এম আমির হোসেন: বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করা কোনো উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর পক্ষে অসম্ভব। রাষ্ট্র হলো কমপ্লেক্স একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্নরকম চিন্তাচেতনার চর্চা থাকা লাগে যা উগ্রপন্থীদের মধ্যে ছিটেফোঁটাও নেই। রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহন নয়; উগ্রপন্থীরা পারবে কেবল রাষ্ট্রের সম্পদের বিনাশ করতে, নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরাতে এবং শেষতক নিজেরাও নিঃশেষ হতে। এটাই তাদের পরিণতি। চোখ খুলে একটু তাকালেই তাদের এই পরিণতি দেশে দেশে দৃশ্যমান হয়। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে কোনো উগ্রবাদীগোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোটায়। বাংলাদেশের সীমানার প্রায় সবদিক জুড়েই আছে প্রতিবেশী ভারত। ভারত হলো অত্র অঞ্চলের বড় প্রভাবক রাষ্ট্র। ভারত কখনো চাইবে না এখানে উগ্রপন্থীরা বেশিদূর এগিয়ে যাক। এবং সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীও তা চাইবে না। রাজনৈতিক দলগুলোই উগ্রবাদী দলগুলোকে মাঝেমধ্যে আস্ফালনের সুযোগ করে দেয়। ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে অবস্থান দৃঢ় করার জন্য তারা উগ্রবাদীদের উগ্রতা জিইয়ে রাখে। ভারতও চায় এদেশে উগ্রবাদীদের তাণ্ডব কিছুটা অব্যাহত থাকুক যেন ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তা কাজে লাগানো যায়।
তারা চায় স্বাধীন এই জাতিরাষ্ট্রটি দৃষ্টান্তমূলক কোনো উন্নতি যেন লাভ করতে না পারে। বহুজাতিক ভারতের অখণ্ডতার জন্য এই চাওয়া অমূলক নয়। আসলে ধর্ম নয়, ধার্মিকতা নয়, এগুলো সবই হলো রাজনীতি। ক্ষমতা দখল ও দখলকৃত ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার জন্য উগ্রবাদীদের ব্যবহার করা হয়। আবেগ-সর্বস্ব জনতা রাজনীতির এই প্যাঁচটা ধরতে পারে না বলেই তারা যাচ্ছেতাই ভাবে ব্যবহৃত হয়। এই গোলকধাঁধা থেকে মুক্ত হয়ে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বোধোদয় সহজে হবে বলে মনে হয় না। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি একটা লেভেল-এ যেয়ে আটকে আছে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ রাজনীতিবিদদের দ্বারা সৃষ্ট তথাকথিত ‘অনুভূতি’, ‘চেতনা’ ইত্যাদি বলয়ের মধ্যেই কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে। অনুভূতিকরণ ও চেতনায়নের এই প্রকল্প কেবল জাতীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও চলমান আছে। এই অচলায়তন ভাঙ্গার জন্য স্বতন্ত্র বুদ্ধিবৃত্তিক ধাক্কা ছাড়া কোনো পরিবর্তন হবে না এখানে, সহজে সৃষ্টি হবে না নতুন সম্ভাবনারও। লেখক : চিকিৎসক
আপনার মতামত লিখুন :