রাশিদ রিয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমিরাতে অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে ঠেকানোর চেষ্টা করছে সিনেট ফরেইন রিলেশন কমিটি। এ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন সোমবার। এত বিপুল পরিমান অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমিরাতকে ৫০ টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ২০টি রিপার ড্রোন, ১৪ হাজার বোমা সহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে চাচ্ছেন। গত নভেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে আমিরাত রাজি হওয়ার পর এ অস্ত্র বিক্রিতে রাজি হয় ট্রাম্প প্রশাসন। নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজয় বরণ করলেও জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ওভাল অফিস ছেড়ে যাওয়ার আগেই আমিরাতের কাছে এ অস্ত্র বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভক্স মিডিয়া
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে বলেছেন এধরনের অস্ত্র বিক্রি আমিরাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর সম্পর্কের পরিচয় বহন করে। ইরানের আগ্রাসন নীতি ও হুমকি মোকাবেলায় আমিরাতের নিরাপত্তা দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এসব মার্কিন অস্ত্র। ইসরায়েলের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্থাপনের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্রে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু কংগ্রেসের কিছু রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটরা মানবাধিকার কর্মীদের দাবির পাশাপাশি বলছেন ইয়েমেনে আগ্রাসনের সঙ্গে আমিরাত জড়িত রয়েছে। দেশটি লিবিয়ায় রুশ ভাড়াটিয়াদের অর্থের যোগান দিয়েছে তাই আমিরাতের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির কোনো মানে হয় না। প্রোজেক্ট অন মিডিল ইস্ট ডেমোক্রেসির এ্যাডভোকেসি অফিসার সেথ বিন্ডার বলেন আমিরাতের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি বরং মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ দুই বিপন্ন করবে। সেথ বিন্ডার ওই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও মানবাধিকার রক্ষার জন্যে কাজ করে আসছেন।
নিউইয়র্কের সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের মধ্যপ্রাচ্যে বিষয়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মাইকেল হান্না বলেন খুব দ্রুত ট্রাম্প আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে চাচ্ছেন। এখানে প্রক্রিয়া ও কার্যকারণ কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না। ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়নের এ এক নগ্ন লড়াই।
তবে আমিরাত দীর্ঘদিন ধরে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাওয়ার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছে। এধরনের যুদ্ধ বিমান ছাড়া অন্যান্য মার্কিন অস্ত্র হাতে পেলে আমিরাত মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে শুধু সামরিক দিক থেকে নয় রাজনৈতিকভাবেও শক্তিশালী ও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। লং আইসল্যান্ড ইউনিভার্সিটির আমিরাতের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডালিয়া ফাহমি বলেন আমরা যুদ্ধের কথা বলছি না। কিন্তু মার্কিন অস্ত্র হাতে পেলে মধ্যপ্রাচ্যে আমিরাতের প্রভাবের ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন আসবে। আমিরাত ওই অঞ্চলে মহাপরাক্রমশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে যা ভারসাম্য বিনষ্ট করবে। এসব অস্ত্র আমিরাত ব্যবহার করতে শুরু করলে তা কোথায় এবং কেন করবে তা সুস্পষ্ট হওয়াও জরুরি।