গুলজার হোসেন উজ্জ্বল: আহমদ ছফাকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন, ‘একসময় আবিষ্কার করলাম আমাদের ছফা ভাই তার নিজস্ব অলীক জগতে বাস করতে শুরু করেছেন’। স্মৃতি থেকে লিখলাম, শব্দ প্রয়োগে এদিক ওদিক হতে পারে। তবে মূল ভাবটিকে ধরে নিলে বলা যায়, ছফাকে নিয়ে সবচেয়ে নির্মোহ, নির্মেদ, গভীর মূল্যায়ন এটাই। ছফা প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাককে অতিমানবে পরিণত করেছেন। নিজেকে সেই অতিমানবের শিষ্য সাব্যস্ত করে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে চেষ্টা করেছেন। লেইম টেকনিক। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কার্যকর।
প্রফেসর রাজ্জাকের উপর যে অলীক মাহাত্ম্য তিনি আরোপ করেছেন তার আগা মাথা নেই। ছয় দফার রচয়িতা থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের চিন্তক, কিসিঞ্জারের গুরু, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রহস্যময় ইনফ্লুয়েন্সিয়াল পুরুষ ইত্যাদি হেন কোনো দিক নেই যে দিক থেকে তিনি প্রফেসর রাজ্জাককে মহিমান্বিত করেননি।
এই কল্পকাহিনি নিঃসন্দেহে সুখপাঠ্য, গুরু-শিষ্যের সম্পর্কও রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা। বইটি বেস্ট সেলার হয়েছে৷ কারণ গড়পরতা মানুষ জ্ঞানার্জনের চেয়ে জ্ঞানীদের নিয়ে গালগল্প শুনতে বেশি পছন্দ করে৷ ফলে বইটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ আমিও মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। তবে তার চেয়ে বড় কাজ হয়েছে ইন্টেলেকচুয়াল হিসেবে ছফার গুরুত্ব বেড়েছে৷ ছফা জীবনভর কখনো তার লেখা দিয়ে, কখনো তার অ্যাক্টিভিজম দিয়ে কখনো তার বোহেমিয়ান লাইফ স্টাইল দিয়ে তার অনুরাগীদের মুগ্ধ করেছেন। ফলে তিনি যতোটা না হয়েছেন লেখক তারচেয়ে অনেক বেশি অ্যাক্টিভিস্ট, তারচেয়েও কাল্ট। তার কোনো অ্যাক্টিভিজম পূর্ণতা পায়নি। কোনো দর্শন মিনিমাম লজিক্যাল ফ্যালাসিকে অতিক্রম করতে পারেনি। কোনো কাজে তিনি ধারবাহিক ছিলেন না। হুটহাট সেন্সেশনাল সত্য কথা বলে পাঠকের মন আকৃষ্ট করেছেন। কখনো কখনো অতিকথন করেছেন। গড়পরতা পাঠক তাতেও সায় দিয়েছে।
এই ওভার রেটেড বুদ্ধিজীবীর পথ ধরেছেন হালের সলিমুল্লাহ খান। ছফাকে অতিমানব বানিয়ে নিজেকে তার ভাবশিষ্য সাব্যস্ত করে ইতোমধ্যে নিজেকে ভালই ব্র্যান্ডিং করেছেন। টেলিভিশনের টকশো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ একইরকম লজিক্যাল ফ্যালাসি নিয়ে কথা বলছেন।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। তাঁর বাগ্মিতা অসাধারণ। কিন্তু তার এসব নিছক দক্ষতায় পরিণত হয়েছে তার বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা আর নিজের ফলোয়ার বাড়ানোর লেইম টেকনিকের কারণে। সাত বছর আগের সলিমুল্লাহ আর আজকের সলিমুল্লাহর ভেতর পার্থক্য বিস্তর। দিন দিন অতিমানব আর কাল্টে পরিণত হচ্ছেন। তাঁর ভক্তদের দেখলে বুঝা যায় তাঁর গন্তব্য কোন পথে। আমি আশঙ্কা করছি সামনে হয়ত সলিমুল্লাহর সমালোচনা করলে কল্লা হারানোরও সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। নয়তো নিদেন পক্ষে জুটতে পারে নাস্তিক মুরতাদ আখ্যা। জনপ্রিয়তা এক আশ্চর্য মাদক।
আপনার মতামত লিখুন :