রাশিদ রিয়াজ : ব্যাংক অব আমেরিকার বিশ্লেষকরা আভাস দিয়ে বলছেন কোভিড মহামারীর পর বিশ্বঅর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যে ব্যাপক প্রচেষ্টা শুরু হচ্ছে তার চাহিদা পূরণ করতে ২০১৪ সালের দরে ফিরে যেতে পারে প্রতি ব্যারেলের মূল্য। তবে হঠাৎ করেই নয় আগামী কয়েক বছরে তেলের মূল্য ফের আগের মূল্যে চলে যেতে পারে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ বিশ্বে কোভিড টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর তেলের দর ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে ৬৩ ডলার ব্যারেলে দাঁড়িয়েছে। ব্লুমবার্গের কাছে ব্যাংক অব আমেরিকানের বিশ্লেষকরা আরো জানান, বৈশি^ক অর্থনীতিতে উদ্দীপনা ফিরে আসার আভাস মিলছে, এ বছরের মাঝামাঝি বা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৭০ ডলার ছাড়িয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। অবশ্য টেক্সাসে যে প্রচণ্ড শীত ও তুষার ঝড় চলছে তাতে সেখানকার তেলক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দর ব্যারেলে ৬৭ ডলারের বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এটা করোনাভাইরাসের পর সর্বোচ্চ দর।
এদিকে শুধু ব্যাংক অব আমেরিকা নয় আজারবাইজানের সোকার ট্রেডিং বলছে এ বছর শেষ হবার আগেই তেলের মূল্য ব্যারেলে ৮০ ডলার এবং আগামী ১৮ থেকে ২৪ মাসে তা ১শ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত সপ্তাহে গোল্ডম্যান স্যাক্স তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া দর ১০ ডলার বৃদ্ধি পাওয়ার আভাস দিয়েছিল। এখন গোল্ডম্যান বলছে আগামী ত্রৈমাসিকে ৭০ ও তৃতীয় প্রান্তিকে তা ব্যারেলে ৭৫ ডলারে দাঁড়াবে। ২০১৪ সালে তেলের দর ১শ ডলার ছাড়িয়ে গেলে সৌদি আরব ও রাশিয়ার মত শীর্ষ তেল উৎপাদক দেশ এর মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু কোভিড মহামারীর পর তেলের দর ব্যাপক পতন ঘটার পর ফের তা বাড়তে শুরু করলে এধরনের পদক্ষেপ সহসা দেখা নাও যেতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। কারণ তেল নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো ইতিমধ্যে মহামারীতে তেল খাতে বিপুল পরিমান লোকসান দিয়েছে। তেলের বিকল্প উৎস হিসেবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের জন্যে অর্থাৎ পরিবেশ বান্ধব সবুজ জালানির অনুসন্ধানে বিনিয়োগ হতে শুরু করলেও সহসা তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কাটবে না বলেই তারা মনে করছেন।
এছাড়া একতরফাভাবে সৌদি আরব ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দিনে তেলের উৎপাদন ১০ লাখ ব্যারেল হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরফলে বিনিয়োগ ব্যাংক ও তেল ব্যবসায়ীরা বলছেন তেলের দর আরো বাড়বে। সৌদি আরব ইতিমধ্যে তেল নির্ভরতা কমাতে পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। মর্গান স্ট্যানলি আভাস দিয়ে বলছে অন্তত আগামী ত্রৈমাসিকে তেলের মূল্য গত ২০০০ সালের দরে ফিরে যেতে পারে। আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে কোভিড মহামারী পরিস্থিতির আরো উন্নতি ঘটবে বলে আশা করছে বলে মনে করছেন মর্গান স্ট্যানলি। ট্রাফিগারা গ্রুপ বলছে টেক্সাসে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রিফাইনারিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এশিয়ার দেশগুলো থেকে তেল যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এও সাম্প্রতিক দর বৃদ্ধির আরেক কারণ।এরই মধ্যে রাশিয়া ও সৌদি আরব তেলের দর ও উৎপাদন নিয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। রাশিয়া তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চাইলেও সৌদি আরব তা বৃদ্ধি করতে রাজি নয়। এরপর ওপেকের বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সদস্য দেশগুলো।
বিশ্ববাজারে তেলের দরের ওপর নজর রাখে এমন এক সংস্থা এ্যাক্সি’র গ্লোবাল চিফ স্টিফেন ইনেস বলেছেন বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন তেলের দর আরো বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে তেলের দর বাড়ছে কারণ স্বাভাবিক চাহিদার চেয়ে তেলের সরবরাহ এখনো অনেক কম রয়েছে। এপর্যন্ত দিনে বিশে^ তেলের চাহিদা রয়েছে ২.৮ ব্যারেল এবং বছর জুড়েই মোটামুটি এ হার বজায় থাকবে। ট্রাফিগারা’র তেল ব্যবসার সহ প্রধান বেন লাককক বলেন টেক্সাসে যে প্রতিকূল আবহাওয়া চলছে তাতে ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল কম উৎপাদিত হওয়ার পাশাপাশি ৬ মিলিয়ন তেল পরিশোধন করা সম্ভব হয়নি। এতেই গত ১৩ মাসে তেলের দর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে।