শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১১:৪৫ দুপুর
আপডেট : ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১১:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নয়া কৌশল সোনা পাচারের, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে তিন হাজার কেজি

ডেস্ক রিপোর্ট: করোনাভাইরাস সঙ্কটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকার সময় বিমানবন্দর দিয়ে বৈধ বা অবৈধ কোন সোনাই দেশে আসেনি। এই সঙ্গে কয়েক দফায় বেড়েছে সোনার দাম। করোনার আগে ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি সোনার ভরি এখন ৭৬ হাজার টাকার (২২ ক্যারেট) ওপরে। স্বর্ণের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে চোরাচালানও। কখনও প্যান্টের ভেতর, কম্বলের ভেতর, পেটের ভেতর, বিমানের টয়লেটে, যাত্রীর জুতোর ভেতর, মানিব্যাগে, লাগেজে, হ্যাঙ্গার গেটে, বোর্ডিং ব্রিজ প্রভৃতি উপায়ে স্বর্ণের বার চোরাচালান হয়ে আসছে হরহামেশা। সম্প্রতি বৈধ পথে ঘোষণা দিয়ে স্বর্ণ আমদানি বেড়েছে। চলতি মাসের মাত্র ১৫ দিনে ৯৫০টি সোনার বার এনেছেন প্রবাসীরা। মাঝে মধ্যে আটকও হচ্ছে স্বর্ণবার। চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৪০ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। তবে যেসব সোনা আসছে তার বেশিরভাগই পাচার হয়ে যাচ্ছে। তাই এই উপায়ে সোনা আনাটা চোরাচালানিদের একটি কৌশল হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া দীর্ঘদিনেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় গত এক যুগে স্বর্ণের নিলাম ডাকেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে চলতি মাস অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে স্বর্ণ জমেছে প্রায় ৩ হাজার কেজি। যার মধ্যে মামলা প্রক্রিয়াধীন স্বর্ণের বারের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ১১১ কেজি ও স্বর্ণালঙ্কারের পরিমাণ প্রায় ৮১৯ কেজির ওপরে। সব মিলিয়ে মামলায় আটকে আছে ২ হাজার ৯৩০ কেজি স্বর্ণালঙ্কার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাচার হয়ে আসা স্বর্ণ ধরা পড়ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে। কাস্টমস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, যত স্বর্ণ ধরা পড়ছে, তার কয়েকগুণ বেশি স্বর্ণ পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর এসব স্বর্ণ চোরাচালানে নেয়া হচ্ছে নিত্যনতুন কৌশল ও পদ্ধতির আশ্রয়। চোরাকারবারিরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশ থেকে স্বর্ণ এনে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বাজারে সরবরাহ করছে। যাত্রীবেশী বাহকের সঙ্গে থাকা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ইলেকট্রিক মোটর, দেহের বিভিন্ন অংশ, ট্রলির ওপরের হ্যান্ডেল, মানিব্যাগে করে স্বর্ণ পাচারের ঘটনা ঘটছে। স্বর্ণবারের ওপর কালো অথবা সিলভারের প্রলেপ দিয়েও পাচারের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে কখনও কখনও। রোগী সেজে হুইল চেয়ারে, উরুতে এ্যাঙ্কলেট বেঁধে, জুতার মধ্যে, বেল্ট দিয়ে কোমর বন্ধনীর ভেতরে, শার্টের কলারের ভেতরে, স্যান্ডেলের সঙ্গে, সাবানের কেসে করে, সাউন্ড বক্সের এ্যাডাপটরে লুকিয়ে, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য বা ওষুধের কৌটায় করে, প্যান্টের নিচে শর্টসের ভেতর, ল্যাপটপের ব্যাটারির ভেতর, মানি ব্যাগের ভেতর ও গলায় স্বর্ণের চেনের সঙ্গে ঝুলিয়ে লকেট হিসেবে আনা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ তোলা ওজনের একেকটি সোনার বার বিমানবন্দর থেকে বাইরে এনে দিলে চোরাচালানিদের কাছ থেকে এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পান যাত্রীরা। দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বিমানের কোন কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বর্ণ পরিবহনে সহায়তা করেন। বাহকদের হাতে স্বর্ণ ধরিয়ে দেন দুবাইয়ে অবস্থানরত চক্রের প্রধানরা। বাহক সেই স্বর্ণ বিমানের আসনের নিচে, শৌচাগারে বা অন্য কোন স্থানে লুকিয়ে রেখে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। পরে কৌশলে সেই স্বর্ণ বের করে বাইরে নিয়ে আসা হয়। জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। নিয়মিতই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আগে অনেক বড় বড় চালান আসত। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে বর্তমানে আগের চাইতে বড় চালানগুলো আসা বন্ধ হয়েছে। তারপরও অসাধু কারবারিরা কৌশলে স্বর্ণ আনার চেষ্টা করছে। তাদের গ্রেফতারেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন বলে জানান তিনি।

স্বর্ণের দামে রেকর্ড, চোরাচালানেও রেকর্ড ॥ করোনা মহামারীর আগে দেশের বাজারে ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল সোনার দাম। বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৬ হাজার ৩৪১ টাকা। গত ৬ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তখন প্রতি ভরির দাম গিয়ে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায় দাঁড়ায়। সেটিই ছিল দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম। আড়াই মাস পর বর্তমানে যে দামে সোনা বিক্রি হচ্ছে, সেটিও তৃতীয় সর্বোচ্চ। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সোনা চোরাচালানও। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৪০ কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। সর্বশেষ গত ২৩ অক্টোবর ৮ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। আবুধাবি থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪টি সিট তল্লাশি করে এসব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, এয়ারপোর্টে কড়াকড়ি ও কঠোর নজরদারির কারণে অবৈধ পথে স্বর্ণ আনা কমেছে। বিমানবন্দরে কর্মরত গোয়েন্দা ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের নজরদারি ও গোপন তথ্যের ভিতিত্তে অবৈধ পথে আসা সোনা ধরতে তৎপরতা চলছে। ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে অবৈধ পথে আসা সোনা জব্দ কমেছে। ২০১৮ সালে আকাশপথে আসা ৭৬৫ কেজি অবৈধ স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে এটা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৫৪১ কেজিতে।

পাচারের কৌশলে ঘোষণা দিয়ে স্বর্ণ আমদানি ॥ গত ১ অক্টোবর শাহ আমানত বিমানবন্দরে দুবাইফেরত এক যাত্রী আটক হন ৮২টি সোনার বারসহ। কক্সবাজারের বাসিন্দা এনামুল ফিরছিলেন বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে। এরপর ১৫ অক্টোবর দুবাইফেরত বাংলাদেশ বিমানের আরেকটি ফ্লাইটের তিনটি আসনের নিচে আটটি প্যাকেটে ১৬০টি সোনার বার উদ্ধার করে চট্টগ্রামের কাস্টমস কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ধরা পড়া চালানগুলোর বেশিরভাগই দুবাই থেকে আসা বিমানের ভেতর ও বিমানের যাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া। শাহ আমানত বিমানবন্দর কাস্টমসের তথ্য অনুসারে, ১৫ অক্টোবরই শাহ আমানত বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা তিনটি বিমানে ঘোষণা দিয়ে যাত্রীরা আনেন ১২০টি সোনার বার। এর আগে ১৩ অক্টোবর ঘোষণা দিয়ে আনা হয়েছিল ৮৮টি সোনার বার। অবৈধ দুটি চালান ধরার পর ১৭ অক্টোবর শনিবার ঘোষণা দিয়ে যাত্রীরা আনেন ১১০টি সোনার বার। ২০ অক্টোবর ঘোষণা দিয়ে আনা হয় ১৬০টি সোনার বার, যা ১৩ অক্টোবরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ৯৫০টি সোনার বার এনেছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বৈধভাবে আমদানি না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দেশে সোনার দাম ভরিতে সব সময়ই ৩-৪ হাজার টাকা বেশি থাকে। সে কারণে অল্প কিছু মুনাফার জন্য সোনার বার নিয়ে আসেন প্রবাসীরা। এর মাধ্যমেই ঘটছে স্বর্ণ চোরাচালান। তাই বৈধভাবে সোনা আমদানি সহজ করা দরকার। সেটি হলে সোনা চোরাচালানও অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে।

বৈধ আমদানি কার্যত বন্ধ ॥ শুল্ক বেশি থাকায় লাইসেন্স পাওয়ার পরও ছয় মাস সোনা আমদানি করেননি ব্যবসায়ীরা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২০ শতাংশ কর প্রত্যাহার করা হয়। প্রতি ভরি সোনা আমদানিতে বর্তমানে ২ হাজার টাকা সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। ব্যাগেজ রুলসেও একই শুল্ক লাগে। শুল্ক কমানোর পর ১০ জুন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ১১ হাজার গ্রাম সোনা আমদানির জন্য আবেদন করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অনাপত্তিও দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দুবাই থেকে ৩০ জুন সোনার বার আমদানি করে নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। পরে অরোসা গোল্ড কর্পোরেশন ১৫ হাজার গ্রাম সোনা আমদানি করে। প্রথম চালান আনার পরপরই ২০ হাজার গ্রাম বা ১ হাজার ৭১৪ ভরি সোনা আমদানির জন্য ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। সেই আবেদনের ২০ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি হওয়া সোনার মান যাচাইয়ে জাহাজীকরণের আগে ও পরে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানতে চায়। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড সেসবের জবাব দিলেও অনাপত্তি পায়নি। এদিকে গত ৩ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সোনা আমদানির ক্ষেত্রে জাহাজীকরণের প্রাক্কালে সরবরাহকারী প্রান্তে ও দেশে আসার পর পণ্যের মান যাচাইয়ে সঠিক পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার বিষয়ে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। জানতে চাইলে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, নানাভাবে সোনা আমদানি প্রক্রিয়া বিলম্ব করা হচ্ছে। একেক সময় একেকটা বিষয় জানতে চাওয়া হচ্ছে। স্বর্ণ নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে অনুমতি দেয়ার বিধান থাকলেও সেটি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

স্বর্ণবারের পাশাপাশি এবার স্বর্ণালঙ্কার আমদানির অনুমতি ॥ দেশে বছরে ২০-৪০ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ পুরোনো সোনার অলঙ্কার গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়। চাহিদার বাকি ৯০ শতাংশ সোনা এত দিন ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে আসে। সম্প্রতি স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণ আমাদানিতে ১ ব্যাংক ও ১৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করায় বৈধভাবে স্বর্ণ আমাদানি প্রক্রিয়া শুরু করছেন ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় স্বর্ণবারের পাশাপাশি এবার স্বর্ণালঙ্কার আমদানিরও অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনুমোদিত ডিলাররাই এখন বৈধভাবে স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করতে পারবেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। ওই সার্কুলারে বলা হয়, স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা ২০১৮ অনুসরণ করেই অনুমোদিত ডিলাররা স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এর আগে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানির অনুমতি থাকলেও স্বর্ণালঙ্কার আমদানির বৈধতা ছিল না। এই সার্কুলারের মাধ্যমে স্বর্ণালঙ্কার আমদানির অনুমতি ও নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বর্ণ আমদানির অনুমোদন দেয়ায় দেশে বৈধপথে এটি আমদানি হবে। এতে অর্থ পাচার কমে যাবে। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়। স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা ২০১৮ তে বলা হয়েছে, ‘আবেদনকারী নিবন্ধিত লিমিটেড কোম্পানি হলে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম এক কোটি টাকা থাকতে হবে। আমদানিকৃত স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার নিরাপদে রাখার জন্য সাড়ে ৭০০ বর্গফুটের কার্যালয় থাকতে হবে। লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীদের অফেরতযোগ্য পাঁচ লাখ টাকার পে-অর্ডার দিতে হবে।’ স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে প্রথমত, দুই বছরের জন্য লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই লাইসেন্স দুই বছর পরপর নবায়ন করতে হবে। অনুমোদন দেয়া লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নবায়ন করতে হয়। নবায়নের ফি দুই লাখ টাকা।

মামলা জটে ১ যুগ ধরে স্বর্ণের নিলাম বন্ধ ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অস্থায়ী ভল্টে অবৈধভাবে বিভিন্ন পথে আসা আটককৃত স্বর্ণের বার চলতি মাসের অক্টোবর পর্যন্ত তালাবদ্ধ সিলগালা প্যাকেট জমা রয়েছে ১০টি যার পরিমাণ ২ হাজার কেজির ওপরে। অপরদিকে একই সময়ে স্বর্ণালঙ্কারের তালাবদ্ধ সিলগালা প্যাকেট জমা রয়েছে ৯টি যার পরিমাণ ৮’শ কেজির ওপরে ও রৌপ্য খাতে জমাকৃত প্যাকেট রয়েছে ১টি। এসব স্বর্ণের পরিমাণ ৩ হাজার কেজির ওপরে। যার মধ্যে মামলা প্রক্রিয়াধীন স্বর্ণের বারের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ১১১ কেজি ও স্বর্ণালঙ্কারের পরিমাণ প্রায় ৮১৯ কেজির ওপরে। স্বাধীনতার পর থেকে জব্দ হওয়া স্বর্ণের মধ্যে রাষ্ট্রের অনুকূলে আদালত থেকে বাজেয়াফত হওয়া ২ হাজার ৩শ’ কেজি স্বর্ণ কিনে রিজার্ভে যোগ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ৪ দফায় ৯১ কেজি স্বর্ণ নিলাম হয়। এরপর আর কোন নিলাম হয়নি। দীর্ঘ এক যুগ নিলাম প্রক্রিয়া না হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব স্বর্ণের বিপরীতে করা মামলার নিষ্পত্তি হয় এবং ভল্টে রাখা স্বর্ণ যদি আদালতের মাধ্যমে সরকারের অনুকূলে জব্দ করা হয়, সেসব স্বর্ণ নিলাম করা হয়। তবে যেসব স্বর্ণের বার বা ‘বিস্কুট’ আকারে আছে, সেগুলোকে বিশুদ্ধ স্বর্ণ মনে করা হয়। এগুলো সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক কিনে নেয়। পরে তারা এগুলোকে রিজার্ভে দেখানোর জন্য ভল্টে রেখে দেয়। নিলামের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে দিয়ে দেয়। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, স্বর্ণালঙ্কার নিলামে দেয়া হলেও স্বর্ণের বার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে দেয় না। প্রয়োজন মনে করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণের বার কিনে নিয়ে রিজার্ভে যুক্ত করে। অন্যদিকে বিভিন্ন পথে আসা বেশিরভাগ স্বর্ণের মামলা বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকার কারণে স্বর্ণালঙ্কার নিলামে দেয়া যাচ্ছে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো স্বর্ণগুলো জমা রাখা। তবে দিনের পর দিন জমা থাকা মোটেও সমীচীন নয়। অতিমাত্রায় স্বর্ণ জমা হলে এগুলো নিলামে দেয়াটাই যৌক্তিক বলে মনে করি। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে স্বর্ণ কিনে রিজার্ভে যুক্ত করবে তাও করতে পারে। তবে আটককৃত স্বর্ণগুলোর মধ্যে যেগুলোর মামলা বিচারাধীন প্রক্রিয়ায় রয়েছে, সরকারের উচিত সেসব মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করা। তা না হলে চোরাকারবারিরা আরও উৎসাহিত হবে।জনকন্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়