ডা. নার্গিস আখতার: তৃষ্ণা নিবারণে গৌতম বুদ্ধের সিদ্ধিপ্রাপ্তির দীপশিখা জ্বেলে তাঁর পথচলার সূবর্ণরেখা এঁকেছেন কবি মাহবুব মাহগীর সুহৃদ। অত্যন্ত সন্তর্পনে রেখায়িত করেছেন প্রেম-বিরহ-বিদ্রোহ ও সমাজের অসমতার চিত্র। নিজেও শিল্পী-কবি। অন্যত্র প্রতিভা অপচয় করেননি। নিভৃতে লেখার সঞ্চয় বাড়িয়ে তুলে ধরেছেন এই মাহেন্দ্রক্ষনে। বিফলে কাটে তার নির্ঘুমরাত সিনহার ছবি অপূর্ণ রেখে। সীয়ার্স টাওয়ার বা বুর্জ খলিফার উচ্চতায় গিয়েও তার চিন্তা দূর্বার হয়ে ঝাঁপ দেয় বাস্তবতায়। হিউস্টনের জবা বা নিউজার্সির আস্তরণকেও মনে রাখেন নিবিড়তায়। পদ্মাপাড়ের সন্ধ্যায় চৈতন্য ঢেকে নির্লিপ্ত সংলাপ--জলে বসতে আবডালে আদর--এসবই আকর্ষনীয়। প্রিয় শিক্ষকের সম্মাননা-স্মরণ,ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ওঠা মনটা ঘন্টা বাজায় পোড়া গীর্জায়। জোসনার দাসত্ব করে হলেও কাব্য লুটে নেন। শব-ব্যবচ্ছেদের দুঃখ-যন্ত্রনা তাকে তাড়া করে ঝাউতলা ছেড়ে এলে।পূর্ণিমায় শোলকলা পূর্ণ করে আরাধনা, ঘসাকাঁচে সবুজাভ মায়া মেখে প্রয়সীকে দেখা--উর্ণিতা তার নাম। চিত্রকলায় কাব্য-সৃজনের জনক পাবলো নেরুদা ব ভ্যানগগকেও তুলে এনেছেন। মাইকেল মধুসূধনকেও অতিউচ্চতায় পৌছে দিয়েছেন--মৌলিকতা যার ছিলো বাংলায়। ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র বলে তঁর প্রতি অনুকম্পা করেননি। সমুদ্রবিলাসী কবির নায়িকারাও ঘুরে আসেন দুসাগরের সঙ্গমস্থল।
সংকটে কাছে পেতে চান প্রেয়সীকে--তার সব অসুখ সেরে যায় প্রেম-অসুধে। নববধুর কান্নাভেজারূপ, নীলক্ষেতের রিক্সাযাত্রায় রাইন-সমান ঢেউ অত্যন্ত চমৎকার। কোথাও বড়বোনের সাথে মধ্যবিত্ত হারিকেনের আলো ভাগ করে সন্ধ্যায় পড়তে বসে সুবোধ ছেলেটা।
ঘাসফুল মাড়িয়ে সন্ধ্যানদী পাড়ে বসে জন্মজটের ছায়া দেখে কবি। অমৃত-গরল ছেঁকে নেন নিপুণ হাতে। রবীন্দ্রসংগীত লতাগুল্মের মতো জড়িয়ে রাখে কবির বোধোদয়। তবুও জীবনবোধ জেগে থাকে সমরখন্দের লঙ্গরখানায়, চে গুয়েভেরার সহমর্মিতায়। প্রবল বাতাসে উত্তমাশা ঘুরে সবই স্বপ্নজালে বেঁধে ফেলে অনিত্য সময়। বাসিফুলের অভিমান, নীল দংশনে মৃত্যুর শঙ্কা, লূভ্যেতে কাটানো সময়টুকুও বিমূর্ত কবিতা-ফলকে। সুন্দরতম সৃষ্টিকে স্বাগতম।
মাহবুব মাহগীর সুহৃদের বইটি প্রকাশ করেছেন অয়ন প্রকাশন।