখুন :