শিরোনাম
◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে?

প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর, ২০২০, ০৫:৩৮ সকাল
আপডেট : ০৫ অক্টোবর, ২০২০, ০৫:৩৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মদ বানানোর হারাম কাজে সরকারের কোন দোষ নেই, সব দোষ কেরু সাহেবের!!

আরিফুর রহমান : ১৯৩৮ সনে দর্শনায় কেরু নামে একজন ব্রিটিশ বেনিয়া একটি মদ ও চিনি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুরগি ও ডিম বিতর্কের মতো চিনি না মদ কোনটি তার প্রথম উদ্যেশ্য ছিলো তা চাপা পড়ে কেরু এন্ড কোম্পানীকে সবাই মদের কারখানা হিসাবেই জানা শুরু করলো।

আমার ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত আমিও প্রথম ভাবনায় তাইই মনে করি। কখনো ভুলেও মনে পড়েনা প্রায় ১২০০ টন চিনি এবং কয়েকপ্রকার ওষুধও তৈরি করে কেরু এন্ড কোম্পানী। ১৯৭২ সন থেকে সরকার এই কারখানাটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে স্কচ, ওল্ড রাম, জিন, বিয়ার তৈরি করে প্রতিবছর প্রায় ষাট কোটি টাকা লাভ করলেও আমি মনে মনে কোন কৃতিত্ব দেইনি।

আমার সব সময় মনে হয়েছে মদ বানানোর হারাম কাজে সরকারের কোন দোষ নেই, সব দোষ কেরু সাহেবের। 'মদ হারাম'-- যাদের মস্তিষ্কে গভীর ভাবে প্রোথিত তাদের এরকম একপেশে ধারণা থাকলে দোষের কিছু নেই। সেই হেতু কেরু এন্ড কোম্পানী নামটি আমার মনে আসলেই নিষিদ্ধ পল্লীর মতো একটি অনুভূতি জেগে উঠলে পান পছন্দ করা মানুষেরা আমাকে টিটকারী দিবেননা প্লিজ, কিছু করার নেই, ধর্মপ্রাণ মানুষ আমি। কিন্তু একটি ছোট্ট ঘটনা আমার পুরানো ভাবনা অনেকখানি ওলটপালট করে দিয়েছে।

মাত্র গত শুক্রবার টরন্টো থেকে ইস্তানবুল হয়ে ঢাকা পৌছেই জানলাম আগামী শুক্রবার বিশেষ কাজে আবার দুবাই যেতে হবে। ২০১৯ সনে কোভিড শুরু হবার পর থেকে অন্ততঃ ডজন খানেক বার বিভিন্ন দেশে কাজে যেতে হয়েছে কঠিন সময়ে অত্যন্ত দুষ্কর নিয়ম কানুন মেনে ভয়ে ভয়ে, এবারও তাই তবে অনেক নিয়ন্ত্রিত সফর ছিলো।

আন্তর্জাতিক রুটে প্লেন উড়তে শুরু করলে আমার যে কতবার নাকের সোয়াব দিতে হয়েছে তাতে নাকের ফুটোর সাইজ গেরিলা কাজিনদের মতো ফুলে গেছে মনে হয়; যদিও আয়নায় কিছু দেখিনা, কিন্তু অনুভবের মূল্যই তো সত্যি। অনুভবের জন্যেই তো আমরা কঠিনভাবে গভীর প্রেমে পড়ি, দেখার জন্যে নয়।

তা যাইহোক এবার যাত্রা ছিলো বিমানে। অন্যান্য এয়ারলাইনের তুলনায় বিমানের বিমানগুলো আনকোরা নতুন,-- একটা আস্থা কাজ করে মনের কোণে।

পাকিস্তান ও ভারতের পাইলটদের সার্টিফিকেট নিয়ে অনেক কথা উঠলেও বাংলাদেশ বিমানের পাইলটদের যোগ্যতার মান নিয়ে কেউ কোন কথা উঠাতে পারেনি সাবরিনা সার্টিফিকেটের মতো।

বিমান-বালাগন অতি ফ্রেন্ডলি --ক্যাথে প্যাসিফিকের হালকা পাতলা কোকাকোলা বোতল ফিগার সুন্দরীদের মতো না হলেও, সৌদি এয়ার লাইনের কাঠখোট্টা পুরুষালি ভাবের মেয়েদের মতো নয়।

কোভিডের সময় সব এয়ারলাইন প্যাকেটে ঠান্ডা কোল্ড কাট স্যান্ডউইচ খেতে দেয় এমনকি টরন্টো ঢাকা লং হল ফ্লাইটেও। কিন্তু বিমানে দিলো গরম ভাত, বিফ ভুনা, মুরগীর ঝোল, ভাজি, আমের আচার, কাগজী লেবু, কাঁচা লংকা, ফিজি ড্রিংক, আবার চা।

শুধু চকলেট মেশানো ফিরনির টেস্ট লেগেছে নদীয়া রেলস্টেশনের গায়িকা রানু মণ্ডলের মতো। অন্য দেশের রেসিপি কপি না করে খাঁটি দুধের বাঙালী ফিরনী অনেক ভালো হতো। বিয়ের দাওয়াতে ছোট্ট মাটির পাত্রে যেরকম ফিরনী দেয় সেরকম টেস্ট চাচ্ছি ভবিষ্যতে।

কোভিডের সময় আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি হচ্ছে ঠান্ডা প্যাকড খাবার পরিবেশন করা, বিমান নিজেরা এই সিদ্ধান্ত কিভাবে নিলো সেটি বুঝে আসছেনা। i ইউনিসেফের ডাক্তার বেনজির ভাই Be-Nazir Ahmed অথবা ডাক্তার মোশতাক Mushtuq Husain হয়তো বলতে পারবেন। ওনারা দুজনেই প্রিভেনশন বিশেষজ্ঞ।

খাবার শেষ করে দেখি হাইজিন বক্সে ক্লিপওআলা কলমের মতো একটি দৃষ্টি নন্দন সেনিটাইজার এলকোহল স্প্রে। ফিনিশিং দেখে মনে করলাম বিদেশি হবে, স্প্রে করতে যেয়ে চোখে পড়লো-- মেইড ইন বাংলাদেশ কেরু এন্ড কোম্পানী। অনেকক্ষন কলমটি প্রিয় খেলনার মতো হাতে নাড়াচাড়া করে পকেটে ঢুকালাম।

সাথে সাথে মনে ভাবনা আসলো, কেরু এমন সুন্দর একটি হ্যান্ডি স্যানিটাইজার বানিয়েছে যা শেষপর্যন্ত তাদের বানানো এলকোহল-মদ আমার হাতে ধরিয়ে আমারই পকেটে তাদের বোতল ঢুকিয়ে ছাড়লো! অথচ এতদিন কেরু নামটি আমার মনে নিষিদ্ধ বস্তু ছিলো। খুব ছোট্ট তুচ্ছ একটি বিষয়, কিন্তু এই ধরণের বিষয় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার মতো একজন কিছু পৃথিবী দেখা মানুষকে অনেক বড়ো কিছু দেখায়। আরো একটি ভাবনা বলছি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোভিড ধরা পড়লে আমেরিকান ডাক্তাররা তাঁর চিকিৎসা শুরু করে পলি ক্লোনাল এন্টিবডি দিয়ে। খবরটি জানা মাত্র মনে পড়লো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের অধ্যাপক আহমেদুল কবিরের একটি চিকিৎসার কথা। Ahmedul Kabir

মনে আছে প্রথম কোভিড শহীদ ডাক্তার মইনকে? তাকে অধ্যাপক কবীর প্রথম দিয়েছিলেন মনো ক্লোনাল এন্টিবডি। আমি তখন (কবিরের ডাক নাম) স্বপনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটা কি? এই চিকিৎসা কেউতো দেয়না।

ডাক্তার আহমেদ আমাকে বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়াতে ট্রায়াল দিচ্ছে, সিএমএইচ আর ডিএমসি এবং প্রাইভেট এ এন্ড জেড হাসপাতালও এটি শুরু করেছে। পরে আমি জেনেছি ৯০-৯৫ বছরের কয়েকজন বুড়ো মানুষ অধ্যাপক স্বপনের এই চিকিৎসায় সম্পুর্ন সুস্থ হয়েছে। ডাক্তার মইনের বেলায় কোন কারণে ওষুধটি কাজ করেনি। প্রথম দিকে সাফিসিয়েন্ট ডোজ দেয়া হয়েছিল কিনা জানিনা।

আমেরিকার আগেই বাংলাদেশে যে চিকিৎসার ট্রায়াল শুরু হয়েছে সেটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রথম চিকিৎসা হিসাবে দেয়া আমার এই কাহিনীর কেরু কলমের মতো নজরে পড়ার বিষয় মনে না হলেও বছর পনের পরে এই লেখাটি যদি কেউ পড়েন তখন বলবেন আমার ভাবনার বিষয়টি বাতুলতা ছিলোনা।

ভাবনাটি হলো, যখনই কোন রিকশায় চড়ি, তরকারী কিনি, চালক, বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করি তাঁদের ছেলে মেয়ের খবর। প্রায় সবাই জানান, তাদের ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে পড়ছে। কেউ কেউ টেকনিক্যাল কাজ শিখছে। যে জাতির সব মানুষ শিক্ষিত হতে শুরু করেছে সেই জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবেনা। পৃথিবীর যে দেশেই যাই ভারতীয়দের বিজনেসের একচ্ছত্র স্থানগুলি বাংলাদেশিরা দখল নিচ্ছে ধীরে ধীরে। আফ্রিকার দূরদেশে সোনার খনি কিনেছে প্রিন্স বাবুরWahid Chowdhury মতো বরিশালের ভোলার বাংলাদেশিরা।

আমি আমার বাংলোদেশকে নিয়ে সুন্দর স্বপ্ন দেখি। আগাছা, শৈবাল, কালো মেঘ, অপছন্দনীয় যা যা আছে তা একদিন সব মুছে যাবে।

কেরু এন্ড কোম্পানির একটি সামান্য প্লাস্টিকের স্যানিটাইজার এলকোহল কলম, আমাদের ডাক্তার সমাজের মতো ডেভোটেড কর্মীর দল, আমাদের ইনোভেটিভ শ্রমিক ভাইয়েরা, আমাদের ইঞ্জিনিয়ার দল দেশটিকে বদলে দেবে।

আমার হিসাবে আর পনেরটি বছর। একটি নতুন বাংলাদেশ দেখবে পৃথিবী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়