শিরোনাম

প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৫৩ দুপুর
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৫৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটি! আইনের ফাঁকে ছাড় পায় ধর্ষক

ডেস্ক রিপোর্ট: ছেলেটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মেয়েটির। বিশ্বাস করে একসঙ্গে বসবাসও করে তিন মাস। এর ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে মেয়েটি। একদিন তাকে ফেলে পালিয়ে যায় সেই কথিত প্রেমিক। এখন মেয়েটির পরিবার চাচ্ছে ছেলেটির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করতে। এ জন্য মেডিক্যাল রিপোর্ট সংগ্রহ করতে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। এখন মেয়েটির একটাই আকুতি, ‘আমি ন্যায়বিচার চাই।’

আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, সম্মতি ছাড়া বা ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণামূলকভাবে রাজি করিয়ে কারো সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে তা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে। তবে এমন ঘটনায় প্রতারণা হয়েছে নাকি স্বেচ্ছায় হয়েছে—এ প্রশ্নও দাঁড়ায় সামনে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়েরে দেরি হওয়া, সঠিকভাবে সঠিক সময়ে আলামত সংরক্ষণ না করা অর্থাৎ পরীক্ষার আগেই ধর্ষণের শিকার নারীর দেহ, পোশাকসহ আলামত ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলা, ফরেনসিক পরীক্ষায় দুর্বলতা, অভিযোগের সপক্ষে জোরালো সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাব বা ভয়ে-চাপে সাক্ষী অনুপস্থিত থাকা, মামলার তদন্তে পুলিশের অবহেলা, অদক্ষতা, দুর্বলতা বা সঠিক তদন্ত না হওয়ায় রেহাই পেয়ে যায় ধর্ষণে অভিযুক্তরা, বিচার পায় না ধর্ষণের শিকার নারীরা। আবার অনেক ক্ষেত্রে কিছু সাজানো মামলার কারণে তদন্ত কর্মকর্তা থেকে আদালত—সবখানেই সন্দেহের মধ্যে পড়ে বিচার বঞ্চিত হয় ভুক্তভোগী। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, দেশে যে পরিমাণ ধর্ষণের মামলা দায়ের হচ্ছে, তার মধ্যে ৪ শতাংশেরও কম মামলার বিচার আলোর মুখ দেখছে।

গত বছর একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলনের মুখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়। কঠোর আইন থাকলেও মামলা করা থেকে শুরু করে তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি কারণে মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দশক আগে এই আইনটি প্রণয়ন করা হলেও এখনো এর কোনো বিধিমালা করা হয়নি। অপরাধ ও বিচার সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব বিষয়ে ব্যাখ্যা বা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকে বিধিমালায়, যা আইনে থাকে না। সে জন্য প্রতিটি আইনের ক্ষেত্রেই বিধিমালা প্রয়োজন হয়। বিধিমালা না থাকায় ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মামলায় একেক বিচারক একেকভাবে বিচার করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদন্ত, আলামত সংরক্ষণ ও ফরেনসিক পরীক্ষায় সচেতনতা এবং দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। আইনের সঙ্গে বিধিমালা করে বিষয়গুলো স্পষ্ট করার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, সাজানো মামলা শনাক্তেরও কিছু কৌশল জরুরি। আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান থাকায় এখন প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে সাজানো মামলা বাড়ার শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় এক হাজার ৬২৭ নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয় ৫৩ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে ১৪ জন। ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয় এক হাজার ৪১৩ জন নারী, আর ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে ছয় হাজার ৯০০ নারী ও শিশু ধর্ষণের মামলা হয়েছে; ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ৭০০।

আইন সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিগ্যালএইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পরিসংখ্যান মতে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের ৫৩৬টি মামলা তদারকি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ১৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ১৯টির মধ্যে শাস্তির রায় হয়েছে চারটির। বর্তমানে চলমান আছে ৫১৭টি। ব্লাস্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিফাত-ই-নূর খানম বলেন, ‘আমরা কেসগুলো থেকে দেখেছি, দীর্ঘদিন মামলা ঝুলে থাকা, সাক্ষীর নিরাপত্তা, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কারণে মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে বা ভিকটিম মামলা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না।’

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসা সহায়তা নিতে আসে ২২ হাজার ৩৮৬ জন নারী। এর ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে, যার মধ্যে রায় ঘোষণার হার ৩.৬৬ শতাংশ। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়ের করা ২৫টি ধর্ষণ মামলার মধ্যে অভিযুক্ত আসামি ৩৪ জন। এর মধ্যে অভিযুক্ত আসামি ২৭ জন জামিনে আছে, দুজন প্রভাবশালীর ছত্রচ্ছায়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং পাঁচজন কারাগারে আছে। ২৫টি মামলার মধ্যে দুটি মামলা একদম নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে। চারটি মামলার নথি পাওয়াই যাচ্ছে না। যে ২০টির চার্জশিট হয়েছে, সেগুলোর ছয় থেকে ২৩ বার শুনানি হয়েছে। একটি মামলার এখনো মেডিকো-লিগ্যাল টেস্ট হয়নি। দেখা গেছে বেশির ভাগ সাক্ষী হাজির না হওয়ায় এসব মামলার তারিখ পিছিয়ে গেছে। অভিভাবকরা হতাশ হয়ে আর কোর্টে যেতে চাইছেন না। তদন্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমা ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি। এ ছাড়া পাবলিক প্রসিকিউটর সাক্ষীকে মামলার তারিখে আদালতে হাজির করানোর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেননি।

ব্লাস্টের সালিস কর্মকর্তা রাহিমা খাতুন বলেন, ‘মামলা ঝুলে থাকার কারণ আদালতের পদক্ষেপের অভাব; ব্যক্তিগত সচেতনতার অভাব এবং রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের চাপ। আর মামলা না করার কারণ হলো বাদীর হতাশা, অর্থনৈতিক কারণ; আবার অনেকে ধৈর্য ধরে যুদ্ধ করার মানসিকতাও হারিয়ে ফেলে। সামাজিক লোকলজ্জা এবং ধর্ষিতা বা বাদীর অজ্ঞতাও দায়ী।’

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘ধর্ষণের পর মেয়েটি এক পর্যায়ে আইনি লড়াই করতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। তখনই সমঝোতায় বাধ্য হয়। এ জন্য পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা দরকার। আমরা আশঙ্কায় আছি, আদালত বিচারের ক্ষেত্রে কোনো অপশন না থাকায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগে অনেক বেশি বিবেচনা করেন। তখন ধর্ষকও বেনিফিট অব ডাউট পেয়ে যেতে পারে। বিচারব্যবস্থার সবচেয়ে বড় গলদ আছে তদন্ত আর প্রমাণে। দুই-চারটি ঘটনার কারণে পুলিশ তদন্ত না করেই প্রথমে বলে দেয় মিথ্যা মামলা। ঠিকমতো এজাহার না হলে ওই মামলা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ধর্ষিতার মেডিক্যাল পরীক্ষায়ও সময় নেয় পুলিশ। এতে আলামত নষ্ট হয়ে যায়। ১৫ দিন আগে ভারতে একটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, থানায় গেলে পুলিশকে ধর্ষিতার দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের দেশেও এটা হতে পারে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘ধর্ষণের সব ঘটনাই তদন্তকালে সঠিক বা সত্য হিসেবে পাওয়া যায় না। তদন্তে যেমন পাওয়া যায় সেভাবেই একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। ঘটনার পরপরই ধর্ষণের ঘটনাস্থল পরিপাটি করে ফেলে, ধর্ষিতার গোসল ও তার পোশাকাদি পরিষ্কার করে ফেলে, ধর্ষণের ঘটনার বহুদিন পর অভিযোগ দায়ের করা; মামলা-পরবর্তী সময়ে সামাজিকভাবে মীমাংসার কারণে সাক্ষী খুঁজে না পাওয়া ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই একজন তদন্ত কর্মকর্তাকে নিরলস পরিশ্রম করে মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজে বের করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়।’

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ধর্ষণের মামলা তদন্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সাজানো মামলা। গ্রামাঞ্চলে জমিজমা নিয়ে বিরোধের কারণে ধর্ষণের কিছু মিথ্যা মামলা হয়। প্রেমঘটিত কারণে অমিলে ধর্ষণ মামলা হয়। পরে মিল হয়ে যায়। এসব কারণে প্রাথমিকভাবে কোনটি আসল আর কোনটি নকল তা বোঝা যায় না। যাচাই করতে গিয়ে প্রকৃত ভিকটিমরাও সন্দেহে পড়ে। আবার সঠিক বলে ধারণা করা হলেও পরে প্রমাণ করা যায় না।’

সাজানো মামলায় পড়ছে প্রভাব : ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর গাজীপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে সেময়েকে ধর্ষণের অভিযোগে মিথ্যা মামলা করায় বাদীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। আইনজীবীরা বলছেন, এমন অনেক বিচারাধীন মামলা মিথ্যা অভিযোগে করা হয়েছে। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন আনুযায়ী, ‘সম্মতি ছাড়া অথবা ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণামূলকভাবে রাজি করিয়ে যৌন সঙ্গম হচ্ছে ধর্ষণ।’ এই ‘প্রতারণামূলক’ বিষয়টি উল্লেখ করে অনেকে মামলা করলেও সেগুলো আদালতে প্রমাণ করা যায় না। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলা দায়েরের কারণে বাদীর শাস্তির বিধান আছে। অন্য আইনে এমনটি নেই।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যখন ধর্ষণ মামলা করা হচ্ছে, তখন বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টিনএজ মেয়েকে ধর্ষণ করার বিষয়টি আলাদা। কিন্তু যখন একজন ২৫-২৮ বছর বয়সের নারী প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলে ধর্ষণ মামলা করতে আসেন তখন বিষয়টি প্রমাণ করাও সহজ নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখনো বিধিমালা প্রস্তুত হয়নি। বিধিমালা করে বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে হবে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির সমন্বয়ক বিলকিস বেগম বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেক মিথ্যা কেস আসে। মিথ্যা মামলাগুলো বেশির ভাগ সময় ব্যক্তি সম্পর্ক, প্রতারণা, সম্পর্ক ভেঙে গেলে করা হয়। অনেক সময় দুজন বিয়ে করলে মেয়ের মা-বাবা ছেলেকে ফাঁসানোর জন্যও মামলা করেন। এ ক্ষেত্রে ধর্ষণের মামলা কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ১৭ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করতেও ওসিসির শরণাপন্ন হয়েছেন এক নারী। এগুলোর কারণে আসল ভিকটিম যারা তারা বিচার পাচ্ছে না। হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।’

আলামত মেলে না বেশির ভাগই : মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক দেরিতে ভিকটিমের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয় বলে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়। মেডিক্যাল রিপোর্ট সঠিকভাবে লেখা হয় না। ভিকটিমের বয়সের সঙ্গে ধর্ষণের মামলা নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত হলেও রিপোর্টে বয়স সঠিকভাবে লেখা হয় না। হাসপাতালে ভিকটিমের বয়স নির্ধারণের ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ হাসপাতালে ডিএনএ টেস্ট করা হয় না।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘দেরিতে পরীক্ষা করা, কাপড় পুড়ে ফেলা ও ধুয়ে ফেলাই বড় সমস্যা। ফরেনসিকের কিছু কৌশল এবং ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণ হয়েছে কি না তা বের করা যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, তদন্তকারীদের ফরেনসিক পরীক্ষার ব্যাপারে সচেতন করার পাশাপাশি নারীদের বেসিক ধারণা দিতে হবে। এতে আলামত নষ্ট হওয়ার হার কমবে।’ -কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়