শিরোনাম
◈ ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে একটি যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছাতে চায় কমিশন :  অধ্যাপক আলী রীয়াজ  ◈ বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা বাড়ছে: শিক্ষার্থী, চিকিৎসক ও ভ্রমণকারীদের ভোগান্তি চরমে! ◈ পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমাইরার ময়নাতদন্তে ভয়ঙ্কর সব তথ্য ◈ অর্থের বিনিময়ে ৬ বছরের শিশুকে বিয়ে: তালেবান প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আপাতত রক্ষা! ◈ আবারও মে‌সির জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলটদের শেষ ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং ◈ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের জন্য সুখবর: মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠাবে সরকার, ক্ষতিপূরণ মিলবে বীমার আওতায় (ভিডিও) ◈ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত: পিউ রিসার্চ ◈ বেপরোয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩

প্রকাশিত : ১৭ মে, ২০২১, ০৪:৩০ সকাল
আপডেট : ১৭ মে, ২০২১, ০৪:৩০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শামীম আহমেদ: বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভারতের মতো হবে না যে চারটি কারণে

শামীম আহমেদ: দীর্ঘদিন বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে মনে করি বেশ কয়েকটি কারণে আমাদের করোনা পরিস্থিতি ভারতের মতো হবে না । আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি চিন্তা করতে গেলে আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে। মানুষের ও নীতিনির্ধারকদের আচরণগত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের প্রয়োগ করতে হবে। শুধুমাত্র পরিসংখ্যান ও গ্রাফ-চার্ট দিয়ে করোনা ব্যাখ্যা করতে গেলে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যাবে না। আসুন সামাজিক বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্যের ব্যবহারিক দিক বিবেচনায় দেখি কেন বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভারত থেকে ভিন্ন হতে পারে।

[১] গ্রামীন অর্থনীতির বৈচিত্র্যময়তাঃ ঢাকা থেকে যেসব শ্রমজীবী মানুষ রোজার ইদে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান, তাদের একটা বড় অংশ সহসাই আবার ঢাকায় ফিরে আসেন না। দীর্ঘদিন মঙ্গা নিয়ে গবেষণা করার সময় দেখেছি ঢাকার অনেক শ্রমজীবী মানুষ যারা রিকশা, ভ্যান চালান, শহরের রাস্তাঘাটে খুচরো জিনিসপত্র (ছাই থেকে চুরি) ফেরি করেন, ঝালমুড়ি, বাদাম বিক্রি করেন, ফুটপাথে কিংবা রাস্তার পাশে মুদি দোকান চালান, ঘর-বাড়িতে কাজ করেন, ক্ষুদ্র শিল্পভিত্তিক কারখানায় কাজ করেন; তারা রোজার ইদে গ্রামে গেলে অনেক সময় কোরবানীর ইদ পর্যন্ত ঢাকায় ফেরেন না।

মধ্যবর্তী এই দুই-আড়াই মাস গ্রামে-গঞ্জে অনেক কাজ থাকে, ওই সময়ে জমিতে কাজ করলে অনেকক্ষেত্রেই ঢাকার চাইতে বেশী মজুরি পাওয়া যায়। এছাড়া অনেকের গ্রামে নিজস্ব জমি থাকে, সেখানে কাজ করলে, নিজের বাড়িতে থেকেই কাজ করা যায়, ঢাকায় ভাড়া দিতে হয় না।  নিজের জমি না থাকলেও অন্যের জমিতে কাজ করলে বা মফস্বলে রিকশা বা ভ্যান চালালেও, আয় অনেক সময় ঢাকার চাইতে বেশী না হলেও, খরচ যেহেতু অনেক কম হয়, তাই অনেকেই পরিবারসহ এই সময়টা গ্রামেই কাটিয়ে আসতে চান। অনেকে এই সময়টা দেশে যেয়ে বিয়ে করেন, গ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখেন, ফলশ্রুতিতে এদের অনেকেই ঢাকায় ফিরতে একটু সময় নেবেন। ফলশ্রুতিতে, সংক্রমণ কম ছড়ানোয় সেটা ভূমিকা রাখতে পারে।

[২] কেন্দ্রীয় সরকার ভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাঃ বাংলাদেশের সরকার একটি কেন্দ্র সরকার। আমেরিকা, ক্যানাডা কিংবা ভারতের মতো আমাদের দেশে নির্বাচিত প্রাদেশিক সরকার নেই। ভারত, আমেরিকাসহ অনেকে দেশে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতির পেছনে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে প্রাদেশিক সরকারের সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের সমন্বয়হীনতা। এইসব দেশের একেক রাজ্যের সরকার একেকভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মহামারীতে তারা সমন্বিতভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা দেখেছি আমেরিকার নিউ ইয়র্কে যখন অবস্থা খুব খারাপ তখন অন্য প্রদেশ থেকে অক্সিজেন বা ভ্যান্টিলেসন সাপোর্ট যথাসময়ে পাওয়া যায়নি। ক্যানাডার অনটারিও সরকারের আহ্বানে ট্রুডোর কেন্দ্রীয় সরকার সাড়া না দেয়াতে প্রাদেশিক সরকারের প্রধান ডগ ফোর্ডকে সেনাবাহিনীর সাহায্য নিতে হয়েছে। ভারতেও নানা রাজ্যের সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল প্রকট; এমনকি দেশের করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যে বাংলায় নির্বাচন হয়েছে, জনসভা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে এক সরকার ব্যবস্থা এবং সমস্ত দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা দূর্বলতা থাকলেও সমন্বয়হীনতা তুলনামূলকভাবে কম। ফলশ্রতিতে বিভাগভিত্তিক বা জেলাভিত্তিক বিপর্যয় এখানে প্রকট হবে না বলে ধারণা করি।

[৩] ভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণঃ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভারত ভ্যারিয়েন্ট শুরুর দিকেই চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে সেটি পুরো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে এমনটা মনে করছি না। [৪] ভ্যাক্সিনেসনে এগিয়ে থাকাঃ বিশ্বের অনেক দেশ যখন ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে কোন চুক্তিই করেনি, বাংলাদেশ তখন সারা দেশে ভ্যাক্সিনেসন শুরু করে দিয়েছিল। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শহরকেন্দ্রিক একটি বড় জনগোষ্ঠী যারা রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখতে পারত, তারা ভ্যাক্সিন নিয়ে নিয়েছে। সুতরাং আমি ধারণা করছি এখন ভ্যাক্সিনের সরবরাহ কম থাকলেও শুরুর দিকে একটি নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা নেবার কারণে আমাদের এখানে করোনা প্রতিরোধে বেশ কিছুটা অগ্রগতি হয়ে গিয়েছে।

সার্বিকভাবে বলতে পারি ১৭ কোটি মানুষের দেশে বেশীরভাগ মানুষকে ভ্যাক্সিন দিতে আরও বহু মাস লাগলেও, আপাত দৃষ্টিতে আমরা অন্তত ভারতের মতো বিপর্যয়ে পড়ব না বলেই মনে হচ্ছে। তবে নিঃসন্দেহে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোর হারই নানাধাপে বাড়বে এবং আবার পর্যায়ক্রমে কমে আসবে। ততদিন পর্যন্ত যত বেশীসংখ্যক মানুষকে ভ্যাক্সিন দেয়া যায় ততই মঙ্গল। এছাড়াও আন্তর্জান্তিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নেয়াও সমানভাবে জরুরী।  লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়