আনিস আলমগীর: রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, আদালত, সিভিল সোসাইটি, মানবাধিকার কমিশন সব কিছুকে স্তব্দ করে দিলে প্রতিবাদ করার মতো আর কে থাকে? মিডিয়াই হচ্ছে সেখানে নির্যাতিতদের সহায়। কিন্তু ভারতে প্রধান সারির দু’একটি ছাড়া সব কয়টি টিভি এবং পত্রিকা মেতেছে মোদির বন্দনায়, সাংবাদিকরা পরিণত হয়েছে হিন্দু মৌলবাদীদের কেনা গোলামে। করোনাভাইরাসের শুরুতে দিল্লির তাবলিগ মারকাজে থাকা করোনা আক্রান্ত মুসল্লিদের দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে যে, মুসলমানরা করোনা ছড়াচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। সবজিওয়ালা থেকে শুরু করে রাস্তায় মুসলমান কোনো ফেরিওয়ালা-দোকানদার থেকে ওরা মালক্রয়ের নিরুৎসাহিত করেছে এই বলে যে- ওরা করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে হিন্দুদের লক্ষ্য করে।
দেশ করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে বিশে^ দ্বিতীয় আর মিডিয়া আছে সুশান্ত সিং রাজপুত নামের একজন অভিনেতা আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে তার প্রেমিকা ষড়যন্ত্র করে মেরেছে সেই প্রচারণা দিয়ে। নতুন কৃষিনীতির বিরুদ্ধে কৃষকরা বন্ধ ডেকেছে, দেশের সীমান্তে আগ্রাসন ঘটছে, কৃষকের আত্মহত্যা বাড়ছে, বেকারত্বে রেকর্ড গড়ছে, অর্থনীতির পতন হতাশা বাড়াচ্ছে- ওরা আছে কঙ্গনা রানাওয়াত নামে আরেক বিজেপি চেলা অভিনেত্রীর অফিসের অবৈধ বারান্দা ভাঙা, বলিউডের নায়িকা দীপিকা গাজা খেয়েছে নাকি খায়নি সেটা নিয়ে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এসব ইস্যুর দিকে নজর দেওয়ার বদলে ভারতের মিডিয়া সুশান্ত সিংয়ের আত্মহত্যা নিয়ে অন্ধভাবে মত্ত আছে। কারণ সামনে বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। বিহারের এই অভিনেতাকে হাজির করা হচ্ছে বিজেপির নির্বচনী বৈতরণী পার হওয়ার সেন্টিমেন্ট হাতিয়ার হিসেবে।
সংখ্যালঘু মুসলমানদের নাগরিকত্বহীন করার জন্য বিজেপি সরকার যখন সিএএ/এনআরসি বিল আনে দিল্লির জামেয়া মিলিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন রাস্তায় নেমেছিল। তাদের শাহীনবাগ আন্দোলনে প্রিয় মুখ হয়ে পড়েন ৮২ বছরের বিলকিস বেগম। এই বিলকিস বেগমকে এবার টাইম ম্যাগাজিন বছরের সেনা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় ‘সিম্বল অফ রেসিস্টেন্স’ বা প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে স্থান দিয়েছে- সেটাও সহ্য হচ্ছে না মোদির গোদি মিডিয়ার। তারা এটাকে বলছে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। অথচ ওই তালিকায় মোদিকেও স্থান দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালী নেতাদের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির দাঙ্গায় ৪০ জনের বেশি মুসলিমকে নৃশংসভাবে হত্যার সময় বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা সেল এই ঘটনাকে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের সমান শক্তির মধ্যকার সঙ্ঘাত হিসেবে অভিহিত করেছে। মোদির কেনা প্রভাবশালী এসব টেলিভিশন সাংবাদিকেরা সত্যকে বিকৃত করতে সহায়তা করে বিজেপির চরম হিন্দু এজেন্ডা এগিয়ে নেয়ার কাজটি করেছে।
দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক, পরমত সহিষ্ণু এবং মোটামুটি সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাত ভারতকে গত সাত বছর ধরে হিন্দু রাষ্ট্র প্রমাণের জন্য গোদি মিডিয়া, নিয়ন্ত্রিত আদালত, হিন্দু মৌলবাদী পুলিশ-আমলা দিয়ে মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-সংগঠনকে নিষ্পেষণ-নিপীড়ন, সংখ্যালঘু মুসলমানদের নির্যাতন, দমন এবং সর্বোপরি নাগরিকত্বহীন করার পরিকল্পনা নিয়ে আগামীতে কোন জাহান্নাম বানাতে চান একমাত্র মোদি জানেন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :