মাসুদ রানা: আমি মনে করি না শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের প্রধান। আমি মনে করি শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একটা ফ্যাশিস্ট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং জনগণের ওপর দুঃশাসন জারি রেখেছেন। আমি মনে করি, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে গিয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন।
উপরের বিবৃতি ধারণ করা সত্ত্বেও আমার ধারণা, বাংলাদেশের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী বন্ধুত্বের নামে বৈরীমূলক ভারত রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিমন্ত্রণ করেছেন কূটনৈতিকভাবে তা অশিষ্ট ও সম্পর্কের স্বার্থে, কিন্তু তিনি একই সাথে এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে পছন্দ করে না।
অর্থাৎ আমি মনে করি, মোদীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঘটনায় শেখ হাসিনা অখুশী নন। তিনি বরং অখুশী হতেন যদি যেভাবে প্রথমবার সিপিবি মোদীকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলো, সে-রকম কিছু ঘটলে।
টেলিভিশনের রিপৌর্টিংয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যে ভারতের সাথে সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই যে ‘সমতা’ ও ‘সম্মান’ শব্দের যোজনা, তাতেই বুঝা যাচ্ছে শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদীকে কী বার্তা দিয়েছেন। আর, এই বার্তাটি যখন দিচ্ছেন, তখন তিনি মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ সামাল দিচ্ছেন রাজপথে। ফলে, মোদী কী বার্তা পেলো? মোদী এই বার্তা পেলেন যে, প্রথমতঃ বাংলাদেশের জনগণের কাছে তিনি অনাকাক্সিক্ষত; দ্বিতীয়তঃ শেখ হাসিনা দাদাগিরি পছন্দ করছেন না।
মোদী হয়তো ভাববেন শেখ হাসিনা কি তবে সম্পূর্ণরুপেই অবাধ্য হয়েছেন? বস্তুতঃ তিনি এটি ভেবে এসে থাকবেন ২০১৬ সাল থেকেই। তারপরও হয়তো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনাকে ছলে-বলে-কৌশলে নিয়ন্ত্রণে রাখার, কিন্তু সম্ভবত সফল হতে পারছেন না। ফলে, নরেন্দ্র মোদী না পারছেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিতে, না পরছেন শেখ হাসিনার অবস্থান মেনে নিতে।
এখানে সকল রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীর জানা উচিত যে, কোনো দেশের শাসকই চায় না অন্য দেশের শাসকের দ্বারা শাসিত হতে। হ্যাঁ, কখনও কখনও ক্ষমতায় আসার কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে স্বদেশী শাসক বিদেশি শাসকদের বড়ো ধরণের ছাড় দিয়ে থাকে, যা তাদের স্বদেশে দুর্বলতার ফল। কিন্তু স্বদেশী শাসক ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে স্বদেশী ফ্যাক্টরগুলোকে যখন সফলভাবে ম্যানেইজ করে ফেলে কিংবা করতে পারবে বলে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে, তখন তারা বিদেশী শাসকদেরকে শর্তহীন ছাড় না দিয়ে বার্গেনিংয়ে প্রবৃত্ত হয়। বলাই বাহুল, এই বার্গেনিংয়ে স্বদেশী শাসক নিজের সাথে দেশের স্বার্থটাও নিশ্চিত করতে চায়।
কোনো-কোনো আদর্শবাদীরা যেভাবে দুর্বল দেশের শাসকদেরকে বিদেশী শাসকদের কম্প্রাডর (comprador) বা দালাল বা ক্রীড়ানক মনে করেন এবং ব্যাখ্যা করেন, সেটি একটি যান্ত্রিক ব্যাখ্যা। এরূপ যান্ত্রিক ব্যাখ্যা বাস্তবতার সঠিক জ্ঞান দেয় না।
বাস্তবতাকে বস্তুনিষ্ঠভাবে বুঝতে হলে, বুঝতে হবে দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে। আমি বস্তু-বিষয়-ঘটনাসমূকে দ্বন্দ্বিক পদ্ধতিতেই বুঝতে ও বুঝাতে চেষ্টা করি বলেই উপরে আমার মতামত তুলে ধরলাম। কিন্তু আমার ধারণাকে সত্য হতেই হবে, এমনটি আমি বলছি না। এটি একটি হাইপোথেসিস মাত্র! লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড