রাশিদ রিয়াজ : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন ছোট ছোট উস্কানি অথবা ঠাণ্ডা যুদ্ধ শুরু করা, অন্যদের প্রত্যাখ্যান, হুমকি দেওয়া বা ভয় দেখানো কেবলি বিশ^কে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেবে। দাভোসে বিশ^ অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে শি বলেন সংঘাতের শুরু মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। বিশ্বনেতৃবৃন্দকে সতর্ক করে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বের ঐক্যই করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করতে পারে। চীনের প্রেসিডেন্ট এমন এক সময়ে এ বক্তব্য রাখলেন যখন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন শি চীনকে নতুন বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থায় মূল খেলোয়াড় হিসেবে দাঁড় করাতে চান এবং যুক্তরাষ্ট্র কোভিড মহামারীতে অনেকটা নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। শি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র কিংবা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নাম উচ্চারণ করেননি কিন্তু চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় বৈশ্বিক জোটকে পুরুরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং তার বক্তব্যে সেই আভাসই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সিনহুয়া/আরটি
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করে শি বলেন দ্বন্দ্ব প্রত্যেক জাতির স্বার্থকে বিনষ্ট করছে এবং অকল্যাণ বয়ে আনবে। ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ ৬৫ শতাংশ হ্রাস করার লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে শি বলেন ২০৬০ সালে তার দেশ পুরোপুরি কার্বন মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবে। এ লক্ষ্য অর্জনে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে চীনকে। এ বক্তব্য দিয়ে শি বলেন যখন বিশ্বমানবতার স্বার্থে কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তার দেশ সেখানে অগ্রগামী ভূমিকা পালনে এগিয়ে যায়। তিনি বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যে সবধরণের বাধা অপসারণের আহবান জানান। বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে শি বলেন উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে চীন সবসময় দাঁড়াবে। করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে শি ব্যষ্টিক অর্থনীতির ওপর জোর দেন। চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন আমাদেরকে অবশ্যই মুক্ত অর্থনীতির বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে। বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে বৈষম্যমূলক ও একচেটিয়া মান, বিধি ও ব্যবস্থায় এমন বাধা সৃষ্টি না করার তাগিদ দেন যা বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে পৃথক করে তোলে।
চীনের প্রবৃদ্ধি গত বছর ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও তা ১৯৭৬ সালের পর মহামারীর বছরে সবচেয়ে কম পরিমান। তবে প্রথমবারের মত দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সর্বোচ্চ ১৬৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছর চীনের প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৯ শতাংশ। আইএমএফ বলছে কঠোর ভূ-রাজনৈতিক জলবায়ু, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপড়েন সত্ত্বেও চীন এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রথমবার চীন যুক্তরাষ্ট্রকেই ছাড়িয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে কয়েক দশকের মধ্যে মার্কিন-চীন সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযোগগুলোর অন্যত হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর দেশটি এ সম্পর্কে তথ্য দিতে বিলম্ব করায় তা আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। চীনের উহানে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও এর উৎস অনুসন্ধান প্রচেষ্টায় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। দাভোসে ওয়াল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ছিলেন জন কেরি। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্যে তার উত্তরসূরির রেখে যাওয়া চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিরসন এখন এক বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাস ছাড়াও বাণিজ্য, মিডিয়ার স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার মত নানা ইস্যু দুই দেশের সম্পর্ককে বিভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে দিয়েছে। এর আগে সর্বশেষ দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সম্মেলনে ২০১৭ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং নিজেকে মুক্ত বাণিজ্যের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।