মাসুদ রানা: বিশ্বে চলছে বুদ্ধিবৃত্তিক আকাল, যার প্রধান কারণ হচ্ছে বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিবৃত্তিক পুষ্টিহীনতা। আর, এ-পুষ্টিহীনতার কারণ হচ্ছে তাঁদের পুষ্টিদায়ী ইজম বা আদর্শসমূহের ইতোমধ্যে প্রমাণিত অকার্যকারিতা। বিশে^ টাইপরাইটার যুগ শেষ হয়েছে বলে যেমন এখন টাইপিস্টরা বেকার, তেমনিভাবে পৃথিবীতে আদর্শের যুগ শেষ হয়েছে বলে আদর্শ-অনুসারীরাও বেকার হয়ে পড়েছেন। বস্তুতঃ আদর্শের যুগ হচ্ছে ধর্মীয় যুগ থেকে প্রকৃত বিজ্ঞানের যুগে যাওয়ার এক অন্তর্বর্তী যুগে, যার মধ্যে রয়েছে ধর্মের মতো কোনো এক অমোঘ নিয়মে বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানের মতো আত্মবিশ্বাস।
ইতিহাস দেখিয়েছে যে, ঐতিহাসিক নিময় বলতে কিছু নেই কিংবা থাকলেও সেটি আগে থেকে নিরূপণ কিংবা নির্ণয় করা যায় না। ফলে, ঐতিহাসিক বিকাশের নিয়মে বিশ্বাসী আদর্শ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই ১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্যের পতন দেখে বিশ্বাস হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। আর, সে-সময় ধর্মবাদীদের উত্থানের ভয়ে ভীত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নামের এক নতুন আদর্শে দীক্ষা লাভ করেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মার্ক্সবাদের মতো সূত্রাবদ্ধ নয় বলে, সেখানে কর্মের চেয়ে আরাধনাটাই বেশি। বলাই বাহুল্য, আরাধনার শেষ পরিণতি হচ্ছে আত্মসমর্পণ। নব্বইয়ের দশকের আদর্শবাদী তারুণ্য আজ তিন দশক পর বার্ধক্যে প্রবেশ করেছে। তাই তাদের শারীরিক ক্ষমতা ও তেজ হ্রাস পেয়েছে। নতুন কিছু অনুধ্যান, অনুসন্ধান, গ্রহণ ও বর্জনেরও মানসিক শক্তি তাদের নেই। তাই তাঁরা পুরোনো আদর্শের উদ্ধৃতিগুলোই শূন্যপাত্র বাজানোর মতো বাজিয়ে চলেছেন। সংখ্যায় অল্প হলেও যারা আদর্শবাদের মধ্যে তরুণ, তাদেরকে বলছিঃ তোমাদের উচিত বৃদ্ধদের অনুসরণ না করে নতুন করে চিন্তা করা; নতুন করে দেশ, জাতি, সমাজ ও বিশ্বকে দেখা।
২৮-১১-২০২০ লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড
ফেসবুক থেকে