বাবলু ভট্টাচার্য্য: 'শিল্পে কোনো সমঝোতা নেই, কিন্তু জীবনটাই সমঝোতায় ভরা।’------------ গুন্টার গ্রাস
তিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর স্বপ্নহীন ভগ্নবিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ‘বিবেক’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালে, বত্রিশ বছর বয়সে বড় হতে অস্বীকার করা মানসিক স্বাস্থ্যনিবাসের ক্ষুদে বাসিন্দা অস্কার মাতজেরাথের হাতে দুটো ড্রাম স্টিক দিয়ে গোটা সাহিত্যজগৎ মাতিয়ে তুললেন গুন্টার গ্রাস। শুরুতেই খ্যাতির শীর্ষে।
ড্রাম স্টিক গুন্টার গ্রাস হাতছাড়া করেননি। নিজেও আমৃত্যু প্রবল বাদন শুনিয়ে গেছেন। ছিঁড়ে ফেলেছেন পাশ্চাত্যের শঠতার মুখোশ। কলকাতা ও বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের নিবিড়তা বাঙালিরা এতোটাই অনুভব করেছে যে, ১৯৯৯ সালে যখন নোবেল পুরস্কার পেলেন, আতিশয্য আমাদের বলিয়ে ছেড়েছেন- সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পর নোবেল বিজয়ী দ্বিতীয় বাঙালি।
গুন্টার গ্রাস ড্যানজিগ জিমনেশিয়াম স্কুলে ভর্তি হন। মহাযুদ্ধ এসে যায়। পনেরো বছর বয়সী কিশোরকে বাধ্যতামূলক সৈনিক হতে হয়। বিতর্ক বাধে গুন্টার গ্রাসের সাবমেরিন সার্ভিসে যোগদান নিয়ে।
১৯৪৫ সালের এপ্রিলে যুদ্ধে আহত হন তিনি। যুদ্ধবন্দি হিসেবে আমেরিকানদের হাতে ধরা পড়ে বন্দিশিবিরে চালান হয়ে যান। সোভিয়েত সেনাবাহিনী ড্যানজিগ দখল করার পর সেখানকার জার্মানদের দেশছাড়া করে। গুন্টার গ্রাসও ফিরে যেতে পারেননি, শরণার্থী হিসেবে তাঁর ঠাঁই হয় জার্মানিতে।
গুন্টার গ্রাসের শ্রেষ্ঠ কাজ ড্যানজিগ ট্রিলজি : দ্য টিন ড্রাম (৫৯), ক্যাট এন্ড মাউস (৬৯) এবং ডগ ইয়ার্স (৬৩)।
তাঁর প্রথম বই কবিতা ও ড্রইংয়ের মিশেল। তারপর একাধিক নাটক। টিন ড্রামের পর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, তাকিয়েছেন লেখার রসদের জন্য।
তাঁর তিন খন্ড আত্মকথা : পিলিং দ্য ওনিয়ন (০৬), দ্য বক্স (০৮) এবং গ্রিমস ব্রাদার্স (১০)।
তাঁর বিখ্যাত একটি উপন্যাস ফ্লাউন্ডার (৭৮)। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- লোকাল অ্যানেসথেটিক (৬৯), ফ্রম দ্য ডায়েরি অব অ্যা স্নেইল (৭৩), দ্য র্যাট (৮৬), দ্য কল অব দ্য টোড (৯২), ক্র্যাবওয়ার (০২)।
২০১২ সালে হোয়াট মাস্ট বি সেইড বা, যে-কথা অবশ্যই বলতে হবে শিরোনামের কবিতা লিখে ইসরায়েলে নিষিদ্ধ হন। তিনি অনড় থাকেন তাঁর অবস্থানে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর দু'জন শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকের নাম যদি জোর গলায় উচ্চারণ করতে বলা হয় তাদের একজন নিঃসন্দেহে ল্যাটিন আমেরিকার গ্যাব্রিয়াল গার্সিয়া মার্কেজ। অন্যজন কি গুন্টার গ্রাস নন?
গুন্টার গ্রাস কবিতা ও চিত্রশিল্পে সমানভাবে অত্যন্ত সমাদৃত।
গ্রাস ১৩ এপ্রিল ২০১৫ সালে লুবেক শহরে ৮৭ বছর বয়সে ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
গুন্টার গ্রাস (Günter Grass) ১৯২৭ সালের ১৬ অক্টোবর পোল্যান্ডের ফ্রিসিটি অব ড্যানজিগে (পরবর্তী সময়ে রুশ-অধিকৃত পোল্যান্ডের গদানস্ক নামে সুবিদিত) জন্মগ্রহণ করেন। ফেসবুক থেকে