শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হবে গঠনমূলক ও ভবিষ্যতমুখী: হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২১, ১০:২৫ দুপুর
আপডেট : ২৩ মে, ২০২১, ১০:২৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ড. আতিউর রহমান: বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে শান্তির পরম্পরা দেখতে পাই

ড. আতিউর রহমান: বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদকপ্রাপ্তি ছিলো একটি অনন্য অর্জন। এই পদক পাওয়ার সময় বাংলাদেশে জাতিসংঘের সদস্য হয়নি। এই স্বীকৃাতি পাওয়ার কারণে আমাদের জাতিসংঘের সদস্য হওয়া সহজ হলো। সারা পৃথিবীর বিশেষ করে নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষগুলোর দৃষ্টি প্রসারিত হলো বঙ্গবন্ধুর প্রতি। এই পুরস্কারটি তার জন্য খুবই অ্যাপ্রোপ্রিয়েট পুরস্কার ছিলো। কারণ সারা জীবন জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে তিনি দুঃখী মানুষের বন্ধু হয়েছিলেন। এই পুরস্কারের মধ্যদিয়ে তিনি বিশ্ববন্ধু হলেন। শান্তি, সাম্য, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিলো।

তিনি যে সরাজীবন দুঃখী মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন, মানবকল্যাণের জন্য তিনি কাজ করতেন। সেগুলোর স্বীকৃতি মিললো এই পদকপ্রাপ্তির মাধ্যমে। তিনি যে পররাষ্ট্রনীতি দাঁড় করিয়েছিলেন, সেই পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি ছিলো যুদ্ধবিহীন একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব স্থাপনের জন্য ‘কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’। এই নীতির ওপর তিনি তার পররাষ্টনীতিকে দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি মনে করতে, পৃথিবীর ধনী দেশগুলো যে পরিমাণ অর্থ অস্ত্র কেনার জন্য খরচ করে, সেটা যদি গরিব দেশের মানুষের জন্য সাহায্য হিসেবে দেওয়া হতো, তাহলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা অনেক সহজ হতো। জাতিসংঘে বক্তৃতা করার সময়ও তিনি একই কথা বলেছিলেন। একটি নতুন বিশ্ব, নিউ ইকোনোমিক অর্ডার বা নতুন অর্থনীতির এক বিশ্ব গড়বার জন্য তিনি আহŸান করতেন। তিনি বলেছিলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য যেন হয়, মানুষ মারবার জন্য নয়। মানুষকে খাওয়ানো, শিক্ষা দেওয়া, জীবনমান উন্নত করবার জন্য যেন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
এই পুরস্কারটি পাওয়া তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এই পুরস্কারটি আর কারা পেয়েছেন? সেটা খেয়াল করলেই বোঝা যায় এই পুরস্কারটি বাংলাদেশের জন্য কতো গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। ভারতের জওহরলাল নেহরু, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, চিলির সালভেদর আলেন্দে, ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত, ভিয়েতনামের হো চি মিন, নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার তেরেসা, ইন্দিরা গান্ধি, কবি পাবলো নেরুদা, মার্টিন লুথার কিং, লিওনিদ ব্রেজনেভ- এই ধরনের মানুষ জুলিও কুরি পুরস্কার পেয়েছেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধু সেই কাতারের একজন মানুষ। এই পুরস্কারের মাধ্যমে সেই স্বীকৃতিটা মিলেছে। বঙ্গবন্ধু যে শান্তির পক্ষে ছিলেন, এটি তো বঙ্গবন্ধু হওয়ার পরের ঘটনা নয়। ১৯৫২ সালে তিনি চীনে গিয়েছিলেন বিশ্বশান্তি সম্মেলনে যোগদান করবার জন্য। সেই সম্মেলনে যোগদান করতে যাওয়ার পর তখন পাকিস্তান রাষ্ট্র ছিলো অত্যন্ত কমিউনিস্ট বিরোধী। তখন তারা বললো যে, কমিউনিস্টদের শান্তি সম্মেলনে কেন আপনারা যোগদান করছেন? তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দুনিয়ার সব মানুষই শান্তি চায়। এই শান্তি সম্মেলন রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেন, চীন যেখানেই হোক না কেন সেখানেই আমরা যেতে চাই। এবং আওয়াজ তুলতে চাই যে আমরা শান্তি চাই।’ এই কথা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা শান্তি সম্মেলনে এইজন্য যাবো, যুদ্ধে দুনিয়ার যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা আমরা জানি এবং উপলব্ধি করি। বিশেষ করে আমাদের দেশকে পরের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। আমাদের কাঁচামাল চালান দিতে হয়। আমাদের দেশের মানুষ না খেয়ে মরে। সামান্য দরকারি জিনিসও যোগাড় করতে পারে না। দেশে যুদ্ধে যে কতোখানি ক্ষতি হয় তা আমরা জানি।

