রাশিদ রিয়াজ : অর্থনীতিবিদরা একে বলছেন ‘ডেব্ট সুনামি’। নীতিনির্ধারকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিশ^অর্থনীতিতে এমন এক অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে যে এধরনের ঋণের মাত্রা প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বিশাল আকারের ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি যোগ করেছে। এর ফলে দেশে দেশে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যবস্থায় স্থবির অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সের (আইআইএফ) প্রতিবেদনে এধরনের সতর্কতার সঙ্গে বলা হয়েছে করোনার কারণে বিশ^অর্থনীতিতে ঋণ বেড়েছে ১৫ ট্রিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১২ থেকে ২০১৬ সালে এ ঋণের পরিমান ছিল ৬ ট্রিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়ে এর পরিমান ছিল ৫২ ট্রিলিয়ন। এভাবে ঋণ বাড়তে থাকলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক বিরুপ প্রভাব ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। স্পুটনিক/সিএনএন/
স্বাস্থ্য সংকট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে না আসলে অর্থনৈতিক মন্দায় ঋণের সঙ্গে প্রবৃদ্ধি অনুপাত ৪৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর ব্যয় বাড়ছে। অর্ধেক ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে এ কারণেই। গত বছর ঋণের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির অনুপাত ছিল ৩৮০ শতাংশ। চীনে এ হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩৫ শতাংশ। গত তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে এ হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫০ শতাংশ। ৭০টি দেশের সাড়ে চার’শ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত গ্লোবাল এ্যাসোসিয়েশন অব দি ফিনান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রি আভাস দিচ্ছে এবছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ঋণের পরিমান দাঁড়াবে ৮০ ট্রিলিয়ন ডলার। গত বছর এ ঋণের পরিমান ছিল ৭১ ট্রিলিয়ন ডলার।
ইউরোপে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেড় ট্রিলিয়ন ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে মোটে ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে লেবানন, চীন, মালয়েশিয়া ও তুরস্কের। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব গ্যারান্টি রয়েছে এমন ঋণের পরিমানও বাড়ছে। ঋণ বৃদ্ধির আরেক কারণ বিভিন্ন দেশে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির বৃদ্ধি। ঋণ বৃদ্ধিতে এ ঘাটতি পূরণে বন্ড মার্কেট ও সিন্ডিকেট ঋণের পরিমানও এ বছরে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে মার্কিন ডলারে সুদের হার ছিল ১৫ শতাংশ। ঋণের পরিমান বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে জি-টুয়েন্টি গ্রুপের দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ৬ মাসের জন্যে বিশেষ ছাড় দেয়। একই সঙ্গে আইএমএফ হুঁশিয়ার করে বলে বিশ্বঅর্থনীতির পুনরুদ্ধার হবে খুবই কঠিন। আইএমএফ’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিভা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো বেশি আর্থিক সহায়তার তাগিদ দিয়ে বলেছেন আগামী দিনে অর্থনীতি আরো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এর আগে আইএমএফ বলেছিল করোনায় বিশ্বঅর্থনীতি ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর এবছর ৪.৪ শতাংশ হ্রাস পাবে। আগামী বছর অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে ৫.২ শতাংশ।
আইএমএফ সোমবার দেয়া এক প্রতিবেদনে এও জানাচ্ছে করোনায় বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এপর্যন্ত ১৯.৫ ট্রিলিয়ন ডলার বিশেষ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। সরকারগুলোর পক্ষ থেকে বিশেষ আর্থিক সহায়তার পরিমান দাঁড়িয়েছে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দিয়েছে সাড়ে ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অনেক দেশের পক্ষে এধরনের সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়নি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এখন এক কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ইউরোপিও ইউনিয়ন করোনা মোকাবেলায় সাড়ে ৯শ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে আসার পর অন্তত ৫’শ বিলিয়ন ডলার অনুমোদনে ইউরোপের ২৭টি দেশ একমত হয়।