ইমরান কায়েস: রিপোর্টটা পড়ার পর থেকে আজ সকাল থেকে ইন্টারনেট, জার্নাল জুড়ে আমি এলএসডির প্রভাবে সুইসাইডের ইভিডেন্স খুঁজে বেরিয়েছি! খুব বেশি কিছু আসলে নেই। বেশ ছাড়া ছাড়া কিছু পাবলিকেশন।
এলএসডিকে সাইকোডেলিক ড্রাগ বলে। মানে এটা নিলে আপনি বেসিক্যালি রিয়েল জগত বা বাস্তবতা থেকে হুট করে দূরে সরে যাবেন!
একটা বড় স্টাডিতে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় এক ভাগ মানুষ তার জীবনে একবারের জন্যে হলেও জিনিসটা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছে!
আমেরিকায় রেটটা অনেক হাই! ওদের প্রায় দশ ভাগ মানুষের একবার হলেও এলএসডির অভিজ্ঞতা আছে!
আমেরিকায়, ১৯৬০ এর দিকে হুট করে এলএসডি খুব জনপ্রিয় হয়। বিটলস, গিন্সবার্গের সময়টায় আরকি! মানে যখন বিটলস বলতেছে আমরা জেসাস এর থেকেও বেশি জনপ্রিয়!
ঐ সময় কমবয়সীরা রীতিমতো সবকিছুতেই এএক্সপেরিমেন্ট এর উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। গান কবিতা সিনেমা যৌনতা, ড্রাগস, রাজনীতি, শ্রেণী বৈষম্য জাত পাত ভাঙার একটা জোয়ার এসেছিলো আমেরিকায় সে সময়।
সূনীলের কিছু লেখা আছে সে সময়টা নিয়ে। গিন্সবার্গতো কলকাতা ঘুরে গেছে বেশ কয়েকবার ! গভীর রাতে একবার সুন্দরবনের গহীনে নৌকা থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েছিলো গিন্সবার্গ!
সেটা এলএসডির প্রভাবে কিনা কে জানে! ওদের এক সাথে এলএসডি নেয়ার একটা ঘটনা সুনীল বেশ কায়দা করে লিখেছেও একটা বই এ! ছবির দেশে কবিতার দেশে হইতে পারে, অর্ধেক জীবনে হইতে পারে৷ স্পষ্ট করে মনে পরছেনা।
আমার ধারনা এলএসডিকে বাংলা মধ্যবিত্ত সমাজে ঐ প্রথম কেউ এত সরাসরি পরিচয় করিয়ে দেয়!
এলএসডির নানারকম নেগেটিভ প্রভাব দেখে, নিক্সন সরকার ১৯৭১ এর দিকে জিনিসটা নার্কোটিস হিসেবে বিবেচনা করে আমেরিকায় নিষিদ্ধ করে দেয়।
এলএসডি যারা নিয়েছে, তাদের বেশিরভাগের কাছেই ( বিশেষ করে তুলনামূলক কম ডোজ যারা নিয়েছে) জিনিসটা খুব একটা ডিস্টার্বিং লাগে নাই , কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা ফলস সুখের অনুভূতিও তারা পেয়েছে! এই সুখানুভূতির নাম এরা দিয়েছে গুড ট্রিপ!
মুশকিল হচ্ছে, এলএসডি আসলে খুবই আনপ্রেডিক্টেবল জিনিস! অনেকের মধ্যে ভয়ংকর কাল্পনিক ভয় এনেছে এলএসডি! অনেকেই এলএসডি নেয়ার পর তীব্র দুঃখে আক্রান্ত হয়েছে! অনেকের এসেছে ভয়াবহ গিল্ট ফিলিংস!
যেটাকে বলে ব্যাড ট্রিপ।
ব্যাড ট্রিপের উদাহরণ অনেক!
