সুজন কৈরী: [২] ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় বৃহস্পতিবার ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে।
[৩] রাজধানীর গুলশান-২ এর ৩৭ নম্বর প্লটের ৪৫ (দক্ষিণ) ও ৯০ (উত্তর) নম্বর সড়কে ডেল্টা লাইফ টাওয়ারে অবস্থিত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের মূসক নিবন্ধন নং- ০০১৩২৩১০৩-০১০১।
[৪] ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর বলছে, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় সংস্থার সহকারী পরিচালক সায়মা পারভীনের নেতৃত্বে একটি দল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্ত করে। তদন্তের স্বার্থে দলিলাদি দাখিলের জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে তলব করেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। এরই প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা বার্ষিক সিএ রিপোর্ট, প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
[৫] প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য বিমার উপর ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৪১১ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। এতে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৯ কোটি ৮০ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৯ টাকার ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়। ফাঁকিকৃত উপর ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১১ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৮ টাকা সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
[৬] তদন্ত অনুযায়ী নিরীক্ষা মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট মোতাবেক উৎসে ভ্যাট ৬ কোটি ৩৪ কোটি ৭ হাজার ৮০৩ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিলো ১১ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার ২৪৯ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৫ হাজার ৪৪৬ টাকার ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। উৎসে কর্তনের উপর প্রযোজ্য ফাঁকিকৃত এই ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৯ টাকা সুদ আদায়যোগ্য হবে।
[৭] অপরদিকে, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ১ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৮০ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিলো ৩ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার ১০১ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকার ফাঁকি উৎঘাটন করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। ফাঁকি দেয়া এই ভ্যাটের উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ২ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮১ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য হবে।
[৮] ভ্যাট গোয়োন্দা কর্তৃপক্ষ বলছে, তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১৬ কোটি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৯০৫ টাকা এবং সুদ বাবদ ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৬২ হাজার ৮২৮ টাকা। মোট ৩৫ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৩ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। তদন্তে আরও দেখা যায়, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরণের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। যা ভ্যাট আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে উদঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরে পাঠানো হবে।
আপনার মতামত লিখুন :