ইসমাঈল ইমু, পঞ্চগড় থেকে ফিরে : [২] রোববার সকাল ৭টা। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ। পঞ্চগড় জেলার মহানন্দা নদীতে অসংখ্য পুরুষ-নারীদের ভীড়। দুর থেকে মনে হবে সকলে মাছ ধরায় ব্যস্ত। কিন্তু বাস্তবে সকলেই পাথর উত্তোলনে ব্যস্ত। পাথর শনাক্তের লোহার রড দিয়ে নদী থেকে পাথর তুলছে শ্রমিকরা।
[৩] নদীর ওপার ভারত আর এ পাশ বাংলাদেশ। দু’দেশের সীমানার উপর দিয়েই মহানন্দার চলাফেরা। হিমালয়ে কোলঘেঁষা মহানন্দার পানি থেকে ধোঁয়া উঠছিল তখনও। বাতাসে ফুলানো গাড়ির চাকার টিউবের ভেলায় পাথর তুলছেন শ্রমিকরা। নদী থেকে দল বেঁধে পাথর তোলেন তারা। নদীর বুকে কর্মব্যস্ত মানুষগুলো মহানন্দারই সন্তান, তাদের বলা হয় পাথর শ্রমিক।
[৪] পাথর শ্রমিকরা জানান, এককালে অভাব-অনটন ছিল এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। এখন আর সে অবস্থা নেই, পাল্টেছে জীবনের দৃশ্যপট। মহানন্দার পাথর তুলে যে আয় হয় তা দিয়েই ঘুরে তাদের জীবনের চাকা। কেউ পাথর তুলছেন। আবার কেউ নদীরঘাট থেকে সে পাথর কিনে এনে মেশিনের কাছে দিচ্ছেন। কেউবা মেশিন চালিয়ে রোজগার করছেন, আবার কেউ ট্রাকে পাথর লোড-আনলোড করছেন। অনেকে আবার কারবারিদের কাছে পাথর সরবরাহ করছেন। এই করেই চলছে দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়ার মানুষের জীবন।
[৫] তারা জানান, সারাদিন কাজ করে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। তবে এর জন্য করতে হয়ে অমানবিক পরিশ্রম। ঝরাতে হয় গতরের ঘাম। শুধু পুরুষ নয়- পাথরের কাজে অংশ গ্রহণ করতে পারেন নারীরাও। একজন নারী সারাদিন কাজ করলে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা রোজগার করা সম্ভব।
[৬] ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার মহালিদ্রাম পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে পশ্চিবঙ্গের উত্তরাংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলা হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে নদীটি। বাংলাদেশে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা থেকে শুরু করে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার দু’দেশের সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে মহানন্দা। মূলত এই অংশটুকুর মধ্যেই পাথর উত্তোলন করা হয়।