আমিনুল ইসলাম: তো, কী বুঝলেন ব্যাপারটা? নোয়াখালীর ওই ঘটনায় মামালা হয়েছে। কি মামলা হয়েছে, জানেন? নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ‘ধর্ষণ চেষ্টা’। আমি জানি না এসব মামলায় শাস্তির বিধান কী। জানার দরকারও নেই। যদি মৃত্যুদণ্ডও থেকে থাকে; সেটা আমার আলোচনার বিষয় নয়। ‘ধর্ষণ চেষ্টা’! এর মানে কী? এর মানে হচ্ছে ওই মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তিনি ধর্ষিত হননি। কেউ কি আমাকে বলবেন, আর কি করলে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতো? বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা আসলে কী? যৌন মিলন না করা পর্যন্ত সব ঠিক। তাই তো? এদিকে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ‘পৃথিবীর সব দেশেই ধর্ষণ হয়’। বাহ, কী চমৎকার বাণী। যে দেশে এভাবে একটা নারীকে নির্যাতন করার পরও কিনা মামলা হয় ‘ধর্ষণ চেষ্টা’। সেই দেশে তো আসলে কোনো ধর্ষণই হয় না। আপনি আসলে ঠিকই বলেছেন মন্ত্রী মশাই। সব দেশে ধর্ষণ হয়। শুধু বাংলাদেশ নামক জনপদে ধর্ষণ হয় না। সুইডেন নামক দেশটিতে আমি পড়াশোনা করেছি, চাকরি করেছি, গবেষণা করেছি। সুইডেনে ধর্ষণের সংজ্ঞা কি জানেন? শুধু যৌন মিলন নয়, জোর পূর্বক কেউ যদি কাউকে স্পর্শ করে; তাহলেও সেটা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। জ্বি মন্ত্রী মশাই, সব দেশেই ধর্ষণ হয়। শুধু বাংলাদেশে হয় না। এখানে একজন নারীকে বিবস্ত্র করে আপনাদের অতি স্নেহের ছোট ভাইরা একটু মজা করেছে। এটা কি আর ধর্ষণ নাকি! ও আচ্ছা, আরেকটা বিষয়। আপনাদের পুলিশ কী সত্যিই এই ৩২ দিনে ঘুণাক্ষরে কিছুই জানতে পারেনি? এটা কি কারো পক্ষে বিশ^াস করা সম্ভব? গোয়েন্দাদের কথা বাদই দিলাম। পুলিশের তো সোর্স থাকে প্রতিটা এলাকায়; তারাও কি জানাতে পারেননি? কাল টেলিভিশনে দেখলাম, নোয়াখালীর পুলিশের এসপি এসে বুক ফুলিয়ে বলেছেন, এখানে আমাদের কোনো দায় নেই। আমাদের কাছে সংবাদ থাকলে, আমরা তো ব্যবস্থা নিতাম।
জি¦ এসপি মশাই, আপনাদের তো কোনো দায় নেই। আপনারা হচ্ছেন পুলিশ। দায় আপনাদের হবে কেন? দায় তো আমাদের। আমরা বাংলাদেশ নামক জনপদে সাধারণ মানুষ হিসেবে জন্মেছি। সব দোষ তো আমাদেরই। আমাদের উলঙ্গ করে ধর্ষণ করার পর ৩২ দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও আপনাদের কাছে খোঁজ যায় না। এটা তো ধর্ষণই না। খোঁজের আবার দরকার কি। ও আচ্ছা, আপনাদের জানিয়ে রাখি, ভুক্তভোগী নারী বলেছেন, তিনি ঘটনা ঘটার এক সপ্তাহের মাঝেই ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারকে জানিয়েছিলেন। এই মেম্বার তাকে কি বলেছে জানেন? ঘটনাটা চেপে যাও। এরপরও আপনাদের পুলিশ এসে বুক ফুলিয়ে বলছে, আমরা তো এসবের কিছুই জানতাম না। আর ওই এলাকার এমপি মশাই কি বলেছেন, জানেন? টেলিভিশনের টকশোতে তিনি বলেছেন, আমি এসব সন্ত্রাসীদের নাম জানি, ওদের চেহারাও চিনি কিন্তু ওদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এরপর উপস্থাপক ছবি দেখিয়ে বলেছেন, এই যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে ওই সন্ত্রাসী আপনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এরপরও এই এমপি অস্বীকার করেছে। আচ্ছা ধরে নিলাম, এদের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক ছিল না। বাহ কী চমৎকার ব্যাপার-সেপার। আপনি তাদের নাম জানেন। তাদের চেহারাও চেনেন। এও জানেন তারা সন্ত্রাসী। তাহলে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল কেন? নাকি সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়াবে এটাই স্বাভাবিক? এদিকে আপনাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসে বলেছে, সব দেশেই ধর্ষণ হয়। মাননীয় মন্ত্রী মশাই কান খুলে শুনে রাখুন, হ্যাঁ, সব দেশেই ধর্ষণ হয়। সে সব দেশে ধর্ষণ করে কিছু অমানুষ। যাদের সবার বিচার হয়। আর আমাদের দেশে? রাষ্ট্র নিজেই ধর্ষণ করছে আমাদের মা, বোনদের। আর আপনি এসে বলছেন, ‘সব দেশেই ধর্ষণ হয়’। ফেসবুক থেকে