শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ০৯ অক্টোবর, ২০২০, ০৯:৪৮ সকাল
আপডেট : ০৯ অক্টোবর, ২০২০, ০৯:৪৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আশরাফুল আলম খোকন: ধর্ষণের সেঞ্চুরি, একটি গুজবের আত্মকাহিনি

আশরাফুল আলম খোকন: প্রায়ই একটি অভিযোগ শুনতে হয়Ñ আওয়ামী বিদ্বেষীরা খুব আওয়াজ দিয়ে বলেন আর তা শুনে আমাদের পক্ষের লোকজন তা এড়িয়ে যায়, অথবা কাচু মাচু শুরু করে। কেউ আসল সত্যটা বলেন না, নয়তো বিষয়টি জানেন না। অভিযোগ হচ্ছে, ছাত্রলীগের কোনো এক নেতা নাকি ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন করেছে। বলা হয়, এটা ১৯৯৮-৯৯ সালের জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ঘটনা। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার নাম জসিমউদ্দিন মানিক। তিনি ইতালিতে থাকা অবস্থায় অনেকদিন আগে মারা গেছেন। ওইসময়ের বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি। এর মধ্যে ছাত্রনেতা, সাংবাদিক ও শিক্ষকও রয়েছেন। যারা ওই সময়ে ক্যাম্পাসে ছিলেন। মানিক ছিলো ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী। দেখতে সুদর্শন এবং পারিবারিকভাবেই পয়সাওয়ালা। ১৯৯৩-৯৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর সালাম বরকত হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবির বাবু-আসাদ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক ছিলেন এই জসিমউদ্দিন মানিক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাম্পাসে আধিপত্য বজায় রাখতে ছাত্রলীগে যোগ দেন। পয়সাওয়ালা হবার কারণে ছাত্রলীগের একটি অংশ তাকে প্রশ্রয় দেয়। তবে ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের দুঃসময়ের অধিকাংশরাই ছিল মানিকের বিরুদ্ধে। দলের জন্য সর্বনাশা এই খেলাটা এই দুঃসময়ের কর্মীরাই ক্ষোভে করেছেন, কিছু বাম ছাত্রসংগঠনের সাথে আঁতাত করে। সেই বিষয়ে পরে আসছি। ১৯৯৭-২০০০ সালে ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে শেখ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এবং শামসুদ তৌহিদ কাকর। আনন্দ মার্ডার মামলায় কাকর ছাত্রলীগ এবং ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কার হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিলো না ছাত্রলীগের। এ সময় জসীম উদ্দিন মানিক ছাত্রলীগের একটা গ্রুপের সাথে লিয়াজো করে নিজেকে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে তাকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির কোনো অফিসিয়াল কাগজ দেওয়া হয়নি বলে জানান তৎকালীন নেতাবৃন্দ। তবে কিছু শীর্ষ নেতার মৌখিক আশীর্বাদ ছিলো মানিকের উপর। আর চতুর মানিক পদ পাকাপোক্ত করতে সালাম-বরকত হলে একটা জমকালো পার্টি দেন। মানিক গ্রুপ বলতে চেয়েছে, তারা দলের পদ পেয়ে আনন্দ উৎসব করছে আর ছাত্রলীগের দুঃসময়ের কর্মীদের বক্তব্য ছিলো মানিককে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। এই উৎসবের সাথে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। জাহাঙ্গীরনগরের আনু মুহাম্মদ, রেহনুমা আহমেদ, মানস চৌধুরীরা সবসময়ই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ওঁৎ পেতে থাকেন। তারা পরদিন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে প্রচার করতে থাকে মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব পালন করেছে। তাদের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে মতিউর রহমান চৌধুরীর ‘মানবজমিন’ পত্রিকায় প্রথম এই সংবাদ বানানো হয়। আর সংবাদটি করা হয় ঢাকা অফিস থেকে। আর মানিককে কাবু করতে এই গুজবের সাথে তাল দেয় ছাত্রলীগের ত্যাগী গ্রুপটি। আর যখন নিজ দলের লোকজন এটা বলে বেড়ায় তখন সেটা বিশ^াসযোগ্য হয় সবার কাছে। দলের এই দুঃসময়ের গ্রুপটি মানিককে ধর্ষণকারী বানাতে গিয়ে পুরা সংগঠনের ইমেজকে ভুলণ্ঠিত করেছে। কারণ তাদের কথাকে পুঁজি করেই আনু মোহাম্মদ ও রেহনুমা আহমেদ গংরা সভা-সমাবেশ করে ছাত্রলীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। এর সবই ছিলো পরিকল্পিত।

উল্লেখ্য, ওই সময়ে জাহাঙ্গীরনগরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। টাটকা উদাহরণ হিসেবে সেটাই চালিয়ে দেওয়া হয় মানিক তথা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। মানবজমিনের তৎকালীন বিশ^বিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, ওই ধর্ষণের ঘটনার সাথে মানিক তথা ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক ছিলো না। ঘটনা কারা ঘটিয়েছিল তা ওই সময়ের সবাই জানতো। মানিক ভালো মানুষ ছিলো, নাকি খারাপ মানুষ ছিলো, নাকি তার বান্ধবী মহল বড় ছিলো, তা নিয়ে অনেক আলোচনা আছে জাহাঙ্গীরনগরের ওইসময়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে খবর নিয়ে যা জানতে পেরেছি, তাহলো মানিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ কিংবা নারী নির্যাতনের কোনো মামলা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অভিযোগও ছিলো না। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী সম্প্রতি নুরু গংদের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগে মামলা করেছেন। এমন কোনো অভিযোগও মানিকের বিরুদ্ধে ছিলো না।

তাহলে ধর্ষণের অভিযোগটি আসলো কোথেকে? অভিযোগ আসার দরকার ছিলো না আনু মোহাম্মদ গংদের কাছে। তারা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে অপপ্রচার শুরু করলো। এর পেছনে ইন্দন দিলো ছাত্রলীগের একাংশ। দুইপক্ষের একটি গ্রুপের চাপে বিশ^বিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি করলেন। অভিযোগ দাখিলের জন্য সবার কাছে আহ্বান জানালেন ওই কমিটি। শতাধিক অভিযোগ জমা হয়েছিল। কিন্তু সব অভিযোগের ভাষা ছিলো অনেকটা এইরকম ‘আমি শুনেছি অমুকের সাথে এটা করেছে, আমার এক বান্ধবীর সাথে এটা করেছে, আমার এক আত্মীয়কে ধর্ষণ করেছে, আমার পরিচিত এক মেয়ের সাথে জোরজবরদস্তি করেছে ইত্যাদি। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা অভিযোগকারী বা ভিকটিমের নাম ঠিকানা ছিলো না। ন্যাক্কারজনক বিষয় হচ্ছে এই অভিযোগগুলো লিখে জমা দিয়েছিলো এই বিপক্ষ আন্দোলনকারীরাই। এখানে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলেন একজন শিক্ষক। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কিছু না পেয়ে তদন্ত কমিটি সবকিছুই খারিজ করে দেয়। খারিজ করে দিলে কী হবে ততোদিনে মানিক দেশ ছেড়ে ইতালি চলে যায়। কিন্তু ন্যাক্কারজনক অভিযোগগুলো এখনো ছাত্রলীগ বহন করছে, যার সবটাই ছিলো প্রতিহিংসা বসত। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়