শিরোনাম
◈ টানা দুই হা‌রের পর জ‌য়ে ফির‌লো মেসির ইন্টার মায়ামি ◈ করমর্দন বিতর্কে সুনীল গাভাস্কার - ক্রীড়া এবং রাজনীতি কখনোই আলাদা ছিল না  ◈ সীমানা পুনর্নিধারণ নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে নির্বাচন কমিশন ◈ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হবে গঠনমূলক ও ভবিষ্যতমুখী: হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ আইসিসির শাস্তির ভ‌য়ে এশিয়া কাপ বয়কট কর‌ছে না পাকিস্তান ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৮:০১ সকাল
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৮:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশকে একটি পশ্চাৎপদ এবং প্রথাগত অনুন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশ-বিদেশে ভাবা কিংবা অভিহিত করা হতো। তখন আমরা ভাবতে পারিনি খুব নিকট ভবিষ্যতে আমাদের ভাগ্যের বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হবে। আমরা এনালগ পদ্ধতির জীবন ব্যবস্থার বাইরে খুব একটা বের হয়ে আসতে পারবো কিনা। এটি ভাববার প্রধান কারণ ছিলো, যন্ত্র-প্রযুক্তি, উৎপাদন ব্যবস্থায় আধুনিক চিন্তাধারা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তখনো খুব গুরুত্ব লাভ করেনি। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ১৯৭১-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যতোটা ভিশনারি-মিশনারি পরিকল্পনা নিয়ে জাতিকে পরিবর্তিত করতে মেধা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়েছিলেন, পঁচাত্তরের পর সেটি বাধাগ্রস্ত হয়ে পরে। যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আবির্ভূত হয়েছিলেন তারা দেশ, সমাজ ও জনগণকে অতীত তথা পাকিস্তানমুখী চিন্তাধারায় আবদ্ধ করে রেখেছিলো। ফলে আমাদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিন্তাধারা খুব একটা কার্যকর ছিলো না। সে কারণে আমরা ২০ শতকের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক উন্নতিকে রাষ্ট্রীয় জীবনে কার্যকর করতে পারিনি। এসব কারণে আমাদের দেশ দ্রুত পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি।

তবে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং ১৪ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য দেশবাসীকে জানান। তখন কেউই ডিজিটাল শব্দটির সঙ্গে ততোটা পরিচিত ছিলো না। বাংলাদেশকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করার রূপকল্প প্রায় সবার কাছেই অবিশ^াস্য ছিলো। নির্বাচনে জয় লাভ করার পর সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা এবং তার সরকার অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন করার ঘোষণা দেওয়ায় বিরোধীপক্ষ বিষয়টিকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতে থাকে। কিন্তু সরকার তথ্য-প্রযুক্তির নানা উদ্ভাবনীর প্রয়োগ ঘটাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ, মোবাইল, অনলাইন, জ্বালানি, কৃষি অর্থনীতিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও কর্মসাধনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে থাকে। এর ফলে পুরাতন ব্যবস্থার কার্যকারিতা ধীরে ধীরে বাতিল হতে থাকে এবং সর্বত্র প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।

আমাদের গার্মেন্টস শিল্পসহ ওষুধ, কম্পিউটার, মোবাইল এবং উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটতে থাকে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ তরুণ নতুন ভাবে প্রশিক্ষিত হতে থাকে। প্রশিক্ষিত এসব তরুণ প্রজন্ম অল্প কয়েক বছরের মধ্যে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। এর ফলে দেশে ই-কর্মাস, ই-টেন্ডারিং তথা একবিংশ শতাব্দীর দ্রুত বিকাশশীল প্রযুক্তি আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা, গণমাধ্যম, প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্থান করে নিতে থাকে। বাংলাদেশ এর ফলে সর্বক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়নের গতিধারাকে বাস্তবে প্রয়োগ ঘটাতে শুরু করে। ডিজিটাল পদ্ধতির অন্যতম অংশ হিসেবে ভার্চ্যুয়াল ব্যবস্থা, শিক্ষা, বিচার, প্রশাসন, গণমাধ্যম ও যোগাযোগ ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে স্থান করে নিয়েছে। এখন বাংলাদেশের ১০ লক্ষ তরুণ উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হয়েছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশে উন্নত অনলাইন যোগাযোগ সম্প্রসারণ ঘটাতে অবদান রাখছে। আমাদের দেশ গার্মেন্টসসহ বেশ কয়েকটি শিল্পে দ্রুত উন্নত দুনিয়ার বাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। দেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় এগারো কোটি। মোবাইল এখন অত্যন্ত সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে গেছে। এর ফলে দেশে দারিদ্রের হার দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ রেমিটেন্স আয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর চাইতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এখন পুরোপুরি ডিজিটালভিত্তিক হয়ে উঠছে। ব্যাংক, বীমা, আন্তর্জাতিক ব্যবসাÑ বাণিজ্য যোগাযোগ প্রায় সম্পূর্ণটাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ডিজিটাল চরিত্র ধারণ করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ, নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করেছে। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। এখন সেখানে শুধু কৃষি অর্থনীতিই নয় ছোট, মাঝারি শিল্প এবং শিল্পাঞ্চলও তৈরি হচ্ছে। মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। খাদ্য উৎপাদনে প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণার প্রয়োগ ঘটছে, ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় এখন ডিজিটালাইজেশন স্বাভাবিক ব্যবস্থা হিসেবে স্থান করে নিচ্ছে।

আমাদের মাথাপিছু আয় অল্প কয়েক বছরেই দুই হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে। গড় আয়ু ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার কমে গেছে। বেকারত্ব ঘুচিয়ে অনেকেই দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান করে নিতে পারছে। ফলে বাংলাদেশকে এখন আর কেউ মান্দাতার আমলের অর্থনীতির দেশ মনে করে না। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, কর্নফুলী টানেল প্রকল্পসহ বেশকিছ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা রাখার প্রমাণ দিয়েছে। এ সবই প্রমাণ করে বালাদেশ এখন আর এনালগ নয়, বরং ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে যাচ্ছে।

লেখক : শিক্ষাবিদ। অনুলিখন : আমিরুল ইসলাম

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়