দীপক চৌধুরী: এদেশের শক্তিধর গোষ্ঠীর হঠাৎ নড়ে ওঠার কারণ ক্রমেই রহস্যময় হয়ে উঠেছে। অবশ্য এরই মধ্যে কিছু কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে। আল-জাজিরা আর ইকনোমিস্ট যা প্রচার করেছে তাতে সত্যের বদলে মিথ্যার গল্পে ঠাসা তথ্য এদেশের মানুষকে গেলানোর চেষ্টা। যদিও তা সফল হয়নি। তবে হ্যাঁ, সাময়িকভাবে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলেছে। জনগণ না চাইলে ষড়যন্ত্র করে কী ক্ষমতায় আসা যায়! ‘ওয়ান ইলেভেনে’র পর দেশে অবাধ, সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে পারেনি।
মসরকার গঠনের দু’মাসের ভেতর প্রথম ষড়যন্ত্র চলেছিল পিলখানায়। ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতের মাধ্যমে। কী রকম ভয়ংকর দিনগুলো গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর মানবতার অপরাধে শাস্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা গেছে’ গুজব ছড়িয়ে কী রকম তাণ্ডব চলল দেশে তা কল্পনার বাইরে। নিরীহ মানুষ, গাড়িচালক, ট্রাক-ড্রাইভারতো আছেই, এছাড়া পুলিশ সদস্যদের হত্যার মাধ্যমে নারকীয় তাণ্ডব শুরু করেছিল ওরা। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সেইসব অন্ধকার দিনগুলোর কথা ভুলে যায়নি। আর নির্বাচন নিয়ে কথা শোনা যাচ্ছে গত এক যুগ ধরেই। বিএনপিরমুখে নির্বাচনের অভিযোগ কী মানায়? ইা, মানায় না। দেশের নির্বাচনব্যবস্থায় সবচেয়ে আজ্ঞাবহ ও বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন ছিল আজিজ কমিশন এটা কী বিএনপি ভুলে গেছে! দলটি ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। এখন দলটির কিছু নেতা সমাবেশ করার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখ রাস্তা বেছে নিয়েছেন। অথচ দলটির জনসমর্থন এতো তলানিতে নেমেছে তাতো দস্তুর মতো দুশ্চিন্তার কারণ। কর্মী-সমর্থকদের ‘খরা’ চলছে যেনো। সেদিন প্রেসক্লাবের সম্মুখ রাস্তার এক সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য পুলিশি ব্যারিকেডের কড়া সমালোচনা করেছেন।
পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা এভাবে কি আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে পারবেন?’ কী রকম হাস্যকর কথা-বার্তা। সেনাছাউনিতে যে দলটির জন্ম, দল গঠন করতে জনগণের বিরুদ্ধে ‘ঢাল’ হিসেবে যে দলটি অতীতে পুলিশ-বিডিআরকে ব্যবহার করেছে তাদের মুখে এসব কথা কী মানায়! বিএনপি-জামায়াত সরকারের নির্দেশিত একদল পুলিশের কাছ থেকে গৃহবধূ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা রেহাই পাননি। প্রকাশ্য রাজপথেও রক্ষা পাননি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী, প্রয়াত সিনিয়র নেতা ও সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সিনিয়র নেত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনসহ অসংখ্য নেতানেত্রী।
বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের ক্ষমতার চেয়ারে বসাতে শক্তিধর গোষ্ঠীসহ যারা পুলিশ সদস্যদের ‘হত্যা’ করেছিল তারা এখন পুলিশকেই হুমকি দিচ্ছে। সেদিন দাঁড়িয়ে শুনছিলাম, উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য বলেছেন, ‘এই সরকারকে আর নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তার আগেই এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।’ আমি বলি, পুলিশ তো জনগণের অংশ। ধ্বংস করা আর জ¦ালাও-পোড়াও রাজনীতির নামে জনগণের সম্পদ রক্ষা করতে পুলিশ তো অ্যাকশনে যেতে পারেই। শেখ হাসিনার সরকারকে পুলিশ ক্ষমতায় রাখবে কেন? জনগণ ক্ষমতায় বসিয়েছে, জনগণই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দেবে। অশুভ চক্রান্তের মৃত্যু হবে।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক