শিরোনাম
◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারী, ২০২১, ০৭:১৮ সকাল
আপডেট : ১৩ জানুয়ারী, ২০২১, ০৭:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চাল-পেঁয়াজ নিয়ে উভয় সঙ্কট

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : গত কয়েক মাস ধরে নিত্য পণ্য দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে প্রভাবশালী থেকে বিক্রেতা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের অভিযোগ এনে বেশ কিছু পণ্য সামগ্রীর দাম ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে এই অবস্থাকে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বলে অভিহিত করা হচ্ছে। কেউ কেউ এটিকে করোনাকালে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পুষিয়ে নেওয়ার কারসাজীও বলছেন। উল্লেখযোগ্য পণ্য সামগ্রীর মধ্যে পেঁয়াজ তেল চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মূল্য বৃদ্ধির দৌড়ে ক্রেতা সাধারণদেরকে পিষ্ঠ করে চলছে। গত সেপ্টেম্বরে ভারত বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত কোনো ধরণের সময় না দিয়েই অতিরিক্ত মুনাফা করার লোভে বিক্রেতারা মজুদ ও বেশি দামে বিক্রি করার কৌশলে ক্রেতাদের পকেট কেঁটেছেন। বেশকিছু ব্যবসায়ী বিদেশে থেকে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি করা সত্যেও পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৬০-৭০ টাকার নিচে কিছুতেই নামছিলো না। সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন লাভের পর বাজারে পেঁয়াজের দাম পরতে শুরু করেছে। তাতে দেশি পেঁয়াজ উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের উপর শুল্ক বসানো শুরু হয়েছে। এর পরও পেঁয়াজ সরবরাহ এবং দাম নিয়ে দেশের সর্বত্র বড় ধরনের মূল্য ফারাক দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রামে যা ৩৫ টাকা, ঢাকায় তা ৫০-৬০ টাকা, দেশের অন্যত্রও দামের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পেঁয়াজ নিয়ে এবছর যা ঘটছে তা কেউ আশা করেনি। কেননা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত অনেক পেঁয়াজ এখনো বাজারে দেখা যাচ্ছে। দেশি এবং ভারতীয় পেঁয়াজও সয়লাভ হয়ে উঠছে। এধরনের বিশৃঙ্খল সরবরাহ ও মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তা এবং বাজারের জন্য মোটেও সহায়ক নয়। সুতরাং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এখানে যতেষ্ট পরিমাণে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সঙ্কটটি কোথায়- উৎপাদন, সরবরাহ, আমদানি এবং মজুদ করার প্রবণতার মধ্যে নাকি সবকটির সম্মিলিত অব্যাবস্থাপনার মধ্যে তা নিয়ে বাজার বিশেষজ্ঞগণ সরকারের নীতি নির্ধারক এবং কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে নির্ণয় করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। পেঁয়াজ উৎপাদনকারীদের যেমন লাভবান করতে হবে, একইভাবে ভোক্তাদেরও কেনার ক্ষমতার মধ্যে বাজার থাকতে হবে। এই বাস্তবতা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। কারো ক্ষতি যেমন নয়, কারো অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রবণতাকেও বাধাগ্রস্ত করতে হবে। আমাদের এখানে মজুদ করার প্রবণতা, বাজারে সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির মানসিকতা সব স্তরের ব্যবসায়ী এবং উৎপাদনকারীর কারো কারো মধ্যেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুতরাং বিষয়গুলোকে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা ও বুঝা এবং সমাধানের উপায় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কোনো অবস্থাতেই যেন পেঁয়াজ নিয়ে ২০১৯ সালের অনাকাক্সিক্ষত বাজার পরিস্থিতি তৈরি করা না হয়। সেটি এখনই মাথায় রাখতে হবে।

অন্যদিকে চালের বাজারমূল্য নিয়ে যে চালবাজী চলছে তাতে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের মানুষজন- করোনা ভাইরাসে যাদের আয় রোজগার এরই মধ্যে কমে গিয়েছে। অথচ বাজার থেকে চাল তাদেরই বেশি পরিমাণে ক্রয় করতে হয়- যা কেনার সামর্থ্যতা তাদের অনেকেরই নেই। সেকারণে চালের বাজার নিয়ে প্রান্তিক ও নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। সরকারের হিসাব ছিলো উৎপাদিত ধান এবং চাল দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো মজুদ করার প্রবণতা সচ্ছল কৃষকদের মধ্যেও এখন বেশ বিস্তার লাভ করেছে। চাতাল এবং সরবরাহকারীগণতো অনেক আগে থেকেই বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে মূল্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা দৃঢ় করে রেখেছে। ফলে বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি অনিয়ন্ত্রিতভাবে এই আমন মৌসুমেও অস্বাভাবিক পর্যায়ে অবস্থান করছে। চালের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ধান উৎপাদনকারীদের মধ্যেও যখন সরকারের চালের গোদামে মজুদের পরিমাণ পাঁচ লক্ষ টনের কথা জানাজানি হয়ে গেছে তখন বেশি লাভের আশা কেউই ছাড়ছে না। ফলে মজুদধারদের নানা ধরনের কারসাজীতে চালের বাজার নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য অনেকটাই কষ্টকর হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সরকার চাল আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে। সরকারও চার লক্ষ টন ভারত থেকে আমদানি করতে যাচ্ছে। আমদানিকৃত এইসব চাল দেশের বাজারে আসলে কিছুটা হয়তো দাম কমবে। তবে সবচাইতে ভালো হয় সরকার যদি আমদানিকৃত চাল খোলাবাজারে না দিয়ে প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করার উদ্যোগ গ্রহণ করতো। সরকারের উচিত সেদিকেই মনোনিবেশ করা। আগামী বুরো ধান আসার আগ পর্যন্ত প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের মানুষদের ন্যায্য মূল্যে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে বাজারে চালের দাম নিয়ে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের জন্য তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সুতরাং সরকারকে এভাবেই হয়তো চাল,পেঁয়াজ ও তেল নিয়ে বাজার যাতে বিভিন্ন মহল অস্থির করতে না পারে সেভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। লেখক পরিচিতি : শিক্ষাবিদ। অনুলেখক : আমিরুল ইসলাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়