শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:০৭ সকাল
আপডেট : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:০৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাফর ওয়াজেদ: ফতোয়া বাণিজ্য ও মাওলানাদের রাজনীতি

জাফর ওয়াজেদ: ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের একজন প্রতিনিধি হিসেবে চীন দেশে অনুষ্ঠিত পিকিং শান্তি সম্মেলনে যোগদান এবং এরপর নয়া চীনের পরিবর্তিত অবকাঠামো-শিক্ষা-সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করতে চীনের বেশ কিছু স্থান ভ্রমণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চীনের সংস্কারমূলক পরিবর্তনগুলো দেখেছেন, আর নিজের দেশের কথা ভেবেছেন। আমার দেখা নয়া চীন গ্রন্থে তাই চীন ভ্রমণের স্মৃতির পাশাপাশি আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থার চিত্রও উঠে এসেছে। ধর্মকে অনেকে বিনা বিনিয়োগেই লাভজনক ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘মানুষ যদি সত্যিকারভাবে ধর্মভাব নিয়ে চলতো, তাহলে আর মানুষে মানুষে এবং রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে এভাবে যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম হতো না। কিন্তু মানুষ নিজেদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য ধর্মের অর্থ যার যেভাবে ইচ্ছা সেইভাবে চালাতে চেষ্টা করেছে। সেজন্য একই ধর্মের মধ্যে নানা মতের সৃষ্টি হয়েছে। ধরুন রসূলে করিম (স.) ইসলাম ধর্মকে যেভাবে রূপ দিয়েছিলেন, সেই ভাবে যদি ধর্ম চলতো, তাহা হলে আজ আর মানুষে মানুষে এই বিরোধ হতো না। কিন্তু সেই ইসলাম ধর্মের মধ্যে কতো বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে।’ পীর, মাওলানাদের কারণে মুসলমানরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আপসোস করে আমার দেখা নয়া চীন গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আরও লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে এককালে এই সকল তথাকথিত ধর্মগুরু বা পীর সাহেবরা ইংরেজি পড়া হারাম বলে আমাদের জাতির ভয়ানক ক্ষতি করেছে। সৈয়দ আহমদ যখন ইংরেজি পড়ার জন্য আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে এই সব পীর সাহেবরা ‘কাফের’ বলে ফতোয়া দিলেন। জিন্নাহ সাহেব যখন পাকিস্তানের আন্দোলন শুরু করলেন, তখন এই সব পীর সাহেবরা কায়েদে আজমের বিরুদ্ধে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করেছিলো। কংগ্রেসের টাকায় হাজার হাজার প্যামফলেট বিলি করেছিলো। ইসলামের নামে তারা কোরআন ও হাদিস দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করতো যে- পাকিস্তান দাবি করা আর কোরানের খেলাফ করা একই কথা। আরেকদল পীর মাওলানা কেতাব কোরআন দিয়া প্রমাণের চেষ্টা করতো যে- পাকিস্তান চাওয়া জায়েজ আছে।’

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় সিলেট অঞ্চল পাকিস্তানের সঙ্গে নাকি ভারতের সঙ্গে থাকবে সেই বিষয়ে গণভোটের আগে পাকিস্তানের পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে মওলানাদের ফতোয়ার মুখোমুখি হওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘সিলেটের ১৫ হাজার মওলানা ফতোয়া দিলেন যে সিলেট জেলার পাকিস্তানে যাওয়া উচিত হবে না। তারা কোরআন হাদিস দিয়ে এটি প্রমাণ দিতেও চেষ্টা করলেন। কিন্তু আমরা বললাম, ভোট হবে। মানুষের পাকিস্তানের পক্ষে পড়লে সিলেট পাকিস্তানে যাবে, ভারতের পক্ষে পড়লে ভারতে যাবে। এরপর হাজার হাজার মওলানা কংগ্রেসের টাকা নিয়ে বক্তৃতা শুরু করলেন- পাকিস্তানে ভোট দেওয়া হারাম। ... সোহরাওয়ার্দী সাহেব আমাকে মাইক্রোফোন দিয়েছিলেন। আমি মাইক্রোফোনে বক্তৃতা শুরু করলাম। পীর সাহেবরা প্রথমে দাঁড়াইয়া ফতোয়া দিলেন- মাইক্রোফোনে কথা বলা হারাম।’ এরপর আফসোস করে তিনি আরও বলেন, ‘কেমন করে আমাদের দেশের একদল মওলানা টাকার লোভে কোরআন হাদিসের মিথ্যা ব্যাখ্যা করতে পারে। কেন তারা এ কাজ করে? এর অর্থ তারা এটাকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেছে।  কোনো কাজকর্ম করে না, মানুষকে ফাঁকি দেয়; মাদ্রাসার নামে, মসজিদের নামে, লিল্লা বোর্ডিংয়ের নামে টাকা তুলে নিজেদের ভরণপোষণ করে।’ সূত্র: আমার দেখা নয়া চীন, শেখ মুজিবুর রহমান  পৃষ্ঠা নংঃ ১০৬, ১০৮, ১০৯, ১১০, ১১১।

লেখক : মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট ব বাংলাদেশ (পিআইবি)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়