দুটো কেস দেখলাম, এলএসডি নেয়ার পর তারা নিজেদের পেনিস কেটে ফেলেছে! কোন একটা সেক্সুয়াল সম্পর্কের স্মৃতি এসে গিল্ট ফিলিংস এত তীব্র হয়ে উঠেছিলো যে তারা আর সহ্যই করতে পারছিলোনা!
এলএসডি নেয়ার পর, ছাদ থেকে লাফিয়ে পরার ঘটনা আছে বেশ কয়েকটা! ড্রাগটা নেয়ার পর থেকেই তাদের মনে হচ্ছিলো তারা হালকা হয়ে গেছে! তারা আসলে উড়ে চলে যেতে পারবে কোথাও! ফলাফল, রেলিং ডিঙিয়ে উড়ে যাওয়ার আগ্রহ!
এক জার্নালে, এক কেস রিপোর্ট দেখলাম গত বছর জুলাই এর দিকে আমেরিকায় সেল্ফ ইনফ্লিকটেড নেক ইঞ্জুরি। মানে নিজে নিজের গলায় ছুড়ি চালিয়েছে ২৬ বছরের একটা ছেলে। তার পাস্টে কোন সাইকোলজিক্যাল ইস্যু নাই, কোন সুইসাইডাল এটেম্পট নাই! শরীরে এলএসডি ছাড়া আর কিচ্ছু পাওয়া যায়নাই!
অথারের ধারনা, এলএসডি নিয়ে ২৬ বছর বয়সী সুস্থ একটা মানুষের নিজের গলায় নিজে ছুড়ি চালিয়ে দেয়ার এই ঘটনাটা পৃথিবীর প্রথম কেস।
ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র হাফিজের ঘটনাটা সত্যি হলে ( আমি মনে করি, সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি) সেটা, এলএসডি নিয়ে প্রবল কাল্পনিক অপরাধ বোধ বা মামুলি কোন অপরাধবোধ এলএসডিতে এম্পলিফায়েড হয়ে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিজের গলায় নিজে ছুড়ি চালিয়ে দেয়ার পৃথিবীর দ্বিতীয় কেস।
আমাদের মনে রাখা দরকার রিক্রিয়েশনাল ড্রাগস মানেই একটা ভয়ংকর অনিশ্চেয়তা। এর প্রত্যকটা ডোজ লিথাল ডোজ। কম বেশি কিছু নেই!
আমার নিজের ফিলোসফি কি জানেন?
এমন কোন সাবস্টেন্স আমি নিবোনা যা আমাকে ব্লান্ট করে, যা আমার মস্তিষ্কের ক্যালকুলেশন, জাজমেন্ট খাটো করে ফেলে।
ব্লান্ট হয়ে হ্যাপি হওয়ার কোন আগ্রহ আমার হয়না।
আমি চাই সকল পরিস্থিতিতে ব্রেইনটা ইউজেবল থাক।
হুট করে ক্যালকুলেট করে ফেলার মতন৷ সুস্থ থাক।
আমি আমার মস্তিষ্ককে বড্ড ভালোবাসি!
এটা আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। নিজস্ব বোঝাপড়া।
কিন্তু মানুষতো বড্ড জটিল প্রাণী।
বড্ড অনিশ্চিত এ জগত, বিভিন্ন ঘটনা ঘটবার অসীম সম্ভাবনা আমাদের চারপাশ জুড়ে!
কার কি হয়, কোন পরিস্থিতি হয় কে জানে!
তবু এই প্রবল ক্ষমতাবান অসাধারন মস্তিষ্কের দখল কোন মামুলি কেমিকেলের হাতে ছেড়ে দিবেন না দয়া করে।
ড্রাগস এক্সপেরিমেন্ট এর জিনিস না।
ড্রাগস কুল কিছুনা। ড্রাগস বোকামি এবং বিপদজনক।
লেখক: ইংল্যান্ড প্রবাসী ডাক্তার। তার ফেইসবুকপোষ্ট থেকে নেয়া।