শিরোনাম
◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা ◈ ভারতের নেপাল নীতিতে 'রিসেট বাটন' চাপলেন মোদি, শিক্ষা বাংলাদেশের কাছ থেকে

প্রকাশিত : ১১ মে, ২০২১, ০৩:৫৫ রাত
আপডেট : ১১ মে, ২০২১, ০৩:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পিপিআরসি ও বিআইজিডির জরিপ: কোচিং-প্রাইভেট টিউশনে যাচ্ছে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী

নিউজ ডেস্ক: নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তার বদলে অনলাইন ও দূরশিক্ষণের মাধ্যমে পাঠদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও এর আওতায় আসেনি অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুলগুলো বন্ধ থাকলেও থেমে নেই কোচিং কিংবা প্রাইভেট টিউশন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনে যাচ্ছে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এ দীর্ঘ সময় প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। সামাজিক শ্রেণীভেদে এ সমস্যার ধরন আলাদা হলেও এগুলোর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

কভিড-১৯-এর কারণে বাংলাদেশে দরিদ্রতার রূপ কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা জানতে দেশজুড়ে তিন ধাপে টেলিফোন জরিপ চালানো হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত চলে জরিপের কাজ। এ গবেষণার তৃতীয় ধাপের দ্বিতীয় অংশ হলো ‘কভিড ইমপ্যাক্ট অন এডুকেশন লাইফ অব চিলড্রেন’। এ ধাপে ৬ হাজার ৯টি পরিবারের মধ্যে দ্বিতীয় অংশের জরিপে ৪ হাজার ৯৪০টি পরিবারের স্কুলগামী শিশুদের ওপর গবেষণা করা হয়।

গতকাল অনলাইনে গবেষণার ফলাফল যৌথভাবে উপস্থাপন করেন পিপিআরসির চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। তারা বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব শিশু সমাজের দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত তাদের অবস্থা আরো সংকটাপন্ন। অনেকদিন ধরে বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষায় ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, মানসিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাসহ দীর্ঘমেয়াদি নানা ঝুঁকি বাড়ছে।

অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরের কমপক্ষে ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষণ ঘাটতিজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে। সঠিক ব্যবস্থা নেয়া না হলে এতে ভবিষ্যতে তাদের শেখার ক্ষমতা কমে যাবে এবং স্কুলের বাইরে থাকার হার বাড়বে। শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকি বেশি দেখা গেছে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের ২৬ শতাংশ ও ছেলে শিক্ষার্থীদের ৩০ শতাংশ রয়েছে এ ঝুঁকিতে। দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের মধ্যে যারা অতিদরিদ্র, সেসব পরিবারের মাধ্যমিক স্কুলগামী ৩৩ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থীর কভিড-সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কায় স্কুল ছেড়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বলা হয়, দূরবর্তী শিক্ষণের জন্য যে সুবিধা থাকা দরকার তা আছে বা ব্যবহার করছে মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী। ফলে এ বন্ধে সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে লেখাপড়া শেখার হার খুব কম। অবশ্য যারা দরিদ্র নয় এবং শহরের বস্তিতে থাকে, মাধ্যমিক পর্যায়ের সেসব শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এ হার একটু বেশি। কোচিং বা টিউশনিতে যাচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ের ৫১ শতাংশ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী। যারা দরিদ্র নয় তাদেরই কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনে যাওয়ার হার বেশি। আবার দেখা গেছে, খরচের কারণে শহরের বস্তি এলাকার কম শিক্ষার্থী কোচিংয়ে যুক্ত হয়েছে।

৯৫ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পুনরায় পাঠাতে আগ্রহী বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে এক্ষেত্রে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে। কেননা ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত শিক্ষা খরচ বেড়েছে ১২ গুণ। তাছাড়া স্কুলগামী ছেলেশিশুদের ৮ শতাংশ ও মেয়েশিশুদের ৩ শতাংশ কোনো না কোনো উপার্জন প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। এটিও তাদের স্কুলে ফেরার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গবেষণায় মহামারীতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন সেটিও দেখা হয়েছে। শহরে বসবাসরত ১০ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ ও গ্রামের ৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানসিক চাপে রয়েছে। অভিভাবকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী এ মানসিক চাপের লক্ষণগুলো হলো অধৈর্য ভাব প্রকাশ, রাগ বা উগ্র ভাব এবং বাইরে যেতে ভয় পাওয়া। ঘরের বাইরে যেতে ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা আবার গ্রামের চেয়ে শহরের শিশুদের মধ্যে বেশি।

অনুষ্ঠানে ড. ইমরান মতিন বলেন, স্কুলগামী শিশুদের একটা বড় অংশ শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে শিশুদের খাপ খাওয়াতে স্কুল পুনরায় খোলার সময় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাসহ একটি মিশ্র পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার।

সমাপনী বক্তব্যে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান স্কুল বন্ধের ফলে সৃষ্ট তিনটি প্রধান সংকটের কথা তুলে ধরেন—শিক্ষণ ঘাটতি, শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি ও বিভিন্ন স্তরের সামাজিক দূরত্ব। তিনি বলেন, আমরা কভিডের কারণে একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করছি। কভিডের দ্বিতীয় ঢেউকে আমলে নিয়ে পিপিআরসি-বিআইজিডির পরামর্শ হচ্ছে শিক্ষার ঘাটতি ঠেকাতে, শিক্ষায় অনাগ্রহ কমাতে ও অভিভাবকদের শিক্ষাসংক্রান্ত আশঙ্কা দূর করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া দরকার। কভিড-পরবর্তী পর্যায়ে মানবসম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত কার্যক্রমসহ ক্লাসের বাইরের শিক্ষণ কর্মসূচিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শুধু শিক্ষা থেকেই দূরে সরে যাবে না, অদক্ষ হিসেবেও বেড়ে উঠবে।

এ শিক্ষাবিদ আরো বলেন, দেশে প্রচলিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বৃত্তি প্রদান কর্মসূচিকে শিক্ষা খরচ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ২৯৬০ কোটি টাকা সরবরাহ করে সরকার বেশ দ্রুতই এ খাতে অর্থসংস্থান করতে পারে। - বনিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়