সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : [২] সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতকের ফেলে যাওয়া মাকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার সাতক্ষীরা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ মফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।
[৩] আদালতে ওই কিশোরী মা জানান, মোটরসাইকেলে যাতায়াতের সময় আনারুলের সঙ্গে পরিচয় হয় হীরার। নিজের স্ত্রী থাকার কথা গোপন করে বিয়ের প্রলোভনে আনারুল হীরাকে ভোগ করে। একপর্যায়ে হীরা অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিয়ের কথা বললেও আনারুল অস্বীকার করে। লোকলজ্জা ও গ্রামবাসীর ভয়ে হীরা পালিয়ে আশ্রয় নেন তার বোনের বাড়িতে।
[৪] একপর্যায়ে হীরা বোনের সহায়তায় ভর্তি হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে জন্ম নেয় পুত্র সন্তান। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে হীরা মোবাইলে আনারুলকে বলে তাকে বিয়ে না করলেও একটিবার অন্তত তার সন্তানটিকে দেখে যাওয়ার। আনারুল মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে বলে, আমি আসব না, তোর পথ তুই দেখে নে...। সমাজ, পরিবার, সম্মানের কথা ভেবে সন্তান জন্ম নেওয়ার এক ঘণ্টা পেরোনোর আগেই হাসপাতালের ডাস্টবিনে নবজাতককে ছুড়ে ফেলে পালিয়ে যান হীরা।
[৫] গত ১৭ দিন আগে এসব ঘটনা ঘটে যায় লোকচক্ষুর আড়ালেই। ঘৃণার পাথর সরিয়ে আসল ভালোবাসার খোঁজে বেরিয়ে আসে সন্তান পাগল ওই কিশোরী মা। সন্তানকে ফিরে পেতে ছুটে আসেন আদালতে।
[৬] আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের কাছে অকপটে খুলে বলেন কিশোরী প্রেমের সব কাহিনী। আর এ প্রেম কাহিনীর নায়ক হলেন,সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সদরের শাখরা কোমরপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে আনারুল ইসলাম। হীরা জানান, আনারুলই ডাস্টবিনে ফেলে রাখা সন্তানের জন্মদাতা।
[৭] আদালত সূত্র জানায়, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে শিশু কল্যাণ বোর্ড, সাতক্ষীরা সদর শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী এমন কিছু ব্যক্তির নাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পাঠান ভারপ্রাপ্ত বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের কাছে। তিনি যখন আইনের মধ্য দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন, ঠিক তখনই ওই আদালতের কাছে একটি আবেদন আসে শিশুটির গর্ভধারিণী মাতা পরিচয়দানকারী নুর নাহার পারভীন ওরফে হীরার কাছ থেকে। তিনি নিজেকে ফেলে দেওয়া ওই শিশুর মাতা পরিচয় দিয়ে আদালতকে লিখিতভাবে জানান, দেবহাটার পূর্ব কুলিয়া গ্রামের (হাল সাং- হাড়দ্দহা) আবদুর রশিদের মেয়ে তিনি। হীরা সন্তানটিকে তার নিজ জিম্মায় নিতে চান। সঙ্গে মেডিকেল কলেজ সাতক্ষীরার একটি প্রত্যয়নপত্র এবং নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও জমা দেন তিনি।
[৮] অবশেষে বিচারক শেখ মফিজুর রহমান তার আদেশে উল্লেখ করেন, যেহেতু একজন মাতা তার গর্ভজাত সন্তানের স্বাভাবিক ও আইনগত অভিভাবক, বিধায় তার কাছেই সন্তানটিকে দেওয়া কল্যাণকর ও সর্বোত্তম হবে। সে অনুযায়ী হীরার কোলেই ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন ১৭ দিন বয়সের ওই শিশুটিকে।
[৯] এ ব্যাপারে জানার জন্য হীরার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।