সুব্রত বিশ্বাস: বর্তমান সরকার এই প্রশ্নের উত্তর দেবে কী? সরকার আর্থিক উন্নয়নে বিশ্বাসী। অর্থনীতির প্রতিটি ধাপেই যদি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না থাকে, তবে চাহিদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর্থিক অসাম্য শিখরে। এই অসাম্য ধনতন্ত্র বা বাজার ব্যবস্থার পক্ষে মঙ্গলকর কী? বাজারের স্বার্থেই অধিকতর মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা থাকা উচিত। কিন্তু বাজারের এই স্বার্থটিই শেষ কথা নয়। আর্থিক অসাম্য যখন চড়া হয়, তখন দেশের মোট উৎপাদনের ন্যায্যতর বণ্টনের দায়িত্ব সরকার অস্বীকার করতে পারে না। মূল প্রশ্নটি গভীরতরÑ সমাজের মধ্যে যে সুগভীর ও ক্রমবর্ধমান আর্থিক অসাম্য, রাষ্ট্রের কি তা সহ্য করা উচিত?
এই মহামারীর সময় মানুষের হাতের টাকা শেষ হয়ে গেছে যদি আবার অর্থনীতির চাকা ঘুরে আরম্ভ করে তাহলে এই মানুষগুলাকে আবার সচল করতে তাদের হাতে অর্থের যোগান কে দেবে? প্রাথমিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করবার সামর্থ্য সমাজের যে শ্রেণিটির হাতে থাকে, সেই মধ্যবিত্ত ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর আয় বাজার গতিশীল হলে বাড়বে, ফলে চাহিদাও ফিরিয়া আসবে...।
অর্থনৈতিক কাণ্ডজ্ঞান বা ন্যায্যতার বোধের ক্ষেত্রেও সংশয় সেখানেই। দীনদরিদ্র মানুষ, প্রলম্বিত লকডাউন অতল খাদে ঠেলে দিয়াছে। সেগুলোর পেছনেই সর্বশক্তিতে দাঁড়ানো প্রয়োজন। জাতীয় কর্মসংস্থান প্রকল্প এই দেশে এক অগুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ক তৈরি করিয়া রাখিয়াছে। মানুষের সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা বিশ্বে বিরল। সরকার এ প্রকল্পকে যথোচিত গুরুত্ব দিক। শুধু কথায় নয়, সেই গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটুক কাজে।
গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, শহরেও কর্মসংস্থান যতো বেশি সম্ভব মানুষকে নিয়োগ করা হোক এবং প্রকল্পগুলি চাহিদা-চালিত হোক। অর্থাৎ যতো মানুষ কাজ চাইবেন, ততো জনেরই কর্মসংস্থান হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিকাঠামো নির্মাণ, স্বাস্থ্য অথবা অন্য যে খাতগুলোকে সরকার অগ্রাধিকার দিতেছে, সেখানেও কাজের চরিত্র শ্রমনিবিড় হোক।