কালের কণ্ঠ : বাড়ির নকশা অনুমোদনে ইটিআইএন (অনলাইনে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে আগামী বাজেটে। এ ছাড়া হোল্ডিং নম্বর অনুযায়ী বাড়ির মালিকদের চিহ্নিত করে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সঙ্গে তাঁদের আয়কর রিটার্নের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। অর্থাৎ আগামী দিনে বাড়ির মালিকদের আয়ের উৎস জানতে কঠোর হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করজালের আওতা বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে বাড়ির মালিকদের আয়সহ তাঁদের কাছ থেকে কর আদায়ে স্বচ্ছতা আসবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা, ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ও সমবায় সমিতির নিবন্ধনেও ইটিআইএন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এত দিন এসব খাতে ইটিআইএন জমা দিতে আহ্বান জানানো হলেও বাধ্যতামূলক ছিল না।
বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ৩৬ ধরনের কাজে ইটিআইএন বাধ্যতামূলক আছে। এর সঙ্গে আগামী বাজেটে এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে আরো চারটি।
২০১৩ সালে প্রথম এনবিআর বাড়ির মালিকদের রাজস্ব পরিশোধের তথ্য দেখতে অভিযানে নামে। সে সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকার এক লাখ ১১ হাজার ২০০ বাড়ির মালিকের রাজস্ব পরিশোধের তথ্য খতিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম পাওয়া যায়। করযোগ্য আয় থাকলেও ৩৮ হাজার ৭০০ বাড়ির মালিকের টিআইএন (সে সময়ে ইটিআইএন চালু হয়নি) পাওয়া যায়নি। টিআইএন না থাকা বাড়ির মালিকদের ২৯ হাজার জনই বাড়ি ভাড়ার সনদ দেখাতে ব্যর্থ হন। যাঁদের টিআইএন ছিল কিন্তু বাড়ি ভাড়ার রসিদ ছিল না, তাঁদের সংখ্যা ৩৬ হাজার। বাড়ির মালিকদের আয়ে স্বচ্ছতা আনতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে বাড়ির মালিকদের ভাড়া সংগ্রহের তথ্য পৃথক ব্যাংক হিসাব খুলে আদায়ে বিধান করা হয়। পরে প্রভাবশালী বাড়ির মালিকদের চাপে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় এনবিআর। এবার আবারও বাড়ির মালিকদের আয়ের স্বচ্ছতা আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এনবিআরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, বাড়ির হোল্ডিং নম্বর অনুযায়ী মালিকদের চিহ্নিত করা হবে। পরে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সঙ্গে আয়কর রিটার্নের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে।
বাড়ির মালিকদের আয়-ব্যয়ের হিসাব যাচাইয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মুজিদ গতকাল বুধবার বলেন, ‘দেশের অভিজাত এলাকার বাড়ির মালিকরা মোটা অঙ্কের ভাড়া পেয়ে থাকেন। এর বাইরেও অন্যান্য এলাকার বাড়িওয়ালারা নিয়মিত ভাড়া পান। অথচ তাঁদের অনেকে হিসাবমতো রাজস্ব পরিশোধ করেন না। অনেকে ইটিআইএন পর্যন্ত নেন না। এঁদের নজরদারিতে আনলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।’
বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র বিক্রির সময় গ্রাহকদের কাছে অনেক সময় ইটিআইএন চাওয়া হয়। তবে ইটিআইএন না থাকলেও সঞ্চয়পত্র সরবরাহ করা হয়। আগামী দিনে এই সুযোগ আর থাকছে না। সমবায় সমিতির নিবন্ধন করতেও ইটিআইএন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে সমবায় সমিতি রয়েছে এক লাখ ৯২ হাজার ২০টি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আগামী অর্থবছরের বাজেটে আয়কর আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সের প্রত্যেকের ইটিআইএন গ্রহণে কঠোরতা আনা হচ্ছে। তবে বাধ্যতামূলক হচ্ছে না। আর ইটিআইএন থাকলেই বাধ্যতামূলক রিটার্ন দাখিলের নিয়ম করা হচ্ছে। তবে করযোগ্য আয় না থাকলে কর পরিশোধের প্রয়োজন হবে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে এনবিআর পুরনো ১০ ডিজিটের টিআইএন বাতিল করে ১২ ডিজিটের ইটিআইএন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে। বর্তমানে ব্যাংক হিসাব খোলা, ব্যাংকঋণ, পাসপোর্ট, বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কিত কাগজপত্র সংগ্রহ, বাড়ি, ফ্ল্যাট বা জমি কেনা, গাড়ি কেনা, যেকোনো ব্যবসায়ে লাইসেন্স পেতে বা নবায়ন করা, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি সংযোগ নেওয়াসহ ৩৬ খাতে ইটিআইএন ব্যবহার বাধ্যতামূলক রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লেনদেনে ও সেবা পেতে ইটিআইএন জমা বা প্রদর্শনে আহ্বান জানিয়েছে এনবিআর।