ইমরুল শাহেদ: মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনার পর নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন কাঞ্চন-চম্পা জুটি ছিল চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের জন্য ঘরের লক্ষ্মী। কিন্তু ইলিয়াস কাঞ্চন আহত হয়ে হাসপাতালে থাকায় ব্যস্ত তারকা চম্পাকে ঘরে বসে থাকতে হয়। তিনি একদিন আমাকে মগবাজারের বাসায় ডেকে বললেন, ‘আমি কি বেকার বসে থাকব? কার সঙ্গে কাজ করতে পারি বলেন তো?’ তার জানা মতে কেউ আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সিপাহী ছবিতে একটি ছেলেকে দেখেছি। সেও বেশ লম্বা। আমার সঙ্গে মানাবে ভালো।’ এর আগে মান্না সম্পর্কে আমাকে বলেছিলেন মান্নার স্ত্রী শেলী কাদেরের বড় ভাই মঞ্জুর কাদের। তিনি তখন সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন এবং সাপ্তাহিত বিচিত্রা অফিসে প্রায়ই আসতেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ছোটবোনের স্বামী মান্না চলচ্চিত্রে এসেছেন। তার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন।’ তার সঙ্গে বিচিত্রা অফিসে বসেই কথা হচ্ছিল। মান্না তখন নতুন মুখের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে যুক্ত হয়ে আজহারুল ইসলামসহ দু’একজন পরিচালকের ছবিতে কাজ করেছেন মাত্র। চম্পাকে বিষয়টি বলতেই তিনি বললেন, ‘আমি আজ বারী ষ্টুডিওতে ডাবিং করব। ছেলেটিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবেন। সেখানে প্রযোজক জয়েনউদ্দিন ভাই আসবেন। তিনি একটি ছবি করবেন। নায়িকা আমি। শুধু নায়ক পাওয়া যাচ্ছে না।’ মান্নাকে খবর দিতেই সে ছুটে এলো বিচিত্রা অফিসে। চম্পার কথানুসারে তাকে বারী ষ্টুডিওতে পাঠানো হলো। জয়েনউদ্দিন দেখলেন মান্নাকে। কিন্তু পছন্দ হলো না।
জয়েনউদ্দিন বললেন, ‘লিকলিকে গড়নের একটি ছেলে। হাতগুলো চিকন। সে কিভাবে নায়ক হয়।’ জয়েনউদ্দিনের কথায় আত্মবিশ্বাসী চম্পা দমে গেলেন না। তিনি তাকে সরাসরিই বললেন, ‘আপনি আমার বিপরীতে তাকে নেন। এই মুহূর্তে আপনার কাছ থেকে আমি এক টাকাও পারিশ্রমিক নেব না। ছবি চললে অবশ্যই আমার পারিশ্রমিক দিবেন।’ জয়েনউদ্দিন নীরবে কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর বললেন, ‘ওকে, ডান।’ চম্পা এবং মান্নাকে নিয়ে মোস্তাফা আনোয়ারের পরিচালনায় নির্মিত হলো ‘কাশেম মালার প্রেম।’ এ দেশের চলচ্চিত্রে এ ছবিটির ব্যবসা হয়ে গেল একটি ইতিহাস। সেই থেকেই যাত্রা শুরু হলো চম্পা-মান্না জুটির পথ চলা। তারও অনেক বছর পর মান্না যখন প্রযোজক হিসেবে কৃতাঞ্জলী কথাচিত্র খুলে ছবি নির্মাণ শুরু করলেন, তখন আর ঘুনাক্ষরেও চম্পার নাম মুখে উচ্চারণ করলেন না। তিনি অন্যান্য নায়িকাদের দিয়েই ছবি করেন। পক্ষান্তরে ইলিয়াস কাঞ্চন সুস্থ হয়ে ফিরে এসে চম্পাকে আর জুটি হিসেবে পেলেন না। তাকে জুটি বাঁধতে হয় দিতির সঙ্গে। পরে দিতিকে নিয়েও মান্না চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।