১৯৪৩ সালে বাংলায় যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো তার পেছনে ইংরেজদের যুদ্ধনীতি বড় একটা কারণ ছিলো। সেজন্য আমরা কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধ চাই না। লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিলো। দুর্ভিক্ষে নিহত মানুষগুলোর কথা মনে করে আমরা বিশ্বব্যাপী শান্তি চাই। আমরা চাই যে আমাদের দেশের মানুষ ভালোভাবে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকুক। ১৯৪৩ সালে আমি দেখেছি মানুষ কীভাবে না খেয়ে মারা যায়।’ তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ যদি হয় তাহলে আমাদের মতো দেশের মানুষের খুব বেশি কষ্ট হবে। কারণ দুর্ভিক্ষ, মহামারি আমাদের গ্রাস করে। সুতরাং আমাদের নিজেদের স্বার্থে এবং মানুষের মঙ্গলের স্বার্থেই শান্তি চাই আমরা। আমরা সবসময় শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। সেকারনেই আমি ঠিক করলাম যে আমি বিশ্বশান্তি সম্মেলনে যোগদান করবো।’ মনে রাখতে হবে সেই বিশ্বশান্তি সম্মেলনের সভাপতিই জুলিও কুরি পুরস্কার পড়িয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধুর গলায়। বঙ্গবন্ধুর শান্তির যে দর্শন, পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তির স্বীকৃতি ছিলো এই পদক।

বিশ্বশান্তির জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও সমানভাবে কাজ করছেন। শান্তির নেতৃত্বের একটি পরম্পরা আমরা দেখতে পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর শান্তি কিন্তু শুধু যুদ্ধবিরোধী না, বঙ্গবন্ধুর শান্তি ছিলো ক্ষুধাবিরোধী, মানুষে মানুষে বিভেদের বিরুদ্ধে, ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করে যে ধর্মান্ধ রাজনীতি করে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়, সেখানে মানুষের শান্তি নষ্ট হয়, সেজন্য তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ছিলেন, তিনি সাম্যের পক্ষে ছিলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যাও সেই পথেই। শেখ হাসিনা দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন। গত ১২ বছরে তিনি বাংলাদেশে যে পরিমাণ দারিদ্র ছিলো তার অর্ধেক করে ফেলেছেন। তিনি দরিদ্র মানুষকে বাড়ি করে দিচ্ছেন। একটা মানুষের যদি ঘরই না থাকে, তাহলে তারা জীবনের কী শান্তি? বঙ্গবন্ধুকন্যা সেটা অনুভব করেন। তিনি দশ লাখেরও ওপরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেন। ১৯৭১ সালে আমরাও যে শান্তির অন্বেষায় পাশের দেশে চলে গিয়েছিলাম। সেই কথাটি নিশ্চয়ই তার মনে আছে। সেজন্য তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য শান্তির নিবাস করে দিচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু যেরকম বৃহত্তর পরিসরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকেও শান্তি বলে মনে করতেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই ধারাকে আরও বেশি বেগবান করছেন। আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে সবাইকে শান্তির দিশা দিচ্ছেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা তিনি সবুজ পৃথিবীতে বিশ্বাস করেন। পৃথিবীর শান্তির জন্য তিনি তিনি সবুজ, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করবার জন্য বিশ্বনেতৃত্ব দিচ্ছেন। পরিবেশের আন্দোলনও শান্তির আন্দোলনেরই অংশ। তিনি সেই সবুজ এবং শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম করছেন। ফলে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার মধ্যে একটা শান্তির নেতৃত্বের পরম্পরা দেখতে পাই।

পরিচিতি : সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশে ব্যাংক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমিরুল ইসলাম

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়