কাকন রেজা: ‘গালিব সারাটা জীবন একই ভুল করে গেলো/ধুলো ছিলো মুখে বারবার আয়না মোছা হলো।’ গালিব থেকে অনুবাদ করলাম। গালিবের এ লাইন দুটি বড় সমসাময়িক। আমরা বোধহয় সারা জীবন ভুল করেই যাচ্ছি। নিজের মুখ না মুছে ধুলো সরাতে বারবার আয়না পরিষ্কার করছি। এই যে ড্রাইভার আব্দুল মালেককে নিয়ে এতো কথা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন গাড়ি চালক শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক কীভাবে হলেন, এমন প্রশ্ন উঠছে। এসব কথা আর প্রশ্নের আগে কি মনে হচ্ছে না, আমরা মূলত আয়না মুছছি, ধুলোটা অন্যখানে।
একটা ব্যবস্থা কতেটা ব্যর্থ হলে একজন সামান্য গাড়ি চালক সেই ব্যবস্থাকে এমন ভাবে ব্যবহার করতে পারে। এমন উদাহরণ আমাদের জন্য প্রায় নিত্যদিনের। জেলা পর্যায়ের সামান্য ছাত্র নেতা দুই হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করে দেয়। একটা ব্যবস্থা কতোটা হীন হলে এটা সম্ভব। কতোটা লিকেজ থাকলে একটা ব্যবস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ ও অন্যায় ভাবে দেশের বাইরে চলে যায়। সবচেয়ে বড় কথা তারপরও সেই ব্যবস্থার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়! ঘুমের জন্য অন্ধকার ভালো। চোখে আলো পড়লে ঘুমটা হয় না। কিন্তু ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় সেই অন্ধকারের সূত্র যদি কাজের সময়ও খাটানো যায়, তাহলে অন্ধকারে কাজ করা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। অন্ধের পৃথিবী পুরোটাই অন্ধকার। তাই সময়ের চিন্তা সময়েই করা উচিত। অন্ধের চিন্তায় পৃথিবী দর্শন অবশ্যই বিপজ্জনক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে কী হচ্ছে আমাদের সকলের জানা। বালিশ, পর্দাসহ নানা কাণ্ডে আলোচিত এই মন্ত্রণালয়। দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগের চূড়ায় রাষ্ট্র ব্যবস্থার এই অংশটি। এতো সবের পরও তিরস্কারের জায়গায় যদি পুরস্কার জোটে তাহলে আব্দুল মালেকরা তো শতকোটি টাকার মালিক হবেই। সাথে অন্যরাও উৎসাহিত হবে। কোভিড মহামারি আমাদের পরিষ্কার দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসহ পুরো ব্যবস্থার বিভিন্ন দুর্বলতাগুলো। আমাদের অব্যবস্থাপনাগুলো। সেসব কথা দিয়ে বা প্রশংসা দিয়ে ঢেকে দেওয়া সম্ভব নয়। অথচ আমরা আমাদের ব্যবস্থার হীনতা কথা দিয়ে ঢাকতেই বেশি উৎসাহী। কাজের চেয়ে কথা বেশি হলে তার পরিণতি অবশ্যই সুখকর নয়। ইতিহাস যার সাক্ষ্য দেয়। গালিব তার কথায় সে ভুলটাই ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন। সত্যিই তো মুখে ধুলো রেখে আয়না পরিষ্কার করা কোনো কাজের কথা নয়। নষ্ট ব্যবস্থায় টুটাফাটা মেরামতও তেমনি।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :