স্বপন দেব: [২] মঙ্গলবার ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শত্রুমুক্ত দিবস। ’৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মৌলভীবাজার জেলা সদর মুক্ত হয়।
[৩] এইদিন দিন মৌলভীবাজারের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে টিকতে না পেরে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। পরে শহরে মহকুমার মুনসেফ ভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা।
[৪] জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ হামলা প্রতিরোধে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকলে ডিসেম্বরের ২ তারিখ রাতে মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দর ঘাটি ও চাতলাপুর বিওপিতে হানাদারদের ওপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথভাবে আক্রমণ শুরু করে। তীব্র আক্রমণের মুখে শত্রুসেনারা টিকতে না পেরে মৌলভীবাজার শহরে তাদের ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারে ফিরে যায়।
[৫] মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী মৌলভীবাজার দখলের উদ্দেশে ৪ ডিসেম্বর বিকেলে শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কালেঙ্গা পাহাড়ে এসে জড়ো হয়। সেখানে বড়টিলা এলাকায় পাকিস্তানিদের সঙ্গে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর প্রায় ১২৮ জন সেনা শহীদ হন। ৫ ডিসেম্বর থেকে হানাদার বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর পিছু হটার ফলে ৮ ডিসেম্বর পুরো মৌলভীবাজার হানাদার মুক্ত হয়।
[৬] ’৭১ সালের ২৯ নভেম্বর ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চাতলাপুর বিওপি, আলীনগর বিওপি ও টিলাবাড়ী কালিপুর থেকে ২ ব্যাটারি আর্টিলারী গান দিয়ে চাতলাপুর আলীনগর সরাসরি ও অন্যদিকে কমলপুর থেকে ধলই কুরমা যৌথভাবে আক্রমণ করে। এতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
[৭] জেলায় অনেক গণহত্যার গণকবর ও বধ্যভূমি রয়েছে যা এখনো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। সরকারি ও বেসরকারি উদ্দ্যোগে জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করার স্বার্থে বধ্যভূমি, গণহত্যার স্থানগুলো সংরক্ষণ করে শহীদদের নাম-স্মৃতিফলক করা প্রয়োজন। হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সম্পাদনা: সাদেক আলী