মনিজা রহমান: ১৪৯২ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ৫২৮ বছর আগে এই দিনে আমেরিকায় এসেছিলেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। দিনটি আমেরিকায় ফেডারেল ছুটি হিসেবে পালন করা হয়।
আমেরিকানদের কাছে কলম্বাস একই সঙ্গে বীর ও নির্দয় প্রকৃতির হিংস্র মানুষ। আমেরিকা ছিল তাঁর ভাষায় নতুন পৃথিবী। কলম্বাস আর তাঁর সঙ্গীদের ফর্সা সুন্দর চেহারা দেখে আমেরিকার আদিবাসী জনগন ভেবেছিল- দেবতা। কিন্তু এই দেবতারা নির্মমভাবে নিধন করে তাদের।
তবে ঐতিহাসিকভাবে ভাবতে গেলে কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের মূল্য ব্যাপক। যদিও কলম্বাস তাঁর জীবদ্দশায় কখনও বুঝতে পারেননি তিনি নতুন একটি পৃথিবীর সন্ধান দিয়েছেন ইউরোপকে। তিনি ভেবেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে গিয়েছেন তিনি। যে কারণে এই অঞ্চলের আদিবাসীদের নাম দেন - ইন্ডিয়ান।
কলম্বাসের সময় ইউরোপের মানুষ বিশ্বাস করতো- সমুদ্রে জাহাজ নিয়ে পূর্ব দিকে গেলে এশিয়া আবিস্কার করা যাবে। এই ভেবে কলম্বাস পাল তুলেন পূর্ব দিকে। যদিও তাঁর জন্মভূমি ইতালি কোন সাহায্য করেনি তাঁকে। আশ্চর্য্য ব্যাপার হল, কলম্বাসের জন্ম ইতালিতে হলেও তিনি এই ভাষায় লিখতে পারতেন না। লিখতেন স্প্যানিশ ভাষায়। কারণ দশ বছর বয়স থেকে তিনি ঘর ছাড়া। জাহাজে করে ঘুরেছেন ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগালে।
কলম্বাস বিয়ে করেন পর্তুগালে। স্ত্রীর অকাল মৃত্যুর পরে পর্তুগীজ সম্রাটকে অনুরোধ করেন পূর্বে যাবার জন্য সাহায্য করতে। কিন্তু তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখান করা হয়। তারপর তিনি স্পেনে যান। ওখানকার রানী ইসাবেলা ও রাজা ফার্দিনান্দ তাঁকে সাহায্য করেন। তারপর তিন জাহাজ পিন্টা, নিনা ও শান্তা মারিয়াকে নিয়ে কলম্বাস পাল তোলেন অজানার উদ্দেশ্যে।
স্পেনের রাজা-রানীর সঙ্গে কলম্বাসের চুক্তি ছিল, যেসব নতুন ভূগন্ড তিনি আবিস্কার করবেন, সেখান থেকে আয়কৃত অর্থের দশভাগ তাকে দিতে হবে। আর তিনি গভর্নর নিয়োগ করবেন সেই সব জায়গায়। কিন্তু কলম্বাস এত খারাপ গভর্নর ছিলেন যে শেষ পর্য়ন্ত তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। কলম্বাসের মৃত্যুর পরেও শত বছর ধরে তার উত্তরাধিকারীদের সেই মামলার দায় বহন করতে হয়েছিল।
কলম্বাস নিষ্ঠুর ছিলেন, আবার বীর ছিলেন, ছিলেন অতি ভাগ্যবান। চার বার তিনি সফল অভিযান চালান এই অঞ্চলে। তখন প্লেগ ছিল মহামারীর মতো। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও কাউকে প্লেগ আক্রান্ত করতে পারতো। অথচ কলম্বাস দশ বছরের মধ্যে আবিস্কার করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, হিসপ্যানিওলা, কিউবা ও সেন্ট্রাল আমেরিকা । সর্বশেষবার তিনি জ্যামাইকা ছিলেন এক বছর। যাবার সময় স্বর্ণ আর রেড ইন্ডিয়ানদের নিয়ে যান ক্রীতদাস হিসেবে। যদিও কলম্বাসের রেড ইন্ডিয়ানদের ক্রীতদাস বানিয়ে রাখার ভাবনা প্রত্যাখান করেছিলেন রানী ইসাবেলা। এভাব দেখা যায় আমেরিকা আবিস্কারের ইতিহাসে একটি বড় ইতিবাচক ভূমিকা ছিল স্পেনের রানী ইসাবেলার।
কলম্বাস আমেরিকা জুড়ে বেশীরভাগ মানুষের কাছে একটি ঘৃণিত নাম তার আগ্রাসী মনোভাবের কারণে। ওহায়ো’র রাজধানীর নাম কলম্বাস। এছাড়া অনেক জায়গার নাম আছে তাঁর নামে। কিন্তু দিনকে দিন অনেক জায়গায় কলম্বাসের মূর্তি তুলে ফেলা হচ্ছে। অথচ কলম্বাসের দেখানো পথে এসে একজন ইতালিয়ান নাবিক, যিনি প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন- এটা এশিয়া নয়, নতুন একটি পৃথিবী, সেই আমেরিগো ভেসপুচির নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নাম হয়- আমেরিকা!
(ছবিতে ওহায়োর রাজধানী কলম্বাসের ক্যাপিটল ভবনে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মূর্তির সামনে। এ বছর ২১ আগস্ট সেখানে গিয়েছিলাম। ফেসবুক থেকে