কামরুল আহসান: সমানে গবেষণা চুরির অভিযোগ প্রকাশিত হচ্ছে। দুঃখ তো আমার এখানেই, অত্যন্ত প্রিয় একজন নজরুলসংগীত শিল্পীও সেই অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন। আবার জানলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বয়ং ডিন অভিযুক্ত। এতে ছিঁচকে চোররা নৈতিকভাবে সমর্থন পাবে। তারা বলতে পারবে তোমরা শিক্ষিত লোক, পুকুর চুরি করো, আর আমরা খেতে পাই না বলে দু’চারটাকা চুরি করি তাতেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়!
এটা একটা জাতির নৈতিক অধঃপতনের চূড়ান্ত। তোর পড়াশোনায় মন নেই তোর নামের আগে ড. বসানোর কী দরকার। কী হয় একটা ড-য়ে কেন এতো হীনমন্যতা। গবেষণা শুধু একটা পেশাদারী ব্যাপার নয়, এটা জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনেরও একটা অনন্য নজির। একটা বিষয়ে সর্বোচ্চ দক্ষ হয়ে ওঠা, ওই বিষয়টার প্রতি ভালোবাসা থাকা ছাড়া সেটা কীভাবে অর্জন সম্ভব? এটা এক প্রকার আবিষ্কার, অন্যে যা দেখেনি আমি তা আবিষ্কার করে দেখাব। অসামান্য এক শৈল্পিক প্রক্রিয়া। দিঘির গভীরে ডুব দিয়ে লুকানো সোনা তুলে আনার মতো বিস্ময়কর ঘটনা। একটা গবেষণাপত্রের সঙ্গে প্রকাশিত হয় একজন ব্যক্তির ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা। গবেষণা চুরির অর্থ হচ্ছে নিজের সমস্ত ব্যক্তিত্ব জলাঞ্জলি দেওয়া। নিজের রুচিবোধ ডাস্টবিনে নিয়ে ফেলা।
গবেষণা তো গবেষণা, এই যে এতো বছর পত্রিকায় কাজ করলাম, কোনোদিন অন্যের একটা লাইনও নিজের নামের মারিনি। হয়তো তথ্যটা নিয়েছি, কিন্তু বিষয়-বাক্য নিজের মতো সাজিয়েছি। কেউ ধরবে না জেনেও হুবহু অন্যের কথা মেরে দিতে কেমন যেন ব্যক্তিত্বে লাগে। ব্যক্তিত্ব মানেই হচ্ছে নিজের একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তৈরি করে নেওয়া। এর জন্য প্রাজ্ঞতা প্রয়োজন। এই যে নকলবাজ একটা জাতি গড়ে উঠছে, শুধু চোর গবেষকরা নন, আরও অনেক কিছুতেই অনেকের চুরি-চামারি দেখি, এর মানে হচ্ছে একটা ব্যক্তিত্বহীন জাতি গড়ে উঠছে। বিষয়টা সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তলিয়ে ভাবলে ব্যাপারটা ভয়াবহ। ফেসবুক থেকে