খালেদা আক্তার খানম রিনু: ভারতের আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে অবস্হিত তাজমহল রাজকীয় এক সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর ৩য় স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম, যিনি মমতাজ মহল নামে পরিচিত তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন।
১৯ বছরের বিবাহিত জীবনে ১৪ তম সন্তান জন্মদানকালে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মমতাজ মহল মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন বিশ্ববাসীর কাছে অমর করে রাখতে মমতাজের সমাধিস্থলে এর নির্মাণ করা হয়।
নির্মাণ শুরু ১৬৩২ খ্রীস্টাব্দে, সমাপ্ত ১৬৫৩ খ্রীস্টাব্দে। ২০ হাজার শ্রমিকের ২২ বছরের সাধনায় এ তাজমহল।যদিও কথিত আছে নির্মাণ শেষে কারিগরদের হাতের আঙ্গুল কেটে দেয়া হয়েছিলো, তবে এ নিষ্ঠুর দাবীর পিছনে তেমন কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ নেই।
তাজমহল মুসলিম মুঘল,পারস্য ও তুর্কি স্হাপত্যের চিহ্ন। নকশাকারক হিসেবে ইতিহাসে অনেকের নাম পাওয়া যায়। তবে মূল ব্যক্তি হিসেবে উস্তাদ আহমেদ লাহুরীর নামই বেশী গ্রহনযোগ্য।
ওস্তাদ ঈসা চত্বরের নকশা করেন বলে অনেক ইতিহাসে তাঁর নাম আছে।
বড় গম্বুজটির নকশা করেন ওত্তোমান থেকে আসা ইসমাঈল খাঁন, কাজিম খাঁন তৈরী করেন বড় গম্বুজের মাথার তিনটি স্বর্ণ দণ্ড। প্রধান ভাস্কর ও মোজাইকের শিল্পী ছিলেন চিরন্জীলাল। মোহাম্মদপুর হানিফ ছিলেন রাজ মিস্ত্রী দের তত্বাবধায়ক। এভাবে অসংখ্য মানুষ জড়িত।তবে মূল নকশাকারক হিসাবে বেশীর ভাগ ইতিহাস উস্তাদ আহমেদ লহুরীকে সমর্থন করে।
প্রচন্ড ব্যয়বহুল সাদা মার্বেল পাথর ও অন্যান্য দূর্লভ সামগ্রী, যা পুরো এশিয়া ও ভারতবর্ষ থেকে যোগাড় করে তাজমহল তৈরী করা হয়। নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য ব্যবহৃত হয় ১০০০ হাতী।
রাজস্হান থেকে আলো প্রবাহী অস্বচ্ছ সাদা মার্বেল পাথর,
পান্জাব থেকে লাল,হলুদ ও বাদামী রঙের পাথর,
চীন থেকে সাদা, সবুজ পাথর, স্ফটিক টুকরা
তিব্বত থেকে সবুজ, নীলাভ ফিরোজা রত্ন,
আফগানিস্তান থেকে নীলকান্তমনি
শ্রীলঙ্কা থেকে উজ্জ্বল নীল রত্ন
আরব থেকে রক্তিমাভাব, খয়েরী ও সাদা মূল্যবান পাথর আনা হয়েছিলো।
সর্বমোট ২৮ ধরনের পাথর সাদা মার্বেল পাথরে হাতে খোদাই করে বসানো হয়। তাজমহলের গায়ের ছোট একটি পদ্ম ফুলে ৬৮ রকমের রত্ন বসানো আছে।
তাজমহল নির্মাণে তখনকার সময়ে প্রায় ৩২ মিলিয়ন রুপি খরচ হয়েছিলো।যা বর্তমানের ৮২৭ মিলিয়ন ইউ এস ডলারের সমান। এই বিশাল খরচ তৎকালীন প্রজাদের ওপর খাজনার চাপ বাড়িয়ে দিয়ে আদায় করা হয় যা পরবর্তীতে এক ভায়াবহ দুর্ভিক্ষের জন্ম দেয় বলে ইতিহাস সাক্ষী দেয়।
তাজমহলের চত্বরটি দূর্গের মতো বেলে পাথরের দেয়াল দিয়ে তিন দিক থেকে বেষ্টিত, নদীর দিকটি ছাড়া। এই বেষ্টনীর বাইরে শাহজাহানের অন্য স্ত্রী ও অসংখ্য পরিচারিকাদের সমাধি ও আছে।
তাজমহলে ঢোকার প্রধান ফটকও তৈরী করা হয় মার্বেল পাথর দিয়ে। দরজাটির নকশা ও ধরন মুঘল সম্রাটদের স্থাপত্যের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
চত্বরের শেষে বেলেপাথরের দুটো বিশাল ইমারত আছে। একটি ইমারত মসজিদ, অন্যটি হলো জাওয়াব, যেটি, মুঘল আমলে মেহমানদের থাকার জন্য ব্যবহৃত হত। মসজিদটির মেঝেতে ৫৬৯ জন মুসল্লির নামাজের জন্য কালো পাথর দিয়ে দাগ কাটা।
তাজমহলের গম্বুজগুলো অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর! সাদা মার্বেল পাথরের কারণে সূর্যোদয়ের আলো গম্বুজে পড়লে গোলাপী আভা ছড়ায়, গোধূলিতে অপসৃয়মান সূ্র্যের আলোয় সোনালী হয়ে উঠে।পূর্ণিমার আলোয় মুক্তোর মতো চকচক করে৷ কখনো হয় নীলাভ । কুয়াশা মাখা দিনে এ স্তম্ভ যেন মেঘের গায়ে ভেসে বেড়ায়।
প্রচলিত আছে, গম্বুজগুলো থেকে যে আলোকচ্ছটা বিচ্ছুরিত হয় তা নারী মনের অাবেগ ও অনুভূতির ভিন্নতাকেই প্রকাশ করে।
ফেসবুক থেকে