সুজন কৈরী : [২] বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার ঠেকাতে ও মামলার তদন্ত সহজীকরণে বৈধ অস্ত্রের ডাটাবেজ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অটোমেটেড ব্যালাস্টিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (আবিস) নামক একটি সফটওয়ারের মাধ্যমে সারা দেশের সমস্ত বৈধ অস্ত্রের তথ্য থাকবে সিআইডির হাতে। ইতোমধ্যে গত ২৩ মার্চ থেকে এ সফটওয়ারটির ব্যবহার শুরু করেছে সিআইডি। সফটওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে বৈধ অস্ত্রের তথ্য ভান্ডার।
[৩]সিআইডি বলছে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কাউকে গুলি করে হত্যা করা হলে বা কাউকে গুলিবিদ্ধ করা হলে কিংবা গুলি ছোড়ার ঘটনায় দ্রæতই অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ডাটাবেজ তৈরির মাধ্যমে লাইসেন্স পাওয়া বৈধ অস্ত্রের মালিকদের পরিচয়ও সংরক্ষণ করবে সিআইডি। সম্প্রতি বাংলাদেশ আর্মস ডিলার অ্যান্ড ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে সিআইডি। ইতোমধ্যে দেশের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে যাবতীয় তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।
[৪] সিআইডি বলছে, যখন গুলির মাধ্যমে কোনও অপরাধ সংগঠিত হয়, তখন তদন্তের স্বার্থে প্রথমেই গুলিটি বৈধ না অবৈধ অস্ত্রের তা জানতে হয়। বৈধ অস্ত্রের সুনির্দিষ্ট ডাটা না থাকায় গুলিটির পরিচয় শনাক্তে তদন্ত কাজ কঠিন হয়ে পড়ে। আর এ কঠিনকাজ সহজতর করতেই আবিস নামক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে।
[৫]এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে কাজকে আরও নির্ভুল করবে উল্লেখ করে অতিরিক্ত আইজিপি সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে আর্মস ফরেন্সিক বিভাগ আছে যেখানে আর্মসের ব্যালেস্টিক রিপোর্ট করে থাকি, শুটিং ইনসিডেন্ট যখন হয় ক্রাইম সিন সেখান থেকে নমুনা নিয়ে আসে। এরপর আমরা ফরেনসিক করে মেলানোর চেষ্টা করি কোন অস্ত্র থেকে গুলি করা হলো। এটা করতে গিয়ে আমরা দেখলাম যে সম্প্রতি আমরা যে ডিএনএ ব্যাংক করেছি, তদন্তে এখান থেকে খুব ভালো রেজাল্ট পাচ্ছি। এনআইডির যেমন একটি ইউনিক ফিচার আছে, ফিঙ্গার প্রিন্ট, ডিএনএ, মোবাইলের আএমইআই’র যেমন ইউনিক ফিচার আছে প্রত্যেকটি অস্ত্ররেও একটি ইউনিক ফিচার আছে। চিন্তা করলাম আমরা অস্ত্রের ফরেনসিক করে থাকি। সেখানে যদি ডাটা ব্যাংক করা যায় তাহলে তদন্তে অগ্রগতি হবে। এজন্য আমরা একটি সফটওয়্যার কিনেছি যার নাম অটোমেটেড ব্যালেস্টিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (আবিস)।
[৬] এটি বিশ্বব্যাপী খুব জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য একটি সফটওয়্যার। তদন্তের ক্ষেত্রে অনেক বেশি ব্যবহৃত হয় এটি।
সিআইডি প্রধান বলেন, লাইসেন্স করা অস্ত্রের তথ্যকে যদি আবিসে নিয়ে আসি তখন ক্রাইম সিনের কাছ থেকে যখন কোনও গান শুটের ফিচার পাব সেটিকে এনে আমাদের সিস্টেমে দেবো। যদি এটা লাইসেন্স করা অস্ত্রের হয়ে থাকে তবে সিস্টেম আমাদের ৫ মিনিটেই বলে দেবে কোন বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে বা বেরিয়েছে। এই অস্ত্র থেকে আমরা আবার মালিকের তথ্য পাব। তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করাটা সহজ হবে। যদি না মেলে তখন আমাদের খুঁজতে হবে অবৈধ আর্মস কিনা।
[৭] তিনি বলেন, অস্ত্রের ডিলারদের সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি। আমরা তাদের গত ১০ বছরে বিক্রি হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে তথ্য চেয়েছি। আর এখন থেকে যেগুলো বিক্রি হবে সেগুলোর তথ্যও আমাদের কাছে আসবে। গত ১০ বছরেরটা যখন আমাদের সফটওয়্যারে উঠিয়ে ফেলব তখন পরবর্তী ১০ বছরের তথ্য নেব এবং সফটওয়্যারে আমরা উঠিয়ে ফেলব। ডিলাররা আমাদের জানিয়েছেন দুই লাখের বেশি লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে দেশে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করবো যারা অস্ত্র ব্যবহারকারী, তাদের যত কম বিরক্ত করা যায়। এ বিষয়ে আমরা অস্ত্র বিক্রেতাদের কাছ থেকে তথ্য নেব। তবে নতুন করে কোনও অস্ত্র কিনলে এখন থেকে সঙ্গে সঙ্গে ওই অস্ত্রের কোড সিআইডিকে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। বৈধ অস্ত্রের নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে অস্ত্র মালিকদের যেনো কোনও বিড়ম্বনায় না পড়তে হয় সেটি নিশ্চিতে আমাদের ৬৪ জেলায় সিআইডি অফিসে অস্ত্র মালিকরা তাদের অস্ত্রের নমুনা জমা দিতে পারবেন।
[৮] ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, এ পদ্ধতির কারণে যারা বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহার করে তারা এমনটা করতে চাইবে না। আবার দেশে কী পরিমাণ অস্ত্র অনুমোদিত রয়েছে তার একটা সুনির্দিষ্ট প্রোফাইল তৈরি হবে। পাশাপাশি আমাদের যে মূল উদ্দেশ্য তদন্ত, সেটির কাজ সহজ হবে। মূলত ক্লুলেস হত্যাকাÐগুলোতে এটি বড় ভ‚মিকা রাখবে। বাংলাদেশ আর্মস ডিলার অ্যান্ড ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৩ মার্চ সিআইডির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমাদের কাছে অতীতে বিক্রিত অস্ত্রের ডাটা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা তো এমনিতেই অস্ত্র বিক্রির তথ্য নিয়মিত জেলা প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে থাকি। এখন সিআইডিকেও দেব।