শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর, ২০২০, ০৮:৩০ সকাল
আপডেট : ০২ অক্টোবর, ২০২০, ০৮:৩০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাবলু ভট্টাচার্য্য: জন্মদিনে স্মরণ, অ্যানি বেসান্ত

বাবলু ভট্টাচার্য্য: তিনি ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি। তিনি ছিলেন সমাজবিজ্ঞানী, ধর্মতাত্ত্বিক, সমাজ সংস্কারক ও ভারতের স্বাধিকার আন্দোলনের সমর্থক। তিনি অ্যানি বেসান্ত।

মাত্র ৫ বছর বয়সেই পিতৃবিয়োগ হয়। নিঃস্ব পরিবারকে বাঁচাতে অ্যানির মা একটি ছাত্রাবাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় তিনি অ্যানিকে বান্ধবী ম্যারিয়েটের তত্ত্বাবধানে রেখে আসেন। ম্যারিয়েটের তত্ত্বাবধানেই অ্যানির প্রথম শিক্ষালাভ শুরু হয়।

কুড়ি বছর বয়সে পাদ্রী ফ্রাঙ্ক বেসান্তকে বিবাহ করেন অ্যানি। দুই সন্তানের জন্ম দেন তারা। পরবর্তী সময়ে ক্রিশ্চান ধর্মের সমালোচনা করায় তাকে ছেড়ে যান স্বামী। গির্জাবিরোধী স্ত্রীকে কলঙ্কিনী প্রতিপন্ন করে দুই সন্তানকে নিয়ে নেন পাদ্রী ফ্রাঙ্ক বেসান্ত। সাময়িক ভাবে ভেঙে পড়েন অ্যানি ও পরে তিনি লন্ডন ত্যাগ করেন। তবে, আমৃত্যু বেসান্ত পদবিকেই সাথে নিয়ে চলেছেন।

ভারতে আসার আগে ব্রিটেনে মহিলাদের অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ন্যাশনাল সেকুলার সোসাইটিতে তিনি বিশেষ বক্তা হিসেবে পরিচিত হন।বিশ্বদরবারে নারী সমানাধিকার আন্দোলনের প্রবক্তা হিসাবেও তিনি পরিচিতি লাভ করেন। সেখানেই তার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন চার্লস বার্ডলগ। এরপরই তিনি ব্রিটেনের সামাজিক পরিবর্তন ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ন্যাশনাল রিফর্মার নামের একটি সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠা করেন।

বৌদ্ধধর্ম ও ব্রাহ্মণ্যধর্মের টানে প্রথম ১৮৯৩ সালে ভারতে আসেন বেসান্ত। মাদ্রাজে থিওসফিজম সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন ।

বেসান্ত বেনারসে কেন্দ্রীয় হিন্দু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, বহু আধ্যাত্মিক পণ্ডিতদের সম্মিলিত এই বিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল আগামী ভারতের যুব নেতা গড়ে তোলা। প্রত্যহ সেখানে প্রার্থনা ও ধর্মীয় আলোচনা বাধ্যতামূলক ছিল। এছাড়াও সেখানে আধুনিক সাহিত্য ও বিজ্ঞানের পাঠও দেওয়া হত। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে তিন বছর সময় লাগে। প্রয়োজনীয় অর্থের অধিকাংশই এসেছিল রাজপরিবারগুলি থেকে।

বেসান্ত সান্নিধ্য লাভ করলেন পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যের। বেসান্ত-মালব্যের উদ্যোগেই গোড়াপত্তন বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির। থিওসফিক্যাল কার্যকলাপের পাশাপাশি বেসান্ত ভারতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, ব্রিটিশ সরকার জার্মানির বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। অ্যানি বেসান্ত আইরিশ বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে আয়ারল্যান্ডের জাতীয় শ্লোগান উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। নিউজ ইন্ডিয়া সংবাদপত্রের সম্পাদক হিসেবে তিনি সংবাদপত্রে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন। ওই সংবাদপত্রের ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে বেসান্তের বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছিল।

লোকমান্য তিলকের সঙ্গে একত্রিত ভাবে বেসান্ত অল ইন্ডিয়া হোমরুল লিগ প্রতিষ্ঠা করেন। অল ইন্ডিয়া হোমরুল লিগ ছিল ভারতের প্রথম রাজনৈতিক দল যাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো। প্রায় সারা বছর ধরেই এই লীগের কর্মসূচি কার্যকর করার প্রচেষ্টা চালানো হত। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ কয়েকটি শাখা তৈরি হয়, যাদের প্রধান ভূমিকা ছিল বিক্ষোভ-আন্দোলনের কর্মসূচি, জনসংযোগ স্থাপন করা ।

১৯১৭ সালে জুন মাসে সরকার বিরোধী কার্যকলাপের জন্য বেসান্তকে গ্রেফতার করা হয়। বেসান্তকে বন্দি করার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ একত্রিত ভাবে দাবি জানাতে থাকে।

সরকার বেসান্তের গ্রেফতারির বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারে না, জনসাধারণের চাপের মুখে তারা নতি স্বীকার করে ও ভারতে পৃথক সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করে। ব্রিটিশ সরকার বেসান্তকে মুক্ত করলে বিশাল জনজোয়ার তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানায়। সেই বছরেই বেসান্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি পদে নিযুক্ত হন। প্রতিনিধিত্ব করেন জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা সেশনে।

১৯৩১ সাল থেকে ভারতেই বেসান্তের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। ১৯৩৩ সালে ২০ সেপ্টেম্বর মাদ্রাজে ৮৫ বছর বয়সে তার জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যুর পর তার দেহ হিন্দু আচার অনুযায়ী দাহ করা হয়।

বেসান্তের মৃত্যুর পর তার সহকর্মীরা ক্যালিফোর্নিয়ায় হ্যাপি ভ্যালি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে বেসান্তের সম্মানে যার নাম রাখা হয় বেসান্ত হিল স্কুল অফ হ্যাপি ভ্যালি।

অ্যানি বেসান্ত ১৮৪৭ সালের ১ অক্টোবর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়