মুনমুন শারমিন শামস্: খুব কৌতুক নিয়া লক্ষ্য করলাম তাদের। মানে সেসব প্রগতিশীল ব্যক্তিস্বাধীনতামারানি ভাইভোনদের, যারা মামুনুল হকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়া খুবি চিন্তিত ছিলেন। ঝর্ণার ডায়েরি উদ্ধার এবং দিনের পর দিন মামুনুল হুজুরের তারে ও অন্যান্য নারীরে অ্যাবিউজ করা, টাকা দিয়ে শরীর কেনা, ‘বান্দি ও পতিতা’র মতো ব্যবহার কইরা ধর্মমতে বিবাহের আলাপ দেওয়া, এসব তথ্য উপাত্ত যখন নদীর পানির ন্যায় কুলকুল করে বের হয়ে আসতেসে, তখন তারা সব মুখে কুলুপ আইটা চুপটি কইরা ঘরে বসে শ্রেণি চেতনা ও ব্যক্তির আকাক্সক্ষা শীর্ষক সেমিনার কত্তেসেন। বিশাল ব্যাপার আর কী। আমি এই কথাটা কইসিলাম। মামুনুলের মতন হুজুর পীর ইত্যাদিরা নারীরে এইভাবে জিম্মি করে, ফাঁদে ফালায়, দাসির মতো বেচাকেনা করে, ব্যবহার করে এবং একসময় ছুড়ে ফালায়ে দেয়।
পুরা প্রক্রিয়াটার ভিত্রে উনারা ব্যবহার করে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিপত্তি ধর্ম আর মানুষের অশিক্ষা কুশিক্ষাকে। এসব লোকের এক্সপোজড হওয়ার দরকার আছে। খুব খুব দরকার আছে। তারা এক্সপোজড হওয়া মানে ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ না রে, এর মানে হইলো একটা অন্যায় ঘটছে অন্ধকারে, সেই অন্যায়টা দিনের আলোয় আসা। যে লোক নারীকে মানুষই বলে মনে করে না, সেই লোক নারী নিয়া রিসোর্ট যায়, সেই লোকের আবার যৌন ব্যক্তিগত কী? যে ব্যক্তি নারীকে মানুষই মনে করে না, যে মানুষ নারী পুরুষের যৌনস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, সেই ব্যক্তির অতি গোপনে ও প্রতারণামূলক উপায়ে নারী গমন আপনার কাছে যদি মানবিক মনে হয়, তাইলে তো আপনার মানবিক বোধ শিক্ষার ভিত্রেই বিরাট গলদ আছে! আপনি নিজে তার মানবিক অধিকারের কথা বলতেই পারেন, সত্য। কিন্তু তার আগে তো আপনে ঘটনাটা যাচাই করবেন, বুঝবেন, দেখবেন, নাকি? নাকি বড় বড় লেকচার না ঝাড়লে আজকাল দাম পাওয়া যায় না?
ঝর্ণা একটা উদাহরণ। এরকম হাজার লাখ ঝর্ণা আছে। প্রতিটা ধর্মব্যবসায়ীর এরকম একাধিক ঝর্ণা আছে। যে ঝর্ণারা অর্থের অভাবে, পরিস্থিতির চাপে, ধর্মে অন্ধ হয়ে এসব হুজুরদের কেনা দাস হয়ে থাকে। নির্যাতিত হয়। ধর্ষিত হয়। অপমানিত হয়। পরিবার ভাঙে। চাকরি হারায়। নানাভাবে পর্যুদস্ত হয়। এসব ঝর্ণাদের মুখ ঢাকা থাকে বোরখার আড়ালে। সেই আড়ালের ভেতরে কতো কতো অশ্রুপাত, তার খবর কেউ রাখে না। একটা অন্ধ জীবনের ভেতরে জমে ওঠা অন্ধকারের নিচে তলায়ে যেতে যেতে ঝর্ণারা মনে মনে কতো কীই না ভাবে। কিন্তু চরম পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, ধর্মের অন্ধ গোড়ামি আর ধর্মব্যবসায়ীদের থকথকে লোভ আর হুংকার তাদের মুখ চেপে ধরে রাখে। ঝর্ণাদের কথা শুনবার কেউ নেই। যে মেয়েরা এরকম ধর্মান্ধ জীবনের ভেতরে বস্তাবন্দি থাকে, মেনে নেয় হাজার বছরের অন্ধকার, বুকের ভেতরে হাজারো শঙ্কা, দ্বিধা নিয়ে কাটায়ে দেয় আস্ত জীবন, সেসব মেয়েদের কথা বলেন। তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা বলেন। তাদের তাদের মানবাধিকারের কথা বলেন। তাদের চোখ খুলতে সাহায্য করেন। তাদের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়ায়ে দেন। মামুনুল জন্য ব্যক্তিস্বাধীনতার লেকচার মারায়ে কোনো লাভ নেই! ফেসবুক থেকে