সিরাজুল ইসলাম: [২] ইরাকের সিনজার ডিস্ট্রিক্টের বাসিন্দা লায়লা তালু। আইএসের হাত থেকে রক্ষা পেতে ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ভোরে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। সঙ্গে তার স্বামী ও দুই শিশু সন্তান। হাজারো ইয়াজেদির মতো তাদের উদ্দেশ্যেও পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় নেয়া; কিন্তু প্রতিবেশীদের বিশ্বাসঘাতকায় পথে তারা ধরা পড়েন।
[৩] এরপরই পুরষ এবং নারী-শিশুদের আলাদা করে ফেলে জঙ্গিরা। সন্ধ্যায় লায়লা ও তার সন্তানদের নেয়া হয় বাজ ডিস্ট্রিক্টে। চারদিন পর তেল আফারে স্কুলে তাদের বন্দি করে রাখা হয়। এক সপ্তাহ পরে নেয়া হয় বাদুস বন্দিশিবিরে। বোমা হামলা হলে তাদের আবার নেয়া হয় তেল আফারে।
[৪] লায়লা বলেন, সেখানে নারী ও শিশুদের প্রহার, অপমান, হুমকি এবং অনাহারে রাখা হতো। এভাবেই সেখানে চলতে থাকে ৮ মাস। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আত্মহত্যাও করেন অনেকে। পরে তাদের নেয়া হয় জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি সিরিয়ার রাকা শহরে।
[৫] বন্দিশিবিরে শত শত ইয়াজিদি নারীকে তিন বেলা সামান্য খাবার ও পানি দেয়ার সময় চাবুক দিয়ে পেটানো হতো। তারা মেজেতে ঘুমাতেন। সন্তানদের নিয়ে সেখানে ৪০ দিন ছিলেন লায়লা। এরপর পাশের শহর আল-নুরে অ্যাপার্টমেন্টে আইএসের শীর্ষ সদস্যর বাসায় নেয়া হয় তাকে। ৪০ বছর বয়সী লোকটি সার্জন ছিলেন। তিনি তাকে প্রহার ও ধর্ষণ করেন। বিক্রি করে দেন আরেকজনের কাছে। তিনিও তাকে ধর্ষণ ও প্রহার করেন। এভাবে লাভের আশায় তাকে অনেকবার বিক্রি করা হয়। লেবাননের এক লোক তাকে ডাচ স্ত্রীর সহায়তায় ধর্ষণ এবং চাবুকাঘাত করেন। তিনি দুই বার গর্ভবতী হন এবং গর্ভপাত ঘটানো হয়।
[৬] ধর্ষকরা সবাই লায়লাকে সেমাই নামে ডাকতো। সৌদির এক লোক তাকে ধর্ষণ এবং চাবুক দিয়ে পেটাতেন। লোকটি তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ হাজার মার্কিন ডলার দাবি করেন। মুক্তিপণ দিয়েই তারা মুক্ত হন। তবে তার স্বামীর কোনও খোঁজ নেই। ৩৩ বছরের এই নারী এখন আধুনিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছোট্ট বাড়িতে বসবাস করছেন।
[৭] আইএসের নিষ্ঠুরতা এবং ইয়াজিদি নারীদের দুর্দশনার কথা বিশ্বকে জানাতেই লায়লা মুখ খুলেছেন বলে জানান। সূত্র: আলজাজিরা