নিজুম মজুমদার: এবার একটু আওয়ামী লীগের দিকে মুখ ফেরানো যাক। ফ্রিডম পার্টির যেই পাগলা মিজান ওরফে হাবিবুর রহমান ওরফে মিজানুর ১৯৮৯ সালে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসা লক্ষ্য করে গুলি আর বোমা ছুঁড়লো, সেই পাগলা মিজান একটা দীর্ঘ সময় ধরে মোহাম্মদপুরে যুবলীগের নেতা হিসেবেই রাজত্ব করেছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে তা সম্ভব? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান থেকে শুরু করে অসংখ্য নেতা কিংবা কর্মীর তো এটা অজানা নয়।
তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করা একটা সন্ত্রাসী যার নামে ওই মামলা পেন্ডিং ছিলো এতোটা বছর ধরে, তার বিরুদ্ধে দল কেন ব্যবস্থা নেয়নি? দলের সভানেত্রীকে খুন করতে যাওয়া সন্ত্রাসী কীভাবে যুবলীগের পদে ছিলো এতোটা দিন? যদিও এখন সে জেলে রয়েছে, কিন্তু গ্রেফতারের আগে তো সে লম্বা সময় সার্ভ করেছে এ দলকে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সেটি কী করে হলো?
খন্দকার মোশতাককে না হয় আমাদের ফোরফাদার্সরা চিনতে পারেননি, কিন্তু এসব পাগলা-ছাগলা মিজানদের তো সবাই চেনে। তাহলে কেন পালছেন তাদের? কী জবাব এসবের? আল-জাজিরার ডকুমেন্টারির পর আওয়ামী লীগের থিঙ্কট্যাংকের কী সামান্যতম সময় হয়নি, এ পুরো ব্যাপারটি নিয়ে একটু হোমওয়ার্ক করা? পুরো অনলাইন জগতে এক আমি নিঝুম মজুমদার ৩৯ মিনিটের ভিডিও বানিয়েছি তাদের সমস্ত চুরি-চামারি আর মিথ্যাচার নিয়ে। অমি রহমান পিয়াল লিখেছেন।
এছাড়াও কয়েকজন গুটি কয়েক ব্যাক্তি ছাড়া তথ্য আর প্রমাণ নিয়ে আওয়ামী লীগের এই এতো বড় বড় থিঙ্ক-ট্যাংকরা কী করেছেন তাহলে? আমি রাত আর দিন নেই টকশোতে গেছি, নিজে ভিডিও বানিয়েছি, লিখেছি এবং সবাইকে জানিয়েছি যে আল-জাজিরার হাত ধরে কী প্রোপাগান্ডা চলছে, কীভাবে আমাদের সেনাবাহিনীকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে, কীভাবে একটা সামরিক ক্যু-এর সমস্ত চেষ্টা চলছে।
আমি তো আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী নই। আমি তো দলের কোনো নেতা না কিংবা সামান্যতম দলের সদস্যপদও হোল্ড করি না। এগুলো আমার দায়িত্বের মধ্যেও পরে না। আমি যা করেছি তার পুরোটুকুই করেছি বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি দায় থেকে, পুরোটাই করেছি একটি ষড়যন্ত্রকে রুখে দেওয়ার জন্য। কিন্তু একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল হিসেবে আমি কিংবা অমি রহমান পিয়াল কিংবা অন্য ব্যক্তি আমরা তো খুবই কমই ক্ষমতাশালী। আমি তো এ কাজগুলোর জন্য অর্থ পাই না, আমি তো এগুলোর জন্য বেনিফিটেড নই। যা করছি তা সত্যকে সামনে আনবার জন্য করেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কিংবা ছাত্র লীগের এতো এতো মেধাবী ছেলে-মেয়েদের কেন এ অনলাইন প্রোপাগান্ডায় আজও ডিসিপ্লিন্ড ওয়েতে আমরা সংঘবদ্ধ হতে দেখিনি? এ ব্যর্থতা কার? এটি তো কেবল শুরু।
সামনের ইলেকশনের আগে এ ষড়যন্ত্রকারীরা এমন সব ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে, যেটা হয়তো আমাদের কল্পনার বাইরে। আজকে আমার কাছে কয়েকটা ডকুমেন্ট এসেছে যেখানে দেখতে পাচ্ছি নেত্র নিউজ পরিষ্কারভাবে সিআইএ ব্যাকড একটা সংস্থা চালাচ্ছে। আমি এসব দেখে হতভম্ব হয়েছি। কিন্তু সে হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি আসলে কোথায়? ডক্টর গওহর রিজভী ঠিক কার অনুমতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে রিপ্রেজেন্ট করেন? তার নেই কোনো হোম ওয়ার্ক, নেই তার আইন সম্পর্কে এক বিন্দু ধারণা, নেই কারেন্ট পলিটিক্যাল ইস্যুতে পড়াশোনা। একটা আপাদমস্তক একাডেমিক লোক, যার বাংলাদেশের কারেন্ট এফেয়ার্স সম্পর্কে কোনো প্রস্তুতি নেই, অথচ তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ডয়চে ভেলের ক্ষুধার্থ টিম সেবাস্তিয়ানের সামনে, কিংবা আল-জাজিরার মেহেদির সামনে। এ ভদ্রলোক এটিও জানেন না যে শহীদুল হকের এজাহারে কী রয়েছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কী কী ধারা রয়েছে। কিছুই তিনি জানেন না।
অন্যদিকে ভারতের কংগ্রেসের শশী থারুরের কথা ধরেন। শশীকে দেখলে একধরনের দীর্ঘঃশ্বাস বের হয়ে আসে বুক থেকে। আমরা কেন পারলাম না একটা শশীকে তৈরি করতে? এ ব্যর্থতা কার? আমি এসব অনুষ্ঠান দেখেছি আর বসে বসে হাত নিশপিশ করেছি। শুধু আফসোস করেছি এ বলে যে, আমি যদি থাকতে পারতাম ওই শো-টিতে। কিন্তু সেগুলো তো আর বাস্তব নয়। বাস্তবে যারা পদে আছেন তারা এতো আনেফিশিয়েন্ট হলে, এতো করুণ অবস্থায় থাকলে আমি বলছি, বড় বিপদ অপেক্ষা করছে আওয়ামী লীগের জন্য।
আমাদের কী একটি ছেলে কিংবা মেয়ে নেই কিংবা এমন কোনো ইউনিট নেই যেখানে একটা ট্রেইন্ড টিম থাকবে শুধু টিভির টক্সশৌজ গুলোর জন্য? খুব ভালো ইংরেজি বলতে পারে, এমনকি কেউ নেই? এ যে যুবলীগের এতো মেধাবী একটা প্যানেল আমি এবার দেখলাম, কী করেছেন তারা আল-জাজিরা ইস্যুতে? কতোটা তথ্য আওয়ামী লীগের কিংবা যুবলীগের কিংবা ছাত্রলীগের প্রচার সেল নিয়ে আসতে পেরেছে? সিআরআই-ও তো একটা দীর্ঘ সময় কাজ করেছে গবেষণা ক্ষেত্রে। কী করেছে তারা এ ইস্যুতে? ফেসবুকে বিরোধী শিবির ফ্যাক্ট চেক নামে নানা অর্গানাইজেশন বানিয়ে রেডি করেছে নিজেদের। ইলেকশনের আগে আগে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে আওয়ামী লীগের অ্যাক্টিভিস্টদের উপর। আমাদের আইডি, পেজ সব সমানে রিপোর্টেড হচ্ছে। আমি সবকিছু দেখে খুব বিরক্ত ও হতাশ।
গত দুইটা সপ্তাহ ধরে আমার নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, ঘুম নেই। আমি টানা কাজ করেছি। কেন করেছি? কার জন্য করেছি এসব? কীসের জন্য করেছি? সিমপ্লি বঙ্গবন্ধুকন্যার পাশে দাঁড়িয়েছি সমস্ত ভালোবাসা আর আনুগত্য নিয়ে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছি। কারণ আমাদের গর্বের এ বাহিনীকে ধ্বংস করবার পাঁয়তারা হচ্ছে বলেই মনে হয়েছে আমার। কিন্তু বিনিময়ে তো বলিনি আমাকে দুই টাকা দেন, পাঁচ টাকা দেন কিংবা সাহায্য করেন।
বিনিময়ে চেয়েছি সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নেবে, একটা ডিসিপ্লিন ওয়েতে আগাবে এ ধরনের ঘটনায়। কিন্তু আদতে কী হয়েছে? আমি অসম্ভব রকমের হতাশ। আল-জাজিরার ডিএইচএল রিসিপ্ট জালিয়াতি, নানাবিধ মিথ্যাচার এসব সবকিছু কুইক রেস্পন্স করতে পারতো কারা? আমাদের সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিংবা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এ ধীরগতি কেন?
এতোটা মিস ম্যানেজমেন্ট হলে কপালে দুর্গতি ছাড়া কিছু নেই। বুঝতে হবে ষড়যন্ত্রকারীরা কাদের টাকায় চলছে। কাদের কথায় উঠছে বসছে। আওয়ামী লীগ কী একবারও খতিয়ে দেখেনি খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরে কারা কারা জড়িত রয়েছেন, কোন কর্মী কাজ করছে গোপনে তাদের সঙ্গে? আমি বলে রাখছি আল-জাজিরার এ ডকু, একটা তবলার তুক-তাক মাত্র কিংবা ফার্স্ট স্টেপ। সামনের ইলেকশনে এ ষড়যন্ত্রকারীরা মরন কামড় দেবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি অনলাইন ও অফলাইনে একটা ডিসিপ্লিন্ড ঐক্যবদ্ধ দুর্গ গড়ে তুলতে না পারে, তাহলে আমি একটা ডার্ক ভবিষ্যৎ ছাড়া আর কিছুই দেখি না। ভেতরের এটুকুই বের হয়ে এলো। আমার মনে হয় এটুকু নিয়েই আমরা ভাবতে পারি। ফেসবুক থেকে