সমীরণ রায়: [২] টানা ৫৯ দিন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার পর চালু করার সরকারি নির্দেশ হলেও ঘুর্ণিঝড়ের ঝুঁকি এড়াতে মালিক পক্ষ টার্মিনালে নৌযান বেঁধে রেখেছে। যাত্রীরা গত সোমবার সারাদিন টার্মিনালে ভীড় করলেও রাত পর্যন্ত কোন নৌযানই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়েনি। দিনভর খুলনা টার্মিনালে বাঁধা ছিল দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের একাধিক নৌযান।
[৩] মঙ্গলবার (২৫ মে) এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
[৪] এদিকে ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল আকার ধারণ করে ভারতমুখী হচ্ছে। গতিপথ পরিবর্তন না হলে ইয়াস ভারতের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার সকালে অথবা অন্য যেকোন সময়েই ইয়াস আছড়ে পড়তে পারে। তবে আঘাতের সময়ে বা ঠিক আগেই গতিমুখ বদল করতে পারে যে কোন ঘূর্ণিঝড়। এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৪৬৫ থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ, দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে। সমুদ্র উত্তাল। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
[৫] ইয়াস ভারতের উপকূল বরাবর আঘাতের সময়ে সুন্দরবনসহ খুলনা উপকূলে ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া ঝাপটা দিতে পারে। সুন্দরবন কমবেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। খুলনা বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
[৬] আবহওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বুধবার দুপুর নাগাদ ভারতের উত্তর পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলের ১৪ জেলায় ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বর্ষণ হতে পারে।
[৭] করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ৪ এপ্রিল থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেও লঞ্চ না ছাড়ায় ভীড় করছে যাত্রীরা। সোমবার রাতে খুলনা লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঝড়ের কারণে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে খুলনা-মদিনাবাদ, খুলনা-নীলডুমুর, খুলনা-কুড়িকাহুনিয়া রুটে এমএল ফারিয়া সাদিয়া, এমএল আল মদিনা-১, এমএল ওয়াটার কিং ৮, এমএল মুহুয়ীনাফি ও এমএল মোহামমদী লঞ্চসহ বেশ কয়েকটি লঞ্চ টার্মিনালে বাঁধা ছিল।
[৮] আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার সময় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হবে। এ সময়ে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এছাড়া পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে। একই সঙ্গে সুন্দরবন ঝুঁকিতে রয়েছে।
[৯] আবহাওয়ার ১১ নং বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বুধবার দুপুর নাগাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে আঘাতের সময়ে বা ঠিক আগেই গতিমুখ বদল করতে পারে যে কোন ঘূর্ণিঝড়।