হাসান মোরশেদ : ইতিহাসের মজা এই, ইতিহাস চিহ্ন রেখে যায় কোথাও না কোথাও। ধৈর্য থাকলে এবং অনুসন্ধান করতে জানলে ঠিকই খুঁজে পাওয়া যায়। ‘দাস পার্টির খোঁজে’ নিয়ে যখন কাজ শুরু করি তখন এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব পর্যায়ের দুজন বেঁচে আছেন।
প্রথম জন স্বয়ং সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, যিনি টেকেরঘাট সাব সেক্টর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ৪৫ বছর পর সুরঞ্জিত সেন সব সত্য বলবেন না, কথা বলবেন তার বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণে, মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম। তাই তাকে এড়িয়ে বারবার গিয়েছি অপরজনের কাছে, সালেহ চৌধুরী যিনি এরিয়া কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মি. চৌধুরীর অপার স্নেহ যেমন পেয়েছি তেমন অকপট সব সত্যও জেনেছি তার থেকে। তিনি জানিয়েছিলেন, ভারতীয় এবং বাংলাদেশের হাই কমান্ডের পরিকল্পনা ছিলো ভৈরব থেকে সিলেট সুনামগঞ্জের নদীপথ একেবারে অকার্যকর করে দিতে হবে। এ পথে পাকবাহিনী রসদ ও অস্ত্র সরবরাহ করছে নিরাপদে।
মূলত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে স্পেশাল গেরিলা দল গঠন করা হয় ভাটি অঞ্চলের সাহসী তরুণদের নিয়ে। কমান্ডার করা হয় জগতজ্যোতি দাসকে এবং তার নামেই দলের নামকরণ। দাসপার্টি দ্রুততম সময়ে এই নৌপথে হয়ে উঠে প্রবল সন্ত্রাস। একের পর এক তাদের আক্রমণে ধ্বংস হতে থাকে নৌকা, বার্জ, লঞ্চ। সেপ্টেম্বর মাসে বাধ্য হয়ে পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষণা দেয়- এই নদী পথ পরিত্যাজ্য, তারা এই পথে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। সালেহ চৌধুরী এসব বলেছিলেন আমাকে, বইয়ে লিখেছি এসব তার উদ্বৃতি দিয়ে।পাঁচবছর পর সে সময়ের পত্রিকার রিপোর্ট পাই- ‘দুষ্কৃতিকারীদের আক্রমণে সতেরটি নৌযান নিখোঁজ’ মিথ্যে শুনিনি, মিথ্যে লিখিনি।