নিউজ ডেস্ক: ভারতে প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত চার দিনে ভারত থেকে সাত শতাধিক মানুষ বাংলাদেশে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিও আছেন। এই তিনজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
ইতিমধ্যে বেনাপোল ও শার্শা উপজেলার ১৩টি হোটেলে ধারণাক্ষমতা অনুযায়ী ৩০৯ জনকে রাখা হয়েছে। অন্যদের ঝিকরগাছা উপজেলার গাজীর দরগা মাদ্রাসা ও যশোর শহরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ডরমেটরিসহ ১৫টি আবাসিক হোটেলে রাখা হয়। যশোর জেলায় এক হাজার মানুষের কোয়ারেন্টিনে রাখার ধারণক্ষমতা রয়েছে। আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে যশোরের আবাসিক হোটেল ও অন্যান্য জায়গা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় যশোরের পার্শ্ববর্তী জেলা খুলনা, ঝিনাইদহ, নড়াইল ও সাতক্ষীরায় আরও ১ হাজার ৬৫০ জনকে রাখার জন্য আবাসন প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রশেন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত বেনাপোল দিয়ে ১৬৭ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে আরও অন্তত ১৫০ জন প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। এর আগে গত তিন দিনে ৪৫১ জন দেশে ফেরেন। তাঁদের মধ্যে ভারত থেকে করোনা পজিটিভ হয়ে দেশে ফিরেছেন তিনজন। তাঁদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ভারত থেকে মানুষকে দেশে ফিরতে নিরুৎসাহিত করতে ২৬ এপ্রিল সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুমতিপত্র নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ভারত থেকে মানুষ দেশে ফিরতে পারবেন।
বন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল দিয়ে মানুষের দেশে ফেরা কমেনি বরং বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভারতফেরত মানুষদের কোয়ারেন্টিনে রাখা প্রশাসনের জন্য রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। আনসার বা প্রহরী দিয়ে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষকে আটকে রাখাও যাচ্ছে না। অনেকে বাইরে বেরিয়ে পড়ছেন। এমতাবস্থায় যশোরসহ আশপাশের এলাকায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে।
যশোর শহরের কয়েকজন বাসিন্দা মুঠোফোনে করোনা সংক্রমণের শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, ভারত থেকে করোনাভাইরাস সঙ্গে করে মানুষ দেশে ফিরছেন। তাঁদের কোয়ারেন্টিন করে ঘরে আটকে রাখা হচ্ছে না। সুযোগ পেলেই অনেকে নানা অজুহাতে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে যশোরসহ আশপাশের এলাকায় ভারতের নতুন শনাক্ত শক্তিশালী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতফেরত নাগরিকদের বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘কোয়ারেন্টিনে থাকা নাগরিকেরা যাতে হোটেল থেকে কোথাও চলে যেতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের কাছ থেকে পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হোটেল ও মাদ্রাসার ফটকে আনসার মোতায়েন করে পাহারা নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ টহলও থাকছে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহর ও বেনাপোলের আবাসিক হোটেল ও ঝিকরগাছা উপজেলার গাজীর দরগা মাদ্রাসায় মোট এক হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০০ জন সেখানে অবস্থান করছেন। আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে যশোরের হোটেলের সব আসন পূর্ণ হয়ে যাবে। এ অবস্থা সামাল দিতে বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে অনলাইনে বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সভা হয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, নতুন করে আরও চারটি জেলার আবাসিক হোটেলে ভারতফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। এর মধ্যে খুলনায় ৭০০, নড়াইলে ১০০, ঝিনাইদহে ২৫০ ও সাতক্ষীরায় ৪০০ জনকে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘যশোরের আসন দ্রুত পূরণ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় বিভিন্ন জেলার ডিসি ও এসপির সঙ্গে আলোচনা করে নতুন করে চার জেলার আবাসিক হোটেলে আরও ১ হাজার ৬৫০ জনের রাখার ব্যবস্থা করেছেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাস প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। বেনাপোল থেকে ভারতফেরত যাত্রীদের নিয়ে ওই সব জেলার হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হবে। নিজস্ব খরচে সেখানে তাঁদের থাকতে হবে।’
এদিকে গত বুধবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগীকে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিশেষ অনুমতিতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে দেশে ফেরা আরও দুই জনের নমুনা পরীক্ষা করলে করোনা পজিটিভ হয়।
যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, গত চার দিনে ভারতফেরত তিনজনের করোনা ধরা পড়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন পজিটিভ অবস্থায় দেশে ফেরেন। তাঁদের হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ফেরত ১২ জন গুরুতর রোগীকে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা আছে। তাঁদের সঙ্গে ছয়জন স্বজনও সেখানে রয়েছেন। - প্রথম আলো