শাহজালাল ভূঞা: [২] অবহেলা আর অযত্নে ধীরে ধীরে দর্শনার্থী ও পাঠক শুন্য হয়ে যেতে বসেছে ফেনীর ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থাগার। নামে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর থাকলেও প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পরও ভাষা শহীদ সালামের একটি পোট্রেট ছবি ছাড়া নেই কোনো স্মৃতি চিহ্ন। আর গ্রন্থাগারটিতে যুগোপযোগী বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর বই না থাকায় হতাশ হচ্ছেন সীমিত হারে আসা পাঠকসহ দর্শনার্থীরা।
[৩] স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু বছরে একদিন ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রভাত ফেরী ও ভাষা দিবসে আলোচনা সভায় জন-প্রতিনিধি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানা আশ্বাস নিয়ে হাজির হলেও বছরের বাকি সময় খবর রাখে না কেউ।
[৪] ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার মাতুভূঁঞা ইউনিয়নের সালামের গ্রামের বাড়ির পাশে ১২ শতক জমির ওপর প্রায় ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৮ সালে সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার নির্মাণ করা হয়। নামেই গ্রন্থাগার থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদ্বোধন সময় সংগ্রহকৃত বই দিয়ে চলছে কার্যক্রম। দীর্ঘ এক যুগেও যোগ হয়নি নতুন কোনো যুগোপযোগী বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর বই।
[৫] জনগণের দাবির প্রক্ষিতে স্থানীয় লক্ষণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদালয়টি শুধু মুখে আর ভবনের দেয়ালে ভাষা শহীদ সালামের নামে নামকরণ করা হয় কিন্তু নানা জটিলতায় সরকারি দলিল দস্তাবেজে এখনো লক্ষণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই রয়ে গেছে। এছাড়া ভাষা শহীদ সালামের নামে জেলা পরিষদের কম্পাউন্ডে একটি মিলনায়তন প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে ভাষা শহীদ সালামের নামে নামকরণকৃত ফেনী জেলা শহরের একমাত্র ’ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়ামটিও এখনো জাতীয় মানে রূপ পায়নি।
[৬] ভাষা শহীদ সালামের ছোট ভাই আবদুল করিম সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, সালামের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর নামে সালামনগরে প্রতিষ্ঠা করা হোক একটি উচ্চ বিদ্যালয়। যাতে এই গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষার পর ঝরে না পড়ে গ্রামেই মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ পায়।
[৭] এছাড়া এখানে একটি পার্ক স্থাপনসহ সালাম জাদুঘরকে নান্দনিক সৌন্দয্য বিকশিত করে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য দাবি স্থানীয়দের। যাতে ভ্রমণপিপাসুরা ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থাগার দেখতে এসে পার্কে কিছুটা সময় কাটাতে পারে। কারণ যাদুঘর এলাকায় দর্শনার্থীদের বসার বা বিশ্রামের কোনো ব্যবস্থা নেই।
[৮] ভাষা শহীদ সালাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আখিঁ রানী দাশ বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদালয়টি শুধু মুখেই ভাষা শহীদ সালামের নামে নামকরণ নয়, সরকারি দলিল দস্তাবেজে এখনো সালামের নামে বিদ্যালটির নামকরণ করা হয়নি।
[৯] সালামের স্মৃতিরক্ষায় সালাম জাদুঘর সন্নিকটে মাতুভূঁঞা এলাকায় বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ভাষা শহীদ সালাম মেমোরিয়াল কলেজ। উক্ত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কায়েশ রিপন বলেন, কলেজটি সরকারিকরণের উপযোগী পরিবেশ আছে, তাই আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি দাবি করছি কলেজটিকে দ্রুত সরকারিকরণ করা হোক।
[১০] ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজমান বলেন, ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি যাদুঘর ও লাইব্রেরিতে যে বইয়ের স্বল্পতা আছে তা আমরা অবগত আছি। তবে ক্রমান্বয়ে তা পূরণ করা হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো প্রয়োজনীয় ভূমি পাওয়া যায়নি।
[১১] শুধু আশ্বাস নয়, নতুন প্রজন্মকে ভাষা শহীদদের সম্পর্কে জানান, দিতে কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নিবে এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের। সম্পাদনা: হ্যাপি