শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল, ২০২১, ০৯:৩১ সকাল
আপডেট : ১৭ এপ্রিল, ২০২১, ০৯:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্বপ্না রেজা: মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারই কেবল শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায় না

স্বপ্না রেজা: সম্প্রতি বিজিএমইএ এর নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। নির্বাচনের আগে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলাম যে, এলিট নয়, প্রকৃত মানুষ যেন বিজিএমইএ এর নেতৃত্ব দেবার জায়গায় আসেন। এমন প্রত্যাশার কারণ নিশ্চয়ই আছে। সাধারনত দেখা গেছে বছরের পর বছর যারা নেতৃত্ব দিতে আসেন তারা ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পোশাক শিল্পই কেবল লাভবান হয়, তাদের ও সকল পোশাকশিল্পে কর্র্মরত শ্রমিকদের জীবনের কোন পরিবর্তন আসে না মূলত: যারাই পোশাকশিল্পের চালিকাশক্তি। শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনা। কারণ মালিকদের মানসিকতার কোন পরিবর্তন আসে না। মালিকেরা মালিক হয়েই থাকেন, থাকতে ভালোবাসেন। ফলে মহামারী কিংবা দুর্যোগ এদের ভেতর মানবতা জাগায় না। আমরা তেমনটা দেখিনি। ব্যতিক্রম যারা আছেন তাদের খবর খুব একটা সাধারণ মানুষ জানতে পারেন না। সংগঠনের কার্যকলাপের কাছে সম্ভবত সেগুলো ম্লান হয়ে থাকে। গোষ্ঠী স্বার্থে সেইসব প্রকাশ পায় না।

বিজিএমইএ এর নবনির্বাচিত সভাপতির কথা টিভির বদৌলতে শুনলাম। করোনা ভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করবার জন্য যখন বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক লকডাউন দিয়েছে, তখন শিল্পকারখানা খোলার দাবীতে মালিক সংগঠনদের ভেতর থেকে জোড়ালো দাবী উঠেছে। সরকার সেই দাবী মেনে নিয়েছেন। কেনো শিল্পকারখানা খোলা রাখা দরকার তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা কারণ হিসেবে বিজিএমইএ এর নবনির্বাচিত সভাপতি উল্লেখ করেছেন যে, যে সকল শ্রমিক গার্মেন্টসে কাজ করে তাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। এই বয়সের মানুষদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। তার কথা শুনে বেকুব বনে গেলাম। জানতে ইচ্ছে হলো, তার কাছে সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত মৃতদের তালিকা ও পরিসংখ্যাণ আছে কিনা। তিনি কতটুকুইবা খবর রাখেন। যেখানে প্রতিনিয়ত আমরা প্রচারমাধ্যমে দেখছি, শুনছি যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তরুণ, যুবক ও শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। আর যে সকল নারী শ্রমিক গার্মেন্টসে কাজ করেন তাদেরইবা শারীরিক সক্ষমতা কতটুকু করোনার মতন একটা অতিমারীকে মোকাবেলা করবার, এই বিষয়ে কোন তথ্য সম্ভবত সভাপতির নিকট নেই। অন্তত: থাকলে তিনি ভেবেচিন্তে কথা বলতেন হয়তবা।
হ্যা, পোশাক শিল্পকারখানাসহ সকল শিল্পকারখানা খোলা রাখবার যৌক্তিকতা ও ভরসার জায়গাটুকু খুঁজে পাওয়া যেত যদিনা সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হতো যে, করোনার মতন অতিমারী দুর্যোগে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই গার্মেন্টস খোলা রাখা হবে। সর্বাত্মক লকডাউনে যেখাণে গণপরিবহন বন্ধ, হোটেল দোকানপাট একটা সময় পর্যন্ত খোলা, মুভমেন্ট পাস ছাড়া চলাচল নিষিদ্ধ ইত্যাদি এমন এক প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ অবস্থায় কেউ বলেননি যে, শ্রমিকদের সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানায় অনা ও নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বলেননি যে, মালিকপক্ষ থেকে প্রতিদিন পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা হবে, অসুস্থ হলে চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহণ করা হবে এবং বলেননি যে, এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সকল শ্রমিকের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি বীমা পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে। বললে এবং তা বাস্তবায়ন করলে অন্তত: সত্যিকারার্থে মানবিক বোধসম্পন্ন নেতার সন্ধান পাওয়া যেত। এতে রপ্তানী আয় যেমন সচল থাকতো তেমনি শ্রমিকদের জীবনও নিরাপদ হতো। নিজেরাও লাভবান হতেন দু’দিকে, এক সামাজিক মর্যাদা ও দুই বিত্তের মাত্রার বৃদ্ধির দিক দিয়ে। এটা তো সর্বজনবিদিত যে, বাজারে, পথেঘাটে গার্মেন্টস মালিকদের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব খুব একটা নেই। যাইহোক আস্থা ও ভরসার জায়গায় না দাঁড়িয়ে উপরন্তু সরকার ও পোশাকশিল্প সংগঠণ থেকে বলা হচ্ছে যে, শিল্পকারখানায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হবে। কাজেই ভয়ের কিছু নেই। কেবল মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ঘনঘন হাত ঘষা আর তিন ফিট দূরত্বে অবস্থান করে কাজ করাকেই তারা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা বলছেন। বিষয়টি যেন কেমন, তাই না ? এই সকল শ্রমিক যে সকল এলাকায় বসবাস করেন, যে পথ মাড়িয়ে কাজে আসেন তা যে মোটেও নিরাপদ নয় তা যেন কর্তৃপক্ষের রপ্তানী আয়ের হিসেবখাতায় নেই। আজব !

বাংলাদেশে রপ্তানী আয়ের ৮৪ ভাগই আসে পোশাকশিল্প খাত থেকে। সঠিক পরিসংখ্যাণ না থাকা কিংবা প্রতি বছর পরিসংখ্যাণ হালনাগাদ করা হয় কিনা শত সংশয়ের ভেতরও যেটুকু জানা যায় যে, বাংলাদেশে ৪৫ লাখের বেশি শ্রমিক পোশাকশিল্পে কাজ করছে। যার মধ্যে আবার ৮০ ভাগের বেশি নারী শ্রমিক। যাইহোক ব্যবসাবাণিজ্যে পোশাকশিল্পের ধারে কাছে কেউ নেই বিশেষত রপ্তানী আয়ের বেলায়। ফলে এই ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা স্বাভাবিক নিয়েমেই বিত্তবান হয়ে ওঠেন। ধনসম্পদ, অর্থ সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর এতে চাপা পড়ে যায় তাদের মানবিক গুনাবলী ও বোধশক্তি অনেকে তেমনই মনে করেন। মনে করতে বাধ্য হন।
একজন তরুণ বলছিলেন, এই উপমহাদেশটা আবার ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া উচিত। আৎকে উঠলাম এমন অভিমতে। তার ব্যাখ্যা ছিলো, দুর্নীতি, লোভ, ধর্মীয় উগ্রবাদ, দখলবাজ, পারস্পারিক সংঘর্ষ ইত্যাদি প্রাদেশিক অর্থে নিজেদের ভেতর এতো বেশি প্রকট যে ব্রিটিশ শাসন থাকলে সেটা হতে পারতো না। হয়ত শ্রেণি বৈষম্য সৃষ্টি হতো না। উপমহাদেশ ক্ষতবিক্ষত হতো না। পরাধীন থাকাটাই এদের জন্য দরকার ছিলো। আমি ইতিহাসের শিক্ষার্থী নই। যে তরুণ এমন অভিমত প্রকাশ করলেন, তিনিও না। অথচ এই প্রজন্মের একজন হিসেবে তার আক্ষেপ এমনই।

করোনা মাস্ক পরিয়েছে মানুষকে বেঁচে থাকবার বাসনায়। আর কিছু মানুষ অদৃশ্য মুখোশ পরেই ছিলো স্বার্থ আর লোভের বাসনায়। মৃত্যুর মতন কঠিন সত্য দু’পক্ষের জন্যই সত্য। যদি কেউ ভেবে নেন যে অতি বিত্তের মাঝে তিনি মৃত্যু থেকে নিরাপদ, ভুল করবেন। বরং মৃত্যুর হাত থেকে অন্যকে সুরক্ষিত করবার ভেতরই তিনি মানবমনে বেঁচে থাকবার সুযোগ নিতে পারেন। মানুষ তাকে শ্রদ্ধাভারে স্মরণ করতে পারেন, মনে রাখতে পারেন।

পরিশেষে বলবো, এই প্রজাতন্ত্রের মালিক সবাই। সুতরাং সুস্থভাবে, নিরাপদে বেঁচে থাকবার অধিকার সবার আছে। সরকারের দায়িত্ব হলো সেই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা। শ্রমিক না বাঁচলে গার্মেন্টসের অত্বিত্ব থাকবে না। বিজিএমইএ তো দূরের কথা।

স্বপ্না রেজা: